প্রকাশিত: ৮:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
বিনোদন ডেস্ক : ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ খ্যাত গানের শিল্পী বারী সিদ্দিকীকে হারানোর সাত বছর আজ। ২০১৭ সালের আজকের দিনে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন না-ফেরার দেশে। ক্যারিয়ারের শুরুতে বংশীবাদক হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরে গেয়েই শ্রোতার মন জয় করেছিলেন। হিজলে তমালে ছাওয়া আদিঅন্তহীন হাওরের বুক থেকে গান নিয়ে বারী সিদ্দিকী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা বাংলায়। জল ছলছল লিলুয়া বাতাসে ভেসে সেই অপরূপ গানে স্পর্শ করেছিলেন সমগ্র বাংলাভাষী মানুষদের মন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের আজকের এই দিনে চলে গেছেন অধরা জগতের দূর নীলিমায়। সাত বছর হয়ে গেল বারী সিদ্দিকী নেই।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা সদরের কাইলাটি ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। পরে জেলা সদরের কারলিতে ‘বাউল বাড়ি’ করেন তিনি।
বাবা মহরম আলী ও মা প্রয়াত জহুর-উন-নিসা। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে বারী সবার ছোট। বয়স যখন তিন-চার, সেই বয়সেই মায়ের কাছে তার প্রথম শোনা গান ছিল ‘শ্বাশুড়িরেও কইয়ো গিয়া’। সেই গানের সুরই বারীর মনে গেঁথে যায়। যদিও পরিবারে সেভাবে সংগীত চর্চা ছিল না। সৌখিন হিসেবে বলা যায়। বারীর বয়স যখন পাঁচ তখন বড় ভাইয়ের বাঁশিতে ফু দিয়ে অন্যরকম আগ্রহের সৃষ্টি হয় বাঁশি শেখার প্রতি।
বারী তার বাঁশি ও গান শেখার উৎসাহ পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। ছোটবেলায় বাঁশি বাজাতেন মূলত বড় ভাইদের নকল করে। সেসময় নেত্রকোনায় বাঁশি শেখার সুযোগ ছিল না। তবে সাত-আট বছর বয়সে মা জহুর-উন-নিসার কাছে গান শেখা শুরু করেন।
মায়ের কাছ থেকে জীবনে তিনি প্রথম যে গানটির সুর বাঁশিতে তুলে নিয়েছিলেন সেই সুরটিই তিনি পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদর ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন। সেটি ছিল শ্যাম বিচ্ছেদের একটি সুর, ‘আস্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশি/মধ্যে মধ্যে ছ্যাদা/ নাম ধরিয়া ডাকে বাঁশি/ কলংকিনী রাধা/’।
বারী সিদ্দিকী যখন হাইস্কুলে পড়তেন, তখন থেকেই তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত শেখা শুরু করেন। ওস্তাদ ছিলেন শ্রী গোপাল দত্ত। বড় দুই ভাই এবং রফিক মাহমুদ, বিপুল চৌধুরী, দুলাল দত্তনবীশ, হযরত আলীর কাছ থেকেও গানে সহযোগিতা পেয়েছেন। তখনই স্বপ্ন দেখেন গান গাইবেন, শিল্পী হবেন।
১৯৮০ সালের দিকে ঢাকায় শুদ্ধ সংগীত প্রসারের একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় ওস্তাদ আমিনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি পাইলট ছিলেন। ভারতবর্ষের বিখ্যাত বংশীবাদক ওস্তাদ পান্না লাল ঘোষের শিষ্য ছিলেন। আমিনুর রহমানের বাড়িতে থেকেই বাঁশিতে তালিম নিতে থাকেন দিনের পর দিন। সেখানে থেকেই ওস্তাদ তাগাল ব্রাদার্স, পণ্ডিত দেবেন্দ্র মুৎসুদ্দী, ওস্তাদ আয়েফ আলী খান মিনকারীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।
পণ্ডিত বিজি কারনাডের কাছেও বাঁশি শিখতে তিনি পুনেতে গিয়েছিলেন। এভাবে একসময় বারী শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বাংলাদেশ রেডিও-টেলিভিশনসহ সম্মিলিত একটি যন্ত্রসংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এর পরপরই তিনি দক্ষিণ এশীয় সার্ক ফেস্টিভ্যালে যান বাঁশি বাজাতে। সেটি ছিল সরকারি সহযোগিতা।
এরপর ধীরে ধীরে আরও পরিচিত হয়ে উঠতে লাগলেন। বাঁশি বাজান উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে। হুমায়ূন আহমেদর এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার বাসায় যান বাঁশি বাজাতে। সেখানে বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি গানও করেন।
হুমায়ূন আহমেদ তাকে আরও গান গাইতে বলেন। গান শুনে মুগ্ধ হন হুমায়ূন। ১৯৯৫ সালে বিটিভির ‘রং-এর বারৈ’ অনুষ্ঠানে প্রথম গান করেন বারী সিদ্দিকী। এর পরপরই হুমায়ূন আহমেদ তাকে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে গান গাইতে বলেন।
চলচ্চিত্রের গানে আকাশ-ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরপরই বাজারে তার দু’টি একক অ্যালবাম আসে। একটি ‘দুঃখ রইলো মনে’ এবং অন্যটি ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘হুমায়ূন স্যার আমার গাওয়ার পেছনে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন। মূলত তার সাহস নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি।’
দু’টি অ্যালবামই লুফে নেয় শ্রোতারা। সেসময় উকিল মুন্সীর লেখা গান শ্রোতাদের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পেরে বারী সিদ্দিকী দারুণ উচ্ছ্বাসে ভাসেন। তিনি সবসময়ই নিজেকে একজন বংশীবাদক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বংশীবাদক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি বাঁশি বাজিয়ে শ্রোতা-দর্শককে মুগ্ধ করেছেন।
১৯৯৯ সালে ফ্রান্সে ওয়ার্ল্ড ফ্লুট সম্মেলনে এই উপমহাদেশ থেকে তিনিই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট অর্জন। একজন গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার আগে বারী সিদ্দিকী বংশীবাদক হিসেবে বাঁশি বাজিয়েছেন দু’দশক ধরে। কিন্তু গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর দেশের বাইরে বংশীবাদক হিসেবে তার সফর কমে যায়। কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন।
১৯৮০ সালে বারী সিদ্দিকী পেশাগতভাবে বাঁশি বাজানো শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম বিটিভিতে ‘সৃজন’ অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান। বারী সিদ্দিকী ‘মাটির পিঞ্জিরা’ নামের একটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। পরে তিনি ফেরারি অমিতের নির্দেশনায় ‘পাগলা ঘোড়া’ নাটকেও অভিনয় করেন। তবে অভিনয় করতেন নিতান্তই অনুরোধে এবং শখের বশে।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest