পাপনের হুশিয়ারি, যাকে যা দেওয়া হবে কড়ায় গন্ডায় হিসাব নেয়া হবে

প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪

পাপনের হুশিয়ারি, যাকে যা দেওয়া হবে কড়ায় গন্ডায় হিসাব নেয়া হবে

স্পোর্টস ডেস্ক : তিনি এখনো ক্রিকেট বোর্ডের বলয় থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেননি। তাই তার কথায় বারবার চলে আসে দেশের সবচেয়ে ধনাঢ্য ফেডারেশনের নানা উদাহরণ। ক্রিকেট প্রশাসন পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা অর্জণের পর অন্য ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর সমস্যাগুলো নয়া ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কাছে খুব বড় সমস্যা মনে হচ্ছে না। তার কাছে তাদের সব সমস্যাই সমাধানযোগ্য। মঙ্গলবার ৮টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও একটি সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বসেছিলেন পাপন।

 

তাদের কাছ থেকে পেয়েছেন দিস্তায় দিস্তায় চাহিদাপত্র। মোটা দাগে প্রায় সবাই আর্থিক সঙ্কটকেই মন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেছেন। পাপন সবার কথা শুনেছেন, সঙ্গে করে নিয়ে আসা চাহিদাপত্রও বুঝে নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতেও বাকি ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসবেন বলে মনস্থির করেছেন। সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে বরাদ্দের হিসাব কড়ায় গন্ডায় নেওয়ার কথাও বলেছেন। অর্থ সঠিক ব্যবহার না হলে বরাদ্দ বন্ধ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক।

মঙ্গলবার দুপুরে আরচারি, শ্যুটিং, অ্যাথলেটিকস, সাঁতার, ভলিবল, বাস্কেটবল, ভারোত্তোলন, ক্যারম ফেডারেশনের মহিলা ক্রীড়া সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পাপন। প্রায় সকলেই নানা অভাব-অভিযোগের দীর্ঘ তালিকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন নতুন মন্ত্রীর সামনে। তাদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন পাপন। সভা শেষে তিনি বলেন, ‘আজকে যে ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসলাম এর মধ্যে দুটি ফেডারেশনের একসঙ্গে একটা কমপ্লেক্স করে দেওয়ার কথা বলেছে, এ ছাড়া বাকী ফেডারেশনগুলো যা আর্থিক চাহিদা, তা আমার ধারণার চেয়ে অনেক কম।

 

আমি যা ভেবেছিলাম তার ৫ শতাংশও না। এখনও অনেকের সঙ্গে বসা বাকী আছে। তবে এখন পর্যন্ত যা চাহিদা পেয়েছি, তা পূরণ করা কঠিণ কিছু না। এই ছয়মাসের মধ্যে পারবো কীনা জানি না। কারণ সামনে যে বাজেট আসবে, তার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ফান্ড কত-কি চাওয়া হয়েছে, এগুলো না জেনে বলতে পারছি না। তবে ছয় মাস পরে পরবর্তী বাজেটে এসব বিষয় যুক্ত করার চেষ্টা করবো। তারা যা চেয়েছে, সেগুলো পূরণ করার ব্যবস্থা করবো। যদি সরকারের তরফ থেকে না হয়, আমরা চেষ্টা করবো প্রাইভেট সেক্টর থেকে নিয়ে তাদের চাহিদা পূরণ করতে।’

 

আরচারি ও শ্যুটিং ফেডারেশনকে একসঙ্গে কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য গাজীপুরে আগের আমলেই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সভায় এই দুই ফেডারেশন কমপ্লেক্স করে দেওয়ার অনুরোধ মন্ত্রীকে করেছে। এছাড়া ভারোত্তোলন ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরে অপরিসর জিমে কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। একটা উন্নতমানের জিমের দাবী জানানো হয় তাদের পক্ষ থেকে। পাপন আরচারি ও শ্যুটিং ফেডারেশনের চাওয়ার ব্যাপারে এখনই কোন আশ্বাস না দিলেও বাকীদের চাওয়াগুলো পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে আর্থিক বরাদ্দ সঠিকভাবে কাজে লাগানোয় গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি, ‘আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, যাকে যা দেওয়া হবে, তা কড়ায় গন্ডায় হিসাব নেওয়া হবে। সেটা সঠিক জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে কীনা, সেটা নিশ্চিত করতেই হবে। এখানে কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’

 

সভায় ফেডারেশনগুলো খেলোয়াড়দের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেনি। তবে পাপন বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি দুই-একটি খেলার খেলোয়াড়দের সঙ্গেও বসে জানতে চাইবেন তাদের চাহিদা। এছাড়া রাজধানীর পূর্বাচলে নির্মিতব্য শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আরও পাঁচটি ফেডারেশনকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছেন তিনি। শ্যুটিং, আরচারি, সাঁতার, ভলিবল ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলাদা করে বসার কথাও জানান তিনি।

 

ফেডারেশনগুলোতে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া ফেডারেশন ফোরামের দ্বৈরাত্ব নিয়েও প্রশ্ন গিয়েছে পাপনের কাছে। তিনি বলেন, ‘ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসার পর জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমি বসবো। তবে এখনই ফেডারেশনগুলোর লোকজন বদলে ফেলা হবে, সেই চিন্তা নিয়ে বসবো না। কাজ করতে গিয়ে যদি কোন সমস্যা দেখি, তখন অবশ্যই বদল আনা হবে। আগে জেলার চাওয়া-পাওয়াগুলো আমাদের জানতে হবে।’

 

মন্ত্রী হয়ে আসার পর থেকে নিয়মিতই দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকছেন পাপন। আজ তিনি দুটি বড় খেলা ফুটবল ও হকির কর্তাদের সঙ্গে বসবেন মন্ত্রণালয়ে। আপাতত তিনি ক্রীড়াঙ্গনের মূল সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করছেন। সেটা জেনেই সমাধাণের পথ খুঁজবেন। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন পাপন, সেটা করতে পারবেন কীনা, তা সময়ই বলে দিবে।