প্রকাশিত: ১০:০৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২৫
বিনোদন ডেস্ক : দেশের স্বনামধন্য মিডিয়াব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত। তার এক অনন্য সৃষ্টি ‘ইত্যাদি’। গত তিন যুগ ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে এ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি। প্রতি ঈদেই বর্ণাঢ্য আয়োজন নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হয় ইত্যাদি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এদিকে নাট্যকার হিসাবেও তিনি বেশ দর্শকপ্রিয়। শুধু বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে নির্মিত হয় তার নাটক। ইত্যাদি ও নাটক নির্মাণ নিয়ে সম্প্রতি যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছেন এ বরেণ্য নির্মাতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এফ আই দীপু
৩৬ বছর ধরে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ ধারাবাহিকভাবে প্রচার হচ্ছে ও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। এর গোপন রহস্য কী?
গোপন রহস্য কিছুই না। অনুষ্ঠান নির্মাণে আমাদের আন্তরিকতা, পরিশ্রম, মেধা ও সততা। আসলে আমরা সময়কে ধরে দর্শকদের কথা চিন্তা করে বিষয়-বৈচিত্র্যে অনুষ্ঠান সাজাই। সেরা জিনিসটি দিতে না পারলে অনুষ্ঠান সেরা হবে কেন? সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করি। আমরা বাগাড়ম্বরে বিশ্বাসী নই। প্রচারেই প্রসার নয়, আমাদের লক্ষ্য-দর্শকের মন জয়। আমি মনে করি ইত্যাদি প্রতিটি পরিবারের একজন সদস্য।
দীর্ঘ এ পথচলায় ইত্যাদি করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন, যা আপনার জীবনে সবচেয়ে মর্মস্পর্শী স্মৃতি হয়ে রয়েছে?
অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। চাপের মুখে পড়েছি কিন্তু নতি স্বীকার করিনি। বিভিন্ন আমলে বিভিন্ন কমিটির চক্করে পড়েছি। একমাত্র বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো চ্যানেলে বাইরের কোনো প্রিভিউ কমিটি থাকে না। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তাদের অনুষ্ঠান প্রিভিউ করেন। কিন্তু বিটিভিতে এত দক্ষ-অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে এসে কারও বিটিভিতে প্রচারিতব্য অনুষ্ঠান কেন প্রিভিউ করতে হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। বিগত ১৬ বছর এ প্রথা ছিল কিন্তু নতুন সরকারের আমলেও এ প্রথা থাকাটা কতটা যৌক্তিক সেটা ভেবে দেখা দরকার। প্রয়োজন নতুন বন্দোবস্ত। তবে এসব কারণে মর্মস্পর্শী স্মৃতি হয়ে থাকার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অবহেলিত ও লুকায়িত প্রতিভাবান মানুষ উঠে এসেছে ইত্যাদির প্রতিবেদনে। সমাজে আজ যারা জননন্দিত ও প্রশংসিত। এসব মানুষ সবার চোখের সামনেই ছিল, কিন্তু তাদের নিয়ে কেউ আগে প্রতিবেদন করেনি। এর কারণ কী বলে মনে করেন আপনি?
এসব মানুষের চেনার, জানার, বোঝার ও খোঁজার মন থাকতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক মানুষ আছেন যারা প্রতিনিয়ত মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এদের ক’জনকে আমরা চিনি, জানি? তারা প্রচারে বিশ্বাসী নয়, নীরব কর্মী। তারা কাজ করেন তাদের দায়বোধ থেকে। নিবেদিত প্রাণ এসব মানুষের অনুসন্ধানে আমরা ছুটে বেড়াই সারা দেশে। তুলে ধরি ইত্যাদিতে। তাদের দেখে যাতে অন্যেরাও উদ্বুদ্ধ হয়, অনুপ্রাণিত হয়।
বর্তমান সময় টিভি নাটক, ওয়েব সিরিজ এবং সিনেমায় ভাষার বিকৃতি হচ্ছে। অশ্রাব্য ভাষার পাশাপাশি অশ্লীল দৃশ্যও দেখা যাছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসব নাটক সিরিজ বা সিনেমা দেখা খুবই বিব্রতকর। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
সৃজনশীলতার চেয়ে শিল্প-সংস্কৃতি এখন অনেকের কাছেই ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে বেশিরভাগ শিল্পী, নির্মাতার মধ্যেই ‘কি দিলামের চেয়ে কি পেলাম’ এর হিসাবটা বেশি। ফলে সংস্কৃতি তার আসল উপাদান হারিয়ে ফেলছে। এসব থেকে পরিত্রাণ তো দূরের কথা, যেভাবে একের পর এক সিরিয়ালে, ওয়েব সিরিজে, ওয়েব ফিল্মে গালির উত্তরণ ঘটছে, তাতে ভবিষ্যতে গালিমুক্ত সংলাপ থাকবে কিনা সেটাই সন্দেহ। আজকাল বিদগ্ধ বলে কথিত ব্যক্তিরাও একে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এরাও এখন গালিকে শিল্পের অলংকার ভাবা শুরু করেছেন। যে কারণে সুস্থ দর্শকদের অসুস্থ করার সময় এসেছে।
সর্বশেষ প্রচারিত ইত্যাদিতে একটি নাটিকা ছিল, যেটার মধ্যে দেশপ্রেম বেশ লক্ষণীয় ছিল। নাটিকাটি বিটিভিতে দেখা যায়নি। কিন্তু ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে। টিভিতে সেই নাটিকা প্রচার না করার কারণ কী?
অন্তর্নিহিত রহস্যটি আমারও জানা নেই। বিটিভি তথা সরকারি এ প্রচারমাধ্যমটিতে এখনো কারা কী মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন সেটাই দেখার বিষয়। কারণ, নাট্যাংশটি ছিল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে চরম কটাক্ষপূর্ণ প্রতিবাদ। ওই লোকটি আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে, গুজব ছড়াচ্ছে। দেশকে ও দেশের সরকারকে বিশ্বের কাছে ছোট করেছেন, ইত্যাদি তাকে কটাক্ষ করে পালটা জবাব দিয়েছে। ইউটিউবে যাওয়ার পর যা প্রশংসিত হয়েছে। অথচ সেই নাট্যাংশটিই না দেখিয়ে কাটছাঁট করা হলো, যা দুঃখজনক।
ইত্যাদি মানেই হানিফ সংকেত। আর কতদিন অনুষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত থাকার ইচ্ছে আছে?
যতদিন দর্শক চাইবে, আমার সাধ্যে কুলাবে ততদিন। দর্শকদের ভালোবাসায় ধন্য হয়ে ইত্যাদি পাড়ি দিতে পেরেছে ৩৬টি বছর। আর এই ভালোবাসা যতদিন থাকবে আমি সুস্থ থাকলে ততদিন এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
প্রতি বছর দুই ঈদেই শুধু আপনার নির্মিত নাটক দেখা যায়। দর্শক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে নাটক নির্মাণে দেখা যায় না কেন?
আমার অনুষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে অনেক অনুষ্ঠানই করতাম। প্রতি মাসেই ২-১টি নাটক করা সম্ভব। কিন্তু একটি ইত্যাদি নির্মাণ করতে ২-৩ মাস সময় লেগে যায়। কারণ এর নির্মাণ অত্যন্ত জটিল। আমি নাটকের চেয়ে ইত্যাদিকেই বেশি গুরুত্ব দেই। কারণ ইত্যাদিতে নাটক, গান, নৃত্য, সামাজিক প্রতিবেদন, কুইজ, প্রামাণ্য চিত্র সবকিছুই থাকে। আমার চেষ্টা থাকে দর্শকরা যাতে সব সময় সপরিবারে আমার অনুষ্ঠান দেখতে পারেন।
পরিচালনায় বড় ক্যানভাসে নিজেকে দেখা, অর্থাৎ কখনো কী সিনেমা নির্মাণের ইচ্ছা বা পরিকল্পনা আছে?
মিডিয়ায় যারা সত্যিকারের উপস্থাপক তাদের সিনেমা নির্মাণ করতে খুব একটা দেখা যায় না। যেমন ল্যারি কিং, অপরাহ উইনফ্রে, ডেভিড লেটারম্যান, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের রজত শর্মাসহ আরও অনেকে আছেন, যারা ছবি নির্মাণ করেননি। এগুলো সবই বিশেষায়িত পেশা। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান এসব ক্ষেত্রে তাদের অদ্বিতীয় করে তুলেছে। আমার উদ্দেশ্য পরিবেশ উন্নয়ন ও সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখা, গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা ভালো মনের মানুষের তুলে ধরা। আপাতত সিনেমা নির্মাণের কোনো ভাবনা নেই। সময়ই বলে দেবে আমি কখন কি করব।
তরুণ প্রজন্মের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ?
আমরা দেশ বা সমাজের ভবিষ্যৎ দেখতে চাই তারুণ্যের আয়নায়। তরুণদের নিয়ে সব সময়ই আশার আলো দেখি। বিভিন্ন সময় তরুণদের অনেক সফলতার চিত্রও তুলে ধরেছি ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে। ওদের হাতেই শক্তিশালী হবে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ। সৎ ও নির্মোহ তরুণেরা তুলে নেবে ভার-সকল অসংগতি দূর করে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছাবার।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest