প্রকাশিত: ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক : আজ ২০২৪ সালের শেষ দিন। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর নতুন শিক্ষাবর্ষ। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত নতুন বছরের স্কুলের ছুটির তালিকায় দেখা যাচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) ছাড়া পুরো বছরে ছুটি থাকছে মোট ৭৬ দিন। এছাড়া শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি মিলে হয় মোট ৮২ দিন। সব মিলিয়ে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ১৫৮ দিন ছুটি থাকছে। সেই হিসাবে ১২ মাসের মধ্যে পাঁচ মাসই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে।
বিশেষ দিবসে স্কুল বন্ধ রাখাও উচিত নয়, শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম।
এবার বছরের শুরুতেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বই হাতে পাচ্ছে না। এখনো অধিকাংশ বইয়ের মুদ্রণ বাকি। এবার স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটি বিনামূল্যের বই মুদ্রণের কথা রয়েছে। শুরুতেই প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ৫ কোটিসহ মোট ৬ কোটি বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য শ্রেণির আরও চার কোটি বই মুদ্রণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে ১০ কোটি বই মুদ্রণের কাজ শেষ হলেও আরও ৩০ কোটি বই এখনো বাকি রয়েছে। বছরের শুরুতে কিছু বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো সম্ভব হলেও সব বইয়ের মুদ্রণ শেষ হতে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে। যথাসময়ে বই হাতে না পাওয়ার কারণেও দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ থাকবে পাঠ কার্যক্রম। এ অবস্থায় নতুন বছরে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল হক দুলু যুগান্তরকে বলেন, দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করতে হবে। এছাড়া আন্দোলনসহ ও নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকে। এর সঙ্গে আছে ৭৬ দিনের বার্ষিক ছুটি। এভাবে বেশির ভাগ দিন স্কুল বন্ধ থাকলে শিক্ষাক্রম ও সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই শিফট চালু থাকায়, সেখানে পর্যাপ্ত ক্লাস হয় না। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। পাশাপাশি পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে আনা উচিত। বিগত সময়ে শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটি এখন কাটিয়ে ওঠার সময় এসেছে। অথচ দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। এছাড়া ক্লাস ঠিকমতো পাঠদান না হলে, শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য জমজমাট হয়ে ওঠে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সাপ্তাহিক ও অন্য ছুটির তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এতে আগামী বছর স্কুলে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) ছাড়া মোট ৭৬ দিন ছুটি থাকবে।
প্রকাশিত তালিকায় থাকা দীর্ঘ ছুটির মধ্যে রয়েছে রমজান মাসের ছুটি (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) শুরু হবে ২ মার্চ থেকে। ঈদুল ফিতর, জুমাতুল বিদা, স্বাধীনতা দিবসসহ কয়েকটি ছুটি মিলিয়ে টানা ২৮ দিন বন্ধ থাকবে স্কুল। ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশেও টানা ১৫ দিন সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ছুটি থাকবে। এ ছুটি ১ জুন থেকে চলবে ১৯ জুন পর্যন্ত। দুর্গাপূজায় এবার আট দিন (২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর) ছুটি থাকবে। অবশ্য এ ছুটির মধ্যে লক্ষ্মীপূজা, ফাতেহা ইয়াজ দহমসহ বেশ কয়েকটি ছুটি পড়বে। প্রতি বছরের মতো এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে সংরক্ষিত তিন দিন ছুটি রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান যখন প্রয়োজনে এ ছুটিগুলো দিতে পারবেন। এর বাইরে বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক দিবস ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নিয়ম মেনে ছুটি থাকবে। এতে সব মিলিয়ে ৭৬ দিন ছুটি থাকছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু শেখার আছে। বছরে প্রায় অর্ধেক সময় যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। আর বিশেষ দিবসে স্কুল বন্ধ রাখাও উচিত নয়। এছাড়া এখনকার শিক্ষার্থীরা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের প্রতি বেশি আশক্ত হয়ে পড়েছে। তাই শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা উচিত। বছরের শুরুতেই বই না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা ও শরীরচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে উপদেষ্টা বা অন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা অনকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য অনেক সময় স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। এর সঙ্গে সাপ্তাহিক ও বার্ষিক ছুটি থাকছে দীর্ঘদিন। এতে শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে এনসিটিবির সদস্যদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীদের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। বছরের শুরুতেই তারা বই পাবে না। তাছাড়া সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একধরনের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। তারা ট্রমার মধ্যে সময় পার করছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া সময় হলেও, সেই পরিবেশ তৈরি হয়নি।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest