স্বামী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে কী করবেন?

প্রকাশিত: ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২২

স্বামী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে কী করবেন?

অনলাইন ডেস্ক : মানুষ স্বভাবতই বহুগামী। সামাজিক নিয়মে বিয়ে হয় একজনের সঙ্গে। আশা করা হয় তাকে ভালোবেসেই কেটে যাবে সারাটা জীবন। কিন্তু একপক্ষ যখন কোনো অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তখন তা অন্য পক্ষের জন্য হয় তীব্র যন্ত্রণার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের সম্পর্কের ভীত হয় সাময়িক আকর্ষণ এবং বিবাহিত জীবন একঘেয়ে হয়ে যাওয়ার জন্য। ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‍‍`Nature abhors vacuum‍‍` অর্থাৎ প্রকৃতিতে শূন্যতার কোনো স্থান নেই। আপনার এবং আপনার স্বামীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কখনো কখনো এই রকম ছোট ছোট শূন্যতা তৈরি হয়। এইসব শূন্যতার ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক দুর্বল মুহূর্তে আপনার স্বামী জড়িয়ে যেতে পারেন অন্য কোনো সম্পর্কে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষটি নিজের ঘর ভাঙ্গার কথা ভাবেন না। কিছুদিন পরেই মোহ কেটে যায় এবং তিনি ফিরে আসতে চান। কিন্তু লজ্জা এবং দাম্পত্যের তিক্ততার কারণে তিনি ইতস্তত করেন। এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে না পড়ে স্ত্রী হিসেবে খুব ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলান। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান দিনা দিচ্ছেন কিছু পরামর্শ।

 

 

সারাক্ষণ কোথায় যাচ্ছো, কোথা থেকে এলে এই ধরনের প্রশ্ন করবেন না। কারণ আপনি নিজেই জানেন তিনি সত্য বলছেন না। ফলে আপনি সহজেই মিথ্যাগুলো প্রমাণ করতে পারবেন। আর এই প্রমাণ থেকেই তার গ্লানি বেড়ে যাবে। এবং তখন উনি আপনাকে এড়িয়ে যেতে চাইবেন। তাই তার গতিবিধির পরিবর্তন নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না।

 

 

বারবার স্বামীর অফিসে ফোন করে খোঁজ নেবেন না, তিনি অফিসে আছেন কিনা? আপনার এমন বারবার ফোন করে খোঁজ নেওয়ার কারণে উনি সহকর্মীদের কাছে বিব্রত হবেন। আর ঘরে তা নিয়ে অশান্তি আরও বাড়বে। তাছাড়া স্বামীর সহকর্মীদের কাছে আপনার সম্মানও নষ্ট হবে।

 

স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করুন। আপনাদের যেসব একান্ত সময় ছিল সেগুলো এড়িয়ে যান। যেমন ধরুন, আগে অফিস থেকে ফেরার পর দু কাপ কফি তৈরি করে আপনারা সারাদিন নিজেরা যা যা করেন তার গল্প করতেন। এখন তা না করে শুধু স্বামীর কফিটা বানিয়ে তাকে দেবেন। তারপর আপনি নিজের মতো করে আপনার সময় কাটাতে থাকুন।

 

অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও পুরুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চায় না নিজের স্ত্রীর ওপর অধিকার হারাতে। সেই সময় পুরুষ চায় দুটো সম্পর্কই সমান্তরালভাবে চালিয়ে যেতে। এই অবস্থায় আপনি তাকে না জানিয়ে নিজের কাজে বিভিন্ন জায়গায় যান। দেখবেন প্রথম প্রথম জিজ্ঞেস না করলেও কিছুদিনের মধ্যেই তার অধিকারবোধে ঘা লাগবে।

 

কখনোই কেঁদে কেটে স্বামীকে ফেরানোর চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, আপনার স্বামীর ভালোবাসা আপনার কাম্য, তার সহানুভূতি নয়। দাম্পত্যে সহানুভূতি মুখ্য হয়ে গেলেই ভালোবাসায় ঘাটতি পড়ে যায়। আর আপনি তার সহানুভূতি নিলে তার মনে অপরাধবোধও কাজ করবে না।

 

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন দৈনন্দিন জীবনযাপনের মন্থনে অনেক সময় গ্লানিরও গরল ওঠে। আর সেই গরল মলিনতার ছায়া ফেলে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণে। রবীন্দ্রনাথ এই পরিস্থিতিটাকে বর্ণনা করেছিলেন ‘কাছে থাকার আড়াল’ বলে। তাই নিজেকে একটু অপরিচিতা করে তুলুন। একটু আড়াল তুলুন। সহজলভ্য কিছুর ওপরই আকর্ষণটা কমে যায়। তাই নিজেকে করুন দূরের আকর্ষক নারী।

 

প্রেমের দিনগুলোতে আপনার চরিত্রের যেসব গুন আপনার স্বামীর ভালো লাগতো, আপনার যেসব ব্যবহার তাকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলো, সেগুলো মনে করার চেষ্টা করুন। সেই ব্যবহারগুলো আপনার চরিত্রে আবার ফিরিয়ে আনুন। দেখবেন উনি আবারো আপনার প্রেমে পড়বেন।

 

বাসাটাকে যথার্থ অর্থেই শান্তির নীড় করে তুলুন। হিন্দিতে একটা কথা আছে, ‘সুভা কা ভুলা অগর শাম কো লট আয়ে তো উসে ভুলা নাহি দেনা’। এর নিহিত অর্থই হচ্ছে কেউ যদি ভুল করে এবং বুঝতে পারে যে সে ভুল করেছে তাহলে তাকে মাফ করে দেওয়া উচিত। ঝগড়া না করে ভালো ব্যবহার চালিয়ে যান। বাসায় ফেরা মাত্রই কোনো সমস্যার কথা বলবেন না। নিজেই যতটা সম্ভব সমস্যা সামলাতে চেষ্টা করুন। এতে আপনার ওপর স্বামীর নির্ভরতা বাড়বে।

 

পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে এ ব্যাপারে একেবারেই জড়াবেন না। অনেক সময় অবিভাবক দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে স্বামীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন অনেক স্ত্রী। আপনার স্বামী যদি আপনার কথাই না ভাবেন, আপনার যন্ত্রণাই না অনুভব করতে পারেন তাহলে তৃতীয় ব্যক্তির সাধ্য নেই তাকে ফেরানোর। বরং আপনার এই ব্যবহার আরও বিড়ম্বিত করবে তাকে। আর তখন তিনি ভুল করছেন জেনেও নেহাতই জিদের বশে বাকিদের সামনে নিজেকে ঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এবং এই জিদ থেকেই আরও বেশি জড়িয়ে পড়বেন সেই সম্পর্কে।

 

ছেলেমেয়েকে কখনোই জানতে দেবেন না তাদের বাবার এই সম্পর্কের কথা। এতে আপনাদের সন্তানের তাদের বাবার ওপরের এত দিনের বিশ্বাস, এত দিনের নির্ভরতার যে শক্ত ভিত ছিল, তা নড়ে যাবে। সন্তান প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে ভুগবে। তাদের পড়াশোনা, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সবই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর সন্তানেরা এসব জানলে আপনার স্বামী লজ্জায় সন্তানদের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া সন্তানকে এই ব্যাপারে জড়ানোর কারণে আপনার স্বামীর মনে আপনার প্রতি আরও বিদ্বেষ তৈরি হবে।

 

তারপরও যদি তিনি ফিরে না আসেন আর আপনি যদি সন্তানদের জন্য স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙতেও না চান তাহলে নিছক গড়ে তুলুন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। সম্পর্কের বাঁধন থেকে তাকে মুক্তি দিন। উনি যদি ফিরে আসেন তাহলে উনি আপনার। আর যদি ফিরে না আসেন তাহলে জানবেন উনি কোনোদিনই আপনার ছিলেন না

 

একটা চলন্ত ট্রেন থেকে যাওয়ার সময় একটা সুন্দর ফুলগাছ দেখে তা আপনার বাগানে লাগানোর ইচ্ছা হতেই পারে। কিন্তু চলন্ত ট্রেন থামিয়ে তা নেওয়া কি আদৌ সম্ভব? তাই আপনাকে ভাবতে হবে ইটস নট ইয়োর। তেমনই নিজের জীবনটাকেও আবেগ নয়, যুক্তি দিয়ে ভাবা উচিত। কোনো কোনো সময় আমরা ভালোলাগা আর ভালোবাসার তফাতটা করতে পারি না। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ফিকে হয়ে যায়। তখন সেই সুযোগে অন্য কেউ মন ছুঁয়ে যেতেই পারে। কিন্তু একটা নিছক ভালোলাগাকে বাস্তবে এনে নিজেদের সুন্দর দাম্পত্য জীবন নষ্ট করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।