পাথর কোয়ারি খোলা নিয়ে ধুম্রজাল!

প্রকাশিত: ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫

পাথর কোয়ারি খোলা নিয়ে ধুম্রজাল!

নিউজ ডেস্ক : প্রায় ৫ বছর পর সিলেটের গেজেটেড পাথর কোয়ারি থেকে বালু-পাথর তোলার অনুমতি নিয়ে সিলেটে শুরু হয়েছে তোলপাড়। কিন্তু এ সংক্রান্ত আদেশ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই আদেশের কপি পাওয়া যায়নি। এছাড়া মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোন কপি পান নি সিলেটের জেলা প্রশাসক। আবার এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাথর কোয়ারি বন্ধে রিট দাখিলকারী ও মামলার বাদী বেলা কর্তৃপক্ষ।

 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মুহাম্মদ মাহবুব মুরাদ দৈনিক জালালাবাদকে জানান, এই সংক্রান্ত আদেশের কপি আমার কাছে এখনো আসেনি। তাই এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতেও রাজী হননি।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা সিলেটের সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ শাহেদা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এই সংক্রান্ত কোন আদেশের সত্যতা আমি পাইনি। কারণ এই আদেশে আমি একটি পক্ষ। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারীর আদেশ বাতিল হলেও পাথর উত্তোলনে একই বছরের ৮ জুনের একটি আদেশ রয়েছে। এছাড়া পাথর উত্তোলন বন্ধে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট একাধিক আদেশ রয়েছে। কোন একটি আদেশ বাতিল হলে আমরা এটি পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের চাপে টানা কয়েক বছর ধরে কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করেছিল আওয়ামী সরকার। এরপর থেকে ভারত থেকে তোলা পাথর আমদানী করছিল বাংলাদেশে। পাথর তুলতে ভারতের পরিবেশ নষ্ট হয় না, কেবল যেন নষ্ট হয় বাংলাদেশের। এমন অভিযোগে বাংলাদেশের পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছিলো বলে জানান এই খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। পাথর কোয়ারী বন্ধের সিদ্ধান্তে সিলেটের স্থানীয় অর্থনীতিতে পড়ে বিশাল ধাক্কা। সোমবার (১৩ জানুয়ারী) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২০ সালের আদেশ বাতিল করে বিভাগীয় কমিশনার ও সকল জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব সাবরিনা আফরিন মুস্তাফা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সারাদেশে গেজেটভুক্ত কোয়ারিগুলোর ইজারা কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়ে এ বিভাগের গত ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯ নম্বর স্মারকে “সারাদেশে গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি, সিলিকাবালু কোয়ারি, নুরীপাথর, সাদা মাটি উত্তোলনসহ অন্যান্য সকল কোয়ারির ইজারা আপাতত: বন্ধ থাকবে” মর্মে গৃহীত সিদ্ধান্তটি এতদ্বারা নির্দেশক্রমে বাতিল করা হলো।

 

এ সংক্রান্ত আদেশের একটা কপি দৈনিক জালালাবাদের হাতেও এসেছে। এ খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই এর সত্যতা নিশ্চিত করলেও সরকারী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ এর সত্যতা নিশ্চিত না করায় আদেশ নিয়ে শুরু হয়েছে ধুম্রজাল। ফলে অনেকেই জানতে চাচ্ছেন সত্যি কি খুলতে যাচ্ছে পাথর রাজ্যের চাবি, নাকি আরো বাড়বে অপেক্ষা। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি আদেশ বাতিল হলেও সহসাই খোলা যাচ্ছেনা কোয়ারিগুলো। কোয়ারির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন রীট ও মামলার বাদী বেলা সিলেটের কর্তৃপক্ষ জানান, একটি আদেশ বাতিল করেই পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ এর বিরুদ্ধে একাধিক রায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে অবশ্যই এসব মেনে আদেশ দিতে হবে।

 

জানা গেছে, হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়, সেই সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান জড়িত সিলেটের সবক’টি পাথর কোয়ারীতে। পাথর কোয়ারীগুলো ছিল সিলেটের স্থানীয় অর্থনীতির মজুবত ভিত্তি। পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ তুলে সেই কোয়ারী গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সাথে বন্ধের প্রক্রিয়াকে আইনী প্রলেপ দিতে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) মামলা করে বসে। মামলার কারণে দীর্ঘ ৫/৬ বছর ধরে কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। বেলা’র মামলার রায় ঘোষণার পর স্থানীয় প্রশাসন পাথর উত্তোলন বন্ধে একাট্টা হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেই পাথর কোয়ারীগুলো থেকে সনাতনী পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের জন্য আদালতের একাধিকবার নির্দেশনা আসলেও তা বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নিতে আগ্রহ দেখায়নি সংশ্লিষ্টরা। এদিকে পাথর কোয়ারী খুলে দেয়ার দাবীতে হরতাল, পরিবহন ধর্মঘট, মিছিল সমাবেশ, মানববন্ধনসহ কর্মসূচীর পর কর্মসূচী পালন করেছেন ভুক্তভোগীরা, কিন্তু কিছুতেই সংশ্লিষ্টদের টনক নড়েনি।

 

অথচ সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারী খুলে দেয়ার দাবীতে গত ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে সিলেটে ৪৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কার্ভাডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এমনকি তৎকালীন আ্ওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি-ইমরান আহমদও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পাথর কোয়ারী খুলে দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন, কিন্তু তাতে কোন পদক্ষেপ নেন নি তৎকালিন সময়ের বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। এদিকে কোয়ারি বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে যায় স্থানীয় মানুষের জীবিকার খাত। এতে বেকার হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক। মানবেতর জীবনযাপন করছেন কোয়ারির সাথে জড়িত পাথর ও পরিবহন ব্যবসায়ী, বেলচা, বারকি, পরিবহন ও লোড-আনলোড শ্রমিকরা।

 

এদিকে ২০২২ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবসের এক গোলটেবিল বৈঠকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে এখন কোন পাথর উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে এখানকার পরিবেশ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া অনেক শ্রমিকের প্রাণহানি হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার বলেছিলেন, বিভিন্ন পক্ষ থেকে পাথর উত্তোলনের দাবি আছে। এ নিয়ে পরিবেশ কর্মীদের চাপও আছে। তবে আমি পাথর উত্তোলন শুরু না করার পক্ষে।

 

২০২২ সালের ৩১ মে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর চার মাস পর ডিও লেটার দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। কিন্তু সিদ্ধান্তের পর প্রায় ২ বছরে বেশি সময় পার হলেও খুলে দেয়ার ব্যাপারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, বিছনাকান্দি, লোভাছড়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, শ্রীপুরসহ প্রায় ১০-১২টি পাথর খনি রয়েছে। যেখান থেকে দেশের চাহিদা মেটাতে ১ কোটি টন পাথর উত্তোলন করা সম্ভব। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে সিলেট অঞ্চলের সবকটি কোয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে পাথর উত্তোলন। এর ফলে কোয়ারি নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে।

 

সূত্র মতে, সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং এবং লোভাছড়া পাথর কোয়ারীগুলো থেকে স্বাধীনতা উত্তর কাল থেকে সারাদেশে পাথর সরবরাহ করা হয়ে আসছিল। প্রায় ১৫ লাখ ব্যবসায়ী-শ্রমিক ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক এ পাথর ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে কোয়ারী বন্ধ থাকার কারণে সিলেটের পরিবহন খাত বিশেষ করে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অধিকাংশ ট্রাক মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে অথবা কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে তাদের গাড়ী কিনেছেন। গত ৫ বছর ধরে কোয়ারী বন্ধ থাকার কারণে ট্রাক মালিকদের পণ্য পরিবহনে ভাটা পড়ে। অনেক মালিক ঋণের কিস্তি দিতে না পেরে ইতোমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেই ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে চরম আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়েছেন। প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করছেন। পাথর পরিবহন বন্ধ থাকায় শত শত ট্রাক মালিক, স্টোন ক্রাশার মালিক ও ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন যাপন করছেন।

 

যদিও সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট একাধিক বার নির্দেশনা দেন। অথচ, পাথর কোয়ারী বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে রিজার্ভের ডলার খরচ করে পাথর আমদানী করে উন্নয়ন কাজ চালানো হয়। ফলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ সংকটে নিপতিত হয়। লাখো মানুষের জীবন রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের ডলার সাশ্রয়ের জন্য সিলেটের পাথর কোয়ারী জরুরী ভিত্তিতে খুলে দেয়ার দাবী তোলা হয়। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, ছাতক, তাহিরপুর, কানাইঘাটে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ক্রাশার মিল বন্ধ। পাথর উত্তোলন বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে সেই মিলগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। যেসব ব্যবসায়ী আগে থেকেই আমদানি-রফতানির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের অনেকে জড়িয়ে পড়েন পাথর আমদানিতে। তামাবিল স্থলবন্দরসহ সিলেটের সব শুল্ক স্টেশন দিয়ে শুরু হয় ভারত থেকে পাথর আমদানি। আমদানি করা বোল্ডার (বড়) পাথর ভেঙে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করছিলেন মিল মালিকরা। একই সঙ্গে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ঐক্য পরিষদের ব্যানারে নানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা সিলেটের সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ শাহেদা দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, পরিবেশ, প্রতিবেশ, জনস্বাস্থ্যসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিধ্বংসের দিক বিবেচনা করে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। যারা পাথর কোয়ারি খুলে দিতে আন্দোলন করছেন তাদেরকে আমরা ব্যবসায়ী মানতে নারাজ। কারণ তারা নিজ স্বার্থকে আগে প্রাধান্য দিয়ে নিরীহ শ্রমিকদের জীবনকে হুমকীর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। অতীতে পাথরের দিকে একটা স্বার্থান্বেষী মহলের চোখ ছিল, এবারও চোখ পড়েছে। ক্ষমতার পালাবদলের সাথে বদলেছে পাথরের দিকে দৃষ্টি দেয়া মূখগুলো। তারা নিজ স্বার্থে সিলেটের কোয়ারিগুলো খুলতে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন।

 

তিনি বলেন, ভারত পাথর তুলছে তাই আমাদেরকে তুলতে হবে কেন। আমাদের দেশে ইটভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পুড়ানো হয়, কিন্তু ভারতে ইট পুড়ায়না। বরং পুড়িয়ে দেয়া ইট বাংলাদেশ থেকে কিনে। কারণ তারা বায়ু দুষণের দিকটা বিবেচনায় রেখে বিকল্প পদ্ধতিতে ইট তৈরী করে। সুতরাং পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য সংরক্ষণে কোয়ারি বন্ধ রাখা উচিত। এরপরও যদি সরকার কোয়ারি খুলে দেয়, আমরা আইন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছি।

 

সূত্র: জালালাবাদ

২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার বাংলা ইংরেজি আরবি

২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার বাংলা ইংরেজি আরবি

গুণ গত মান যার ভাল তার দাম একটু বেশি সিলেটের সেরা বাগানের উন্নত চা প্রতি কেজি চা দাম ৪৫০ টাকা হোম ডেলি বারি দেয়া হয়

tree

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন