প্রকাশিত: ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২
মো.আবু বক্কর : সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে। অনলাইনে মনগড়া, মোখরোচক, চটকদার কন্টেন্ট দিয়ে প্রতিপক্ষ কে ঘায়েল করার নেশায় মেতে উঠেছে কিছু কুচক্রী মহল। আগামী জাতীয় নির্বাচন কে সামনে রেখে ফেইসবুক, টেলিগ্রাম, ইউটিউবসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রপাগণ্ডা ছড়ানোর মিশনে বড় অংকের অর্থলগ্নীর বিষয়টিও পরিস্কার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও জনগনকে প্রপাগণ্ডা ও সাইবার হামলা থেকে সাবধান করেছেন। জাতীয় সংসদে ইতিমধ্যে পাশ হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮। তবে এই আইন নিয়ে এখনো বিস্তারিত ধারণা না থাকায়, প্রায়ই আমরা অনলাইন প্লাটফর্মে বিভিন্ন কুচক্রী মহলের তৈরী ছবি, ভিডিও ও লিংক ইত্যাদি সরল মনে শেয়ার করে নিজের অজান্তেই আইন ভঙ্গ করছি।
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কি কি রয়েছে তা নিয়ে দৈনিক শুভ প্রতিদিনের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছেন মৌলভীবাজারের সন্তান সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট-এট-আর্মস ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) সাদরুল আহমেদ খান। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের স্টাফ রিপোর্টার আবু বক্কর।
শুভ প্রতিদিন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেইট স্পিচ বা কোন দেশ বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করা পোস্ট শেয়ার করলে কি হবে?
সাদরুল আহমেদ খান: ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জন শৃঙ্খলা ক্ষুন্ন করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্লক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। এক্ষেত্রে পুলিশ পরোয়ানা বা অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ এবং গ্রেপ্তার করতে পারবে।
শুভ প্রতিদিন: কোন সরকারী আফিসের গোপনীয় নথি, ছবি বা রিপোর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার শাস্তি কি?
সাদরুল আহমেদ খান: এই আইনে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছে। ফলে কোনো সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, বা প্রকাশ করে বা কাউকে করতে সহায়তা করে ওই আইন ভঙ্গ করলে এই আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হতে পারে, ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে।
শুভ প্রতিদিন: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিমূলক কন্টেন্ট শেয়ার করার শাস্তি কি?
সাদরুল আহমেদ খান: আইন অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার নামে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালালে বা মদদ দিলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
শুভ প্রতিদিন: কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনুমানভিত্তিক মানহানিকর তথ্য ছড়ালে শাস্তি কি?
সাদরুল আহমেদ খান: ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঘৃণা প্রকাশ, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বার এরকম অপরাধ করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
শুভ প্রতিদিন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউকে ব্লাকমেইল বা প্রতারিত করার শাস্তি কি?
সাদরুল আহমেদ খান: ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করলে অনাধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে।
শুভ প্রতিদিন: কারো ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য হ্যাকিং করার শাস্তি কি?
সাদরুল আহমেদ খান: কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের বিষয়েও বিধান রয়েছে এই আইনে। সেখানে ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে, এমন ডিজিটাল সন্ত্রাসী কাজের জন্য অপরাধী হবেন এবং এজন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড অথবা এনাধিক এক কোটি অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে ণ্ডিত হবে।
শুভ প্রতিদিন: গলাকাটা ছবি, কাটপিস ভিডিও, এডিট করা অডিও শেয়ার করার শাস্তি কি?
সাদরুল আহমেদ খান: ছবি, অডিও, ভিডিও বিকৃতি বা অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ করা বা বিকৃত করা বা ধারণ করার মতো অপরাধ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি ও শিশু পর্নগ্রাফির অপরাধে সাত বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে।
শুভ প্রতিদিন: সংরক্ষিত এলাকায় ও অফিস সমূহের গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করার শাস্তি কি?
সাদরুল আহমেদ খান: কোনো সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত যদি কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তি বলে গণ্য হবে এবং এজন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
শুভ প্রতিদিন: বিদেশে বসে গুজব ছড়ালে কি এই আইনে মামলা করা যাবে?
সাদরুল আহমেদ খান: বাংলাদেশ বা বিশ্বের যেকোনো বসে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি এই আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলেই তার বিরুদ্ধে এই আইনে বিচার করা যাবে।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest