সীমান্ত সড়ক নির্মাণে লাভবান তিন জেলার মানুষ

প্রকাশিত: ৭:১১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০২৪

সীমান্ত সড়ক নির্মাণে লাভবান তিন জেলার মানুষ

রাঙামাটি সংবাদদাতা : পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র সীমান্ত সড়ক। এ সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহেই সেনাবাহিনী ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এ সীমান্ত সড়ক বাস্তবায়ন করছে। সীমান্ত সড়ক পথের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলতি বছরের জুন মাসেই শেষ করা হবে। দ্বিতীয় তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে আগামী জুন মাসের পরে। বাংলাদেশ সরকার,সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সীমান্ত সড়ক নিয়ে কাজ করছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে বান্দরবান হতে

 

রাঙামাটি হয়ে খাড়গাছড়ি চলে যাবে সীমান্ত সড়কটি। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে এ সীমান্ত সড়কটি দিয়ে। সীমান্ত সড়কটি হয়ে গেলে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ব কমবে, দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আগম ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সফলতা আসবে এবং অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন এই এলাকার মানুষ।

 

 

এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, সচিব, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে ২০১৯ সাল থেকে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের প্রথম ধাপ সূচনা করা হয়। সড়ক নির্মাণেরস দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের ১৬, ২০ ও ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সীমান্ত সড়কের আর্থিক ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮শ’ ৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে একনেকে অনুমোদিত প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিলোমিটার প্রকল্পের মধ্যে ২২০কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

 

মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস, ইএনসি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বলেন, ৪৭ কিলোমিটার চলমান রয়েছে যা চলতি বছরের জুন মাসে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। অবশিষ্ট ৪০কিলোমিটার আগামী অর্থ বছরে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শুরু থেকে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের সদস্য অনেক প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে সীমান্ত সড়কের কাজ নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পটির বর্তমানে ভৌত অগ্রগতি শতকরা ৮২শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি শতকরা ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ সড়কটি নির্মাণ হলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে স্থলপথে যোগাযোগের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে তেমনি রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তে নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।

 

সীমান্ত সড়ক প্রকল্প কর্ণেল ভূইয়া মোঃ গোলাম কিবরিয়া বলেন,আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো সীমান্ত এলাকার কৃষিপণ্য দেশের মূল ভূ-খন্ডের পরিবহনের মাধ্যমে অত্র এলাকার সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা। সীমান্ত এলাকার জনসাধারণের জন্য কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা। পার্বত্য এলাকার কৃষিজাত পণ্য,ফসল ও উন্নতজাত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা। পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন শিল্প কলকারখা স্থাপনের জন্য সহায়তা প্রদান করণ। পার্বত্য জেলার দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার সৃষ্টি করা।

 

সড়ক সীমান্তবাসী ও স্থানীয় গোলাক তঞ্চঙ্গা,সুগত তঞ্চঙ্গা,ওমর শান্তি তঞ্চঙ্গা ও জীবন জয় তঞ্চঙ্গা বলেন,এ সড়কটি হওয়াতে এখন আর আমাদের হাটতে হয় না। আমরা সীমান্তবাসী অনেক খুশি ও আনন্দ পাচ্ছি। সীমান্তহ হওয়ার আগে আমরা পায়ে হেঁটে বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলা বাজারে গিয়ে এক দুই দিন সময় লেগে হাটবাজার করতে হতো। এখন আমরা মোটরসাইকেল বা মাহিন্দ্র দিয়ে যাতায়াত করতে পারছি। আমাদের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই জন্য বাংলাদেশ সরকার, সড়ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।

 

সড়ককের অসম্পূর্ণ কাজ গুলো দ্রুত হয়ে গেছে আরো উন্নত হবে এই এলাকা।অনেকে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে বলে জানান।

 

এদিকে, এ সড়কটি হওয়াতে স্থানীয়রা আশার আলো দেখছেন। তারা বলছেন এ সীমান্ত সড়কটি নির্মাণের কারণে তারা পাহাড়ের উৎপাদিত পণ্য সহজেই বাজারজাতকরণসহ সহজেই যাতায়াত করতে পারছেন। সরকারে উন্নয়ন কাজকে বাঁধাগ্রস্থ করতে পাহাড়ের বেশ কয়টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সরকারের বিরোধে অবস্থান নিয়েছে।গত ১৯ মার্চ ২০২৪ সকালে রাঙামাটি শহরের মধ্যে সরকারের চলমান সীমান্ত সড়ক নিয়ে একটি মানববন্ধন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সন্তু লারমা গ্রুপের লোকজন।

 

সীমান্ত সড়কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্গম এলাকায় বসবাসরত পাহাড়িরা এত সুন্দর সড়ক দেখে মুগন্ধ হয়েছে। সীমান্ত সড়ক হওয়াতে তারা অত্যন্ত খুশি। স্থানীয় পাহাড়ি জনগণ বলছে, আগে তারা পায়ে হেঁটে রাজস্থলী, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি বাজারে যেত তাতে যাওয়া আসা একদিন সময় লাগতো আর এখন তারা ১ঘন্টার মধ্যেই বাজার করে চলে আসছে। সাধারণ মানুষ বলছে সীমান্ত সড়ক বর্তমান সরকারের মাইল ফলক। এ সড়ক নির্মাণ হলে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হবে। অপর দিকে চোরাচালান রোধ বন্ধ হবে একই সাথে

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের অবৈধ চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, খুন ও অপহরণ বন্ধ হবে।