প্রকাশিত: ৫:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘সিসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি বলে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ (২০-২৬ অক্টোবর) ২০২৪ উপলক্ষে ইউনিসেফের সহযোগিতায় সিলেট জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় একটি বর্ণাঢ্য র্যালি ও র্যালি পরবর্তী পথসভার আয়োজন করে।

সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ র্যালির উদ্ভোদন করেন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ডাঃ নূরে আলম শামীম; সহকারী পরিচালক: রোগ নিয়ন্ত্রণ- সিলেট বিভাগ, সিলেট জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনিসর চৌধুরী, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ জন্মেজয় দত্ত, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, ইউনিসেফ সিলেটের চিফ অফ ফিল্ড অফিস কাজী দিল আফরোজা ইসলাম, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে এলাহী প্রমুখ।

এই আয়োজনে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস ও জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশন, সিলেট অঞ্চলের সদস্য, বেসরকারি সংগঠন সুশীলনের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ আলমগীর মিয়া নেতৃত্বে প্রকল্পের সিটি কর্পোরেশন ও সিলেট সদরের কর্মকর্তা সহ অন্যান্য সদস্য এবং অন্যান্য বিভিন্ন স্তরের প্রায় দুই শতাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।

র্যালিটি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন রঙিন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও পোস্টারের মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদর্শন করেন, যেমন: ‘আসলে শিশু সিসার সংস্পর্শে, বাড়বে না আর বুদ্ধি বিকাশে’, ‘রোধ করলে সিসা দূষণ, নিরাপদ হবে মা ও শিশুর জীবন’, ‘সিসা যুক্ত রং নীরব ঘাতক’, ‘সিসার অনিরাপদ ব্যবহার বন্ধ করি, শিশুর সুস্বাস্থ্য ও বুদ্ধি ভিত্তিক বিকাশে সহায়তা করি’ প্রভৃতি।
র্যালি শেষে সিভিল সার্জন অফিস প্রাঙ্গণে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সিসা একটি নীরব ঘাতক যা শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সিসার বিষক্রিয়ায় বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ শিশু আক্রান্ত, এবং এই দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান চতুর্থ। বক্তারা সিসা দূষণ প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের উপর সিসা দূষণের প্রভাব মারাত্মক। সিসা শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে,পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষণা অনুযায়ী, সিসার বিষক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশের শিশুদের বুদ্ধিমত্তা সূচক (ওছ) উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে এবং প্রায় দুই কোটি আইকিউ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।

সিসার বিষক্রিয়া গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত বিপজ্জনক। সিসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যার ফলে নবজাতকের ওজন কমে যায়, শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা তৈরি হয়, এমনকি শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
সিসার বিষক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হৃদরোগে মারা যায়। এছাড়াও, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে সিসা দূষণের কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ২৮,৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের মোট জিডিপির ৬-৯ শতাংশের সমান।

দৈনন্দিন ব্যবহারের অনেক পণ্য যেমন: রং, হলুদ, মরিচ, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের থালা-বাসন, খাবারের পাত্র, বাচ্চাদের খেলনা, আয়ুর্বেদিক ঔষধ, সুরমা, সিঁদুর, প্রসাধনী ইত্যাদিতে সিসার অতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া, সিসাযুক্ত এসিড ব্যাটারির অপরিকল্পিত পুনঃচক্রায়ন কারখানার মাধ্যমেও সিসা আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশে সিসা দূষণ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সিসার ব্যবহার সীমিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যাটারি পুনঃচক্রায়ন কারখানায় সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা, শিশুদের খেলনা ও প্রসাধনী সামগ্রীতে সিসার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, এবং সিসামুক্ত রং ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সিসা দূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে মানুষ সঠিক ধারণা পায় এবং সিসাযুক্ত পণ্য ব্যবহারে সচেতন হয়। সিসা দূষণ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
আসুন নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এখনই সিসা দূষণ বন্ধ করি!




অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
প্রধান উপদেষ্টা : আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাপ্তান হোসেন
পরিচালক, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠাতা, আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাপ্তান হোসেন সমাজ কল্যাণ ট্রাস্ট।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
Design and developed by Web Nest