ঘর না পেয়ে- আক্ষেপ নিয়ে চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা আফ্রিকার সুটিং

প্রকাশিত: ১:৫১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩

ঘর না পেয়ে-  আক্ষেপ নিয়ে চলে গেলেন  মুক্তিযোদ্ধা আফ্রিকার সুটিং

নিউজ ডেস্ক : বীর মুক্তিযোদ্ধা আফ্রিকা সুটিং (খাসিয়া)। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৪ নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।

 

যুদ্ধের সময় যে পুঞ্জী বাস করতেন তার পুঞ্জি নাম হলো পাল্লাথাল, শাহাবাজপুর,বড়লেখা উপজেলা, মৌলভীবাজার জেলা। তাঁর বয়স যখন আঠার বছর (১৮) তখন তিনি ৪ নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছিল। দেশকে ভালোবেসে সে যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তাঁর সেক্টর কমান্ডারের নাম মেজর সি.আর দত্ত।

 

তিনি কমলপুর সদর দপ্তরের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ সময় তার সাথে কয়েকজন খাসি (খাসিয়া) বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তারা হলেন কার্লুস খাসিয়া, লুটমন খাসিয়া, ওয়েল খাসিয়া, বিশন খাসিয়া এবং তার সহ পাঁচ (৫)জন যুদ্ধ করেছে। তারা যেসব এলাকায় যুদ্ধ করেছিল সেই এলাকাগুলো নাম হলো আমরুল, সাতগাও, কুরমা, ফুলতলা, পাথরকলা ও মাধবপুর। জোয়ারগঞ্জে তাদেরকে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

 

ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা তাদেরকে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ।যুদ্ধের সময় তখনকার বাংলাদেশের অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল।ভয়ানক পরিস্থিতিতে আশেপাশে কোনো মানুষ ছিল না।সবাই ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।অবশেষে বাংলাদেশে যারা ছিল পরে তারাও ভারতে আশ্রয় নেয়। সে বলেছে তারা সোনার বাংলার জন্য যুদ্ধ করেছে । একাত্তরের ঘটনাগুলো তার তেমন মনে নেই।দেশ স্বাধীন করার জন্য তারা যুদ্ধ করেছে এবং তারা যেন সবাই মিলেমিশে শান্তিতে একসাথে বসবাস করতে পারে। তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের সব সনদপত্র আছে।

 

সে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাই।বাংলাদেশ সরকার তাকে খাস জমির পরিবর্তে সামাজিক বনায়ন দিয়েছে।মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক খাসিয়া আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিল।তারা যখন ক্যাম্প থেকে যুদ্ধের জন্য বের হয় তখন তারা সাথে করে খাবার নিয়ে যাই এবং যখন তাদের খাবার ফুরিয়ে যায় তখন তারা বিভিন্ন গাছের ফল খেয়ে বেঁচে থাকে।

 

যুদ্ধের সময় অনেক যুবক ছিল কিন্তু শুধুমাত্র তারাই অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।যখন তারা পাল্লাথল, জিঙ্গালা চা বাগান, বড়লেখা এলাকায় তাদের যুদ্ধে চলছিল হঠাৎ তারা বার্তা পেয়েছি যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে.ভারতীয় বিমানবাহিনী যুদ্ধে প্রবেশের এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশটি স্বাধীন হয়।সরকারের পক্ষ থেকে ঘর দেওয়ার কথা থাকলেও কিন্তু তার খাস জমি বা জমির দলিল না থাকায় আর দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন যাবত তিনি বার্ধক্য জনিত অসুখে শয্যাশায়ী ছিলেন।

 

গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর ২০২৩ ইং) রাত সাড়ে ৯ ঘটিকায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের এওলাছড়া পুঞ্জির উনার মেয়ের বাড়িতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ১৯৪৫ সালের ১৯ নভেম্বর বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী পাল্লাথল খাসিয়া পুঞ্জিতে জন্মগ্রহন করেন। গত ২ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং রোজ শনিবার তাকে রাষ্ট্র গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয় এবং শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

 

গত ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ইং অওলা খাসি পুঞ্জী ১৩ নং কর্মধা ইউনিয়ন কুলাউড়া উপজেলা মৌলভীবাজার জেলা খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন সিলেট কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা আফ্রিকা সুটিং ( খাসিয়া) এ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলিজ্যাক তাংসং, সভাপতি, খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, সিলেট, বাংলাদেশ. সাক্ষাৎকার সভায় সঞ্চলনায় করেছেন -মার্কুস পাপাং, সাধারণ সম্পাদক, খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, সিলেট,বাংলাদেশ.এছাড়া উপস্থিত আছেন ডেন্সিল পডুয়াঙ, উপদেষ্টা, খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, সিলেট, বাংলাদেশ. এছাড়া. ইভিনিং ইয়াংয়ুঙ, সহ-সভাপতি, জেফারসন, সাংগঠনিক সম্পাদক, হেন্সি পঃতাম, অর্থ সম্পাদক, রোনাল্ডো লম্বা, সহকারী অর্থ সম্পাদক, সাথিয়ান পালমার. আরো উপস্থিত আছেন মাইকেল তুস।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন