প্রকাশিত: ৬:২১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২৩
নিউজ ডেস্ক : পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযানের পর সমতলে ছড়িয়ে পড়েছে জঙ্গিরা। নিরাপদ আস্তানা ও প্রশিক্ষণস্থল হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে সিলেট বিভাগকে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা সিলেটের অনেক যুবককে জঙ্গিবাদে উসকে দিয়েছে। নিষিদ্ধ পথ অনুসরণ করে নিখোঁজ হয়েছেন অনেক যুবক। জঙ্গিবাদে জড়ানোর পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছেন কয়েক যুবক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পাঁচ কারণে জঙ্গিরা সিলেটকে বেছে নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- দুর্গম এলাকা, সীমান্তের সুযোগ গ্রহণ, প্রবাসীদের টার্গেট করে অর্থ সংগ্রহ, সিলেটের মানুষের ধর্মবিশ্বাস এবং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ‘ব্রেনওয়াশ’ করা।
তথ্যমতে, সারা দেশে জঙ্গিরা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ ও ‘আনসার আল ইসলাম’ এই দুই সংগঠনের ব্যানারে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে গত ১২ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের এক বিচ্ছিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জঙ্গিকে আটক করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। রাতভর বাড়িটি ঘিরে রাখার পর সকালে তাদের আটক করা হয়। তাদের সঙ্গে আরও তিন শিশু ছিল। সেখানে সিটিটিসি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পায়। ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে সংগঠনটির প্রধানের নামেই জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছিল। দলের প্রধান ইমাম মাহমুদও আটক হন সিটিটিসির হাতে। এর দুই দিন পর ১৪ আগস্ট ওই এলাকা ছেড়ে পালানোর সময় আরও ১৭ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশে দেন স্থানীয় জনতা। তারা সবাই ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য। এর পরদিন ১৫ আগস্ট সিটিটিসি ভারত সীমান্তবর্তী কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম কালাপাহাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
সূত্র জানায়, ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্যরা দুর্গম কালাপাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিত। দলের প্রধান ইমাম মাহমুদ খোঁড়া হওয়ায় তাকে কাঁধে করে বহন করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে তিনি প্রশিক্ষণ দিতেন। কয়েক মাস আগে জঙ্গি দলের সদস্যরা কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের জনবিচ্ছিন্ন ওই স্থান ভাড়া নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর থেকে ওই বাড়ি ও পাহাড়ে জঙ্গি সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিত।
এদিকে চলতি বছরের ৮ মে সিলেট নগরীর বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মায়মুন ওরফে মুমিনসহ চার জঙ্গিকে আটক করে র্যাব। ওই চার জঙ্গি এর আগে কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটেন। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা জানিয়েছিল, তারা দলের প্রধানের নির্দেশে সিলেটে অবস্থান করছিল। সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় তারা প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করছিল। তারা প্রবাসীদের প্রভাবিত করে মোটা অঙ্কের তহবিল সংগ্রহ করছিল। ‘আনসার আল ইসলামের’ সঙ্গে তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র যোগাযোগ ও সমন্বয়েরও চেষ্টা চালাচ্ছিল। পলাতক জঙ্গি নেতা মেজর জিয়ার সঙ্গেও গ্রেফতার হওয়া আবদুল্লাহ মায়মুনের যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ ছিল।
সিলেট বিভাগজুড়ে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। প্রশিক্ষণের জন্য এই দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে বেছে নেয় জঙ্গিরা। এ ছাড়া সিলেটের মানুষ ধর্মপ্রাণ ও অতিথিপরায়ণ হওয়ায় সেই সুযোগও কাজে লাগায় জঙ্গিরা। এ ছাড়া সিলেটের প্রবাসীরা ধর্মীয় কাজ ও প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অনুদান দিয়ে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারুক উদ্দীন বলেন, ‘সিলেটের মানুষ ধর্মপরায়ণ, এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় ধর্মান্ধ উগ্রপন্থিরা। এ ছাড়া দিন দিন আমাদের পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমাদের সন্তানরা পড়ালেখাবিমুখ আর ডিভাইসনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের উগ্রবাদীরা সহজেই ব্রেনওয়াশ করতে পারছে।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বলেন, ‘ভূমি বৈচিত্র্যের কারণে জঙ্গিরা এই অঞ্চলে আত্মগোপনের চেষ্টা করে। এ অঞ্চলে শায়খ রহমান আত্মগোপন করেছিল। আতিয়া মহল কিংবা কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ তারা ফাঁকি দিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘উগ্রবাদে জড়ানোর জন্য ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য এই বয়সের কেউ নিখোঁজ হলে আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে অনুসন্ধান চালানো হয়। প্রয়োজনে সিটিটিসি ও এটিইউর সাহায্য নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে সিলেট নগরীর শাপলাবাগের সূর্যদীঘল বাড়ি থেকে শায়খ আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহল, মৌলভীবাজারের নাসিরনগর ও বড়হাট্টায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সর্বশেষ কুলাউড়ার পূর্ব টাট্টিউলিতে অভিযান চালিয়ে ২৭ জঙ্গিকে আটক করা হয়।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest