নারী উদ্যোক্তা দীপ্তি মল্লিক’র একান্ত সাক্ষাৎকার মো. আবু বকর

প্রকাশিত: ২:০৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২২

নারী উদ্যোক্তা দীপ্তি মল্লিক’র একান্ত সাক্ষাৎকার মো. আবু বকর

মো. আবু বকর : উদ্যোক্তা হতে হলে দরকার, আত্ম-উৎসর্গিত মনোভাব, যেভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হবেন

নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন মনের মাঝে সৃজনশীলতা, নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলা। কিছু কিছু বিষয় আছে যা উদ্যোক্তা মনটাকে শক্তিশালী করে।

 

নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় নারীদের কত টাকা পূঁজি আছে বা কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে তা নয়, বরং একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় মূলধন তার নতুন কিছু করতে চাওয়ার ইচ্ছা। এভাবেই একজন উদ্যোক্তার পথচলার চিত্রায়ণ করেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা দীপ্তি মল্লিক।

উদ্যোক্তা হতে হলে আপনার দরকার আত্ম- উৎসর্গিত মনোভাব। যে কোনো খারাপ পরিস্থিতি সামলে ওঠা ও ব্যর্থতা গ্রহণের সামর্থ্য আপনার থাকতে হবে।

 

একজন উদ্যোক্তা হতে হলে আগে আপনাকে জানতে হবে উদ্যোক্তা কে অথবা উদ্যোক্তা কী জিনিস? উদ্যোক্তাকে সাধারণভাবে ব্যবসায়ীও বলা যায়। কিন্তু একজন উদ্যোক্তা আর ব্যবসায়ীর মধ্যে খানিকটা পার্থক্য আছে। যেমন- একজন মুদি দোকানদার ব্যবসায়ী হলেও উদ্যোক্তা নন। তিনি একজন উদ্যোক্তা তখনই হবেন যখন তিনি মানুষের কোনো একটি সমস্যা গৎবাঁধা নিয়মে সমাধান না করে একটু ইনোভেটিভ উপায়ে সমাধান করবেন।

 

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ট্রেনিং নেই সফল উদ্যোক্তা নারী হওয়ার জন্য।

প্রশ্ন : আপনি কততম ব্যাচ ট্রেনিং দিয়েছেন
উত্তর : ৪নং ব্যাচ

প্রশ্ন : মোট কতজন ট্রেনিং দিয়েছেন
উত্তর : ২০জন

প্রশ্ন : কতজন ট্রেনিং নিয়ে কর্ম স্থানে যোগ দিয়েছেন
উত্তর : এক জন, শুধু আমি

প্রশ্ন : কতজন উদ্যোগক্তা হয়ে কর্মস্থান চালু করছেন
উত্তর : এক জন, শুধু আমি

প্রশ্ন বর্তমান পরিকল্পনা কি
উত্তর : কর্মসংস্থান গড়ার ও মানুষের সেবা কর

প্রশ্ন মহিলা অধিদপ্তর কিকি সুবিধা দিয়েছে
উত্তর : সকল ধরনের সার্বিক সুবিধা দিয়েছে।

 

আমার জীবন কাহিনী কিছুটা তুলে ধরলাম

আমার নাম দীপ্তি মল্লিক, পিতাঃ শৈলেন মল্লিক, মাতাঃ রেখা মল্লিক, আমরা তিন ভাই বোন,আমি বড়,আমার ছোট দুই ভাই,বড় ভাইয়ের নামঃ সুমন মল্লিক, ছোট ভাইয়ের নাম সনজয় মল্লিক,আমার পড়াশোনাঃ এসএসসি পাশ,২০০৬ সালে আমার বিয়ে হয়,২০০৭ সালে আমার মেয়ে হয়, তার নাম অর্পা, বিয়ের তিন মাসের মাথায় আমি বাবার বাড়ীতে চলে আসি, আসতে বাধ্য হয়, তখন আমি অনস্তত্তা এক মাসের, সেই থেক আজো আমি বাবার বাড়ীতেই আছি।

 

অনেক অনেক ঝড়-ঝাপটা আমার উপর দিয়ে গেছে, আমি ছোট বেলা থেকেই হাতের কাজে পারদর্শি ছিলাম, কোথাও কোন ও কাজ দেখলে সেটা আমার মাথায় ডুকে যেতো নিজে ট্রাই করতাম একবার দেখলেই পারতাম,আমি হাতের কাজ সবকিছু পারি, টেইলারিং, চটের কাজ, পুতির কাজ, নকশীকাঁথার কাজ, সবকিছুই পারতাম ২০১৯ সালে আমি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ব¬ক বাটিকের ট্রেনিং নেই।

 

এবং ২০১৯ সালেই আমি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক জনাবা শাহিনা ম্যাডামের সাহায্যে ও ব¬ক বাটিকের টিচার জনাবা আইরিন ম্যাডামের সাহায্য সহযোগিতার কারুগৃহ মানে আমার দোখান খুলি,আমি কারুগৃহ কখনোই খোলতে পারতাম না যদি ম্যাডাম রা আমাকে সাহায্য না করতেন ম্যাডাম আমাকে ঋণ দিয়েচেন সেলাইয়ের মেশিন দিয়েছেন অনেক কিছু করেছেন।

 

আমি চিরকৃতজ্ঞ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কাছে, ম্যাডামদের কাছে। ২০২০ সালে সেরা উদ্যোগক্তা ৩য় হয় আমি,আর ২০২১ সালে সেরা উদ্যোগক্তা ২য় হই আমি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে আমাকে ক্রেষ্ট দেন আমাকে,সব সময় আমি আমার ম্যাডামদের কে ও পুরো মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কে আমার পাশে পেয়েছি,আমি চাই ম্যাডামদের এই আর্শিবাদের হাত যেনো সারাটা জীবন আমার মাথার উপর থাকে,এই জীবনে আমি অনেক অপমান ঘৃনা কষ্ট অপবাদ পেয়েছি।

 

ঘুরে দাঁড়াতে গিয়েও দাঁড়াতে পারিনি বার বার যন্ত্রণা সহ্য করেছি একটা সময় নিরুপায় হয়ে মরে যেতে চেয়েছিলাম, আমি পদে পদে বিতর্কিত হয়েছে, বার বার ভেঙে পড়েছি, আমি স্বপ্নে ও ভাবিনি আজ এই জায়গায় আমি আসতে পারবো বলে পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন সবাই দুরে সরিয়ে দিয়েছে কাউকে পাইনি আমি আমার যুদ্ধে,এই যুদ্ধ টা আমার একার ছিলো।

 

বিয়ের তিন মাসের মাথায় বাবার বাড়ীতে আসা একটা মেয়ের জীবনে কি কি গঠতে পারে আশা করি আপনারা বোঝতে পারছেন,না বোঝলাম স্বামী না বোঝলাম সংসার অথচ আমি একটা মেয়ের মা হয়ে গেলাম,মরে গেলো আমার সব স্বপ্ন সব চাওয়া পাওয়া,একটা মেয়ের মা হলেই নাকি আর কোন ও চাওয়া পাওয়া থাকেনা ।

 

কোন ও স্বপ্ন থাকেনা,নিজের সাথে পরিবারের সাথে সমাজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আজ আমি সফল,আর এই সফলতার জন্য আমি আমার পাশে শুধু আমার মাকে পেয়েছি,আমার মা যদি আমাকে একটু সাহায্য সহযোগিতা না করতেন তাহলে আমি আজকে এই জায়গায় কখনো আসতে পারতাম না,আমি চাইনা আমার মত জীবন আর কোন ও মেয়ের হোক,আর কোন ও মেয়ে যেনো এই সমাজের চোখে খারাপ আর বাবা মার কাছে বোঝা না হয়।

 

আমি চাই আমার মতো যারা আছে তাদের পাশে থাকতে, আমার হাত ধরে যেনো আমারি মতো অসহায় মেয়েরা নিজের বাঁচার পথ করতে পারে,একটা মেয়ের বিয়ের পর ডিভোর্স হলে বা স্বামী মারা গেলে সে যেনো কোন ও বাবা মার বোঝা না হয়,মেয়েরা ও মানুষ তাদের ও নিজের মত বাঁচার অধিকার আছে।

 

কেউ পাশে না থাকলে ও অন্তত নিজের পরিবার নিজের বাবা মা ভাই বোন যেনো সেই মেয়ের পাশে দাঁড়ায়,তাকে সাপোর্ট দেয় এটাই আমার চাওয়া,আমি অনেক জ্বলেছি অনেক পুড়েছি অনেক সহ্য করেছি এখনো করছি,তবে আমি আমার লক্ষে অটুট আছি আর থাকবো,আমি আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছি যদি আরেকটু সাহায্য সহযোগিতা পাই তাহলে আমার কারুগৃহ একটা স্থান পাবে, এখানে অনেক মেয়েদের কর্মসংস্থান হবে,ঝড়ে যাওয়া অনেক প্রান আবার সতেজ হয়ে উঠবে, আমি সবার সাহায্য কামনা করছি।