স্ত্রীকে হ’ত্যা করে দা নিয়ে থানায় হাজির স্বামী

প্রকাশিত: ৮:৫৭ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৪

স্ত্রীকে হ’ত্যা করে দা নিয়ে থানায় হাজির স্বামী

নিউজ ডেস্ক : পরকীয়া সন্দেহে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বাঘমারা গ্রামে সৌদি ফেরত স্ত্রী শিল্পী বেগমকে (২৩) গলা কেটে হত্যা করেছে স্বামী সফর আলী। রোববার (৫মে) দুপুরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

 

হত্যার পর রক্তাক্ত দা নিয়ে থানায় হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন ওই স্বামী। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

নিহত শিল্পী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পরকীয়ার লিপ্ত থাকার সন্দেহে এক সন্তানের জননী শিল্পীকে হত্যার করেন স্বামী সফর। এর আগে শনিবার সৌদিআরব থেকে দেশে ফিরে রোববার সকালে বাঘমারার স্বামীর বাড়িতে বাড়ি উঠেন শিল্পী বেগম। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। উৎসুক মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে।

 

স্থানীয়রা জানায়, কমলগঞ্জ উপজেলার বাঘমারা গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে সফর আলী পেশায় রং মিস্ত্রি। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রেম করে বিয়ে করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া রোডের মুক্তার মিয়ার মেয়ে শিল্পী বেগমকে। তাদের সংসারে সোহাগ নামের ৫ বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। গত ৫ মাস ধরে স্ত্রী শিল্পীর সাথে নানান বিষয়ে বনিবনা হচ্ছিলো না স্বামী সফর আলীর। এমতাবস্থায় গত রোজার ৪ দিন আগে হেলাল নামের শ্রীমঙ্গলের এক দালাল মারফত এজেন্সির মাধ্যমে স্বামীর অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব যায় শিল্পী। দালাল হেলাল সম্পর্কে শিল্পীর চাচা হন।

 

বিষয়টি জানার পর স্ত্রীকে দেশে ফিরে আনতে ওই দালালকে চাপও দিচ্ছিলেন সফর আলী। স্বামীর চাপে দালাল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিটের টাকা পরিশোধ করে শিল্পী আক্তারকে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। শনিবার দেশে এসে রোববার সকালে স্বামীর বাড়িতে উঠেন শিল্পী। স্বামীর বাড়িতে উঠার পর স্বামী সফর আলী জানতে পারেন তাঁর স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয় শুনার পর এ নিয়ে পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোলেমান হোসেনের কাছে সফর আলী অভিযোগ যান। সেখানে সোলেমমান বলেন, সফর আলীর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন পরে বসে বিষয়টি দেখে দিবেন। কিন্তু স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের কাছে যাননি সফর আলী।

 

এমন কথা জানিয়ে সফর আলীর মা সরুফা বেগম বলেন,পথে অন্য এক সালিশ বিচারকের কাছে গেলে ওই সালিশ বিচারক সফর আলীকে বলেন, বৌ কথা না শুনলে জবাই করি দে। তারপর বাড়ি এসেই পুত্রবধূকে মারধর করে ছেলে। তবে ওই সালিশ বিচারকের নাম বলেননি সফরের মা সরুফা বেগম। মারধরের এক পর্যায়ে দা দিয়ে শিল্পীকে গলা কেটে হত্যা করে সফর আলী। পরে রক্তাক্ত দা নিয়ে কমলগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে সে।

 

থানায় পুলিশকে স্ত্রী হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা জানিয়ে বলেন, দালাল হেলালের সাথে অবৈধ সম্পর্কে তার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছে। তাই তাকে মেরে ফেলেছে। পরে কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম ও ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।

 

খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

 

নিহত শিল্পীর ছোট বোন স্বপ্না বেগম বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আপা ফোনে নির্যাতনের কথা জানায়। এরপরই খবর মিলে তাকে খুন করা হয়েছে।

 

এব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, আসামি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে পাঠানো হয়েছে। গৃহবধূ শিল্পীকে গলাকেটে হত্যা করা হলেও তার শরীরে আঘাত রয়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাতক সফর আলীর বাবা কদ্দুস মিয়া ও মা সরুফা বেগমকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।