পুলিশ সব সময় মানুষের পাশে আছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২৩

পুলিশ সব সময় মানুষের পাশে আছে : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশ সব সময় মানুষের পাশে আছে। যে কোনো দুর্যোগেই পুলিশ পাশে থাকে। পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগেও পুলিশ ভূমিকা রাখে। মানুষের জানমাল বাঁচাবার জন্য নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করে। যেকোনো ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না। এটাই হচ্ছে পুলিশের বড় কাজ যা পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে।

 

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

 

শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ সবসময় মানুষের পাশে রয়েছে। সবসময় জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য কাজ করে যায় বাহিনীটির সদস্যরা। যেকোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে তারা পিছপা হয় না। এটাই হচ্ছে পুলিশের সবচেয়ে বড় ভূমিকা। তাই পুলিশ বাহিনীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। বিশেষ করে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসে বিরুদ্ধে পুলিশে ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল।

 

ওই তিন বছরে বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। প্রায় ৫০০ এর বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। ২৯ জন পুলিশ সদস্যও মৃত্যুবরণ করেছিল। খুব নির্দয়ভাবে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশকে হত্যা করেছে। ওই সময় বাসেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রতিটি সরকারি অফিসেও হামলা করা হয়। এছাড়া সাড়ে ৩ হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ১১টি লঞ্চ পুড়িয়ে ধ্বংস করে। ৭০টি সরকারি ও ৬ ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়। সে সময় পুলিশের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে এই রকম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে রুখে দিয়ে জনগণের নিরাপত্তা দিয়েছেন।

 

‘দুর্ভাগ্য হলো, অনেক পুলিশ সদস্য আগুনে দগ্ধ হয়ে বেঁচে আছেন, কিন্তু কারও চেহারা এতো বিকৃত হয়েছে যে তারা মানুষের সামনে যেতে পারেন না। তবে পুলিশ সেই সময় জীবন বাজি রেখে সকল ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখে দিয়ে জনগণের নিরাপত্তা দিয়েছে। পুলিশ সদস্যরা তাদের জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। অতীতের মতো আগামীতেও কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ বাহিনীকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে।-যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

 

শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের পাশাপাশি আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনী নারী-শিশু পাচার রোধেও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করার জন্য সাইবার পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে।

 

পুলিশকে একটি কমিউনিটি ব্যাংক উপহার দেওয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এর ফলে পুলিশ সদস্যরা সহজেই সেখান থেকে ঋণ নিতে পারেন। সেখান থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ, ঘর-বাড়ি নির্মাণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন।

 

পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি বিভাগে পুলিশের জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। বিভাগীয় শহরে পুলিশের হাসপাতাল তৈরি করে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

 

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক দেশ থেকে পুলিশ বাংলাদেশের পুলিশের কাছে ট্রেনিং নিতে চায় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, গত ১৪ বছরে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নতুন পদ সৃজন করে, জনবল নিয়োগ করেছি। তাছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, এন্টি টেরোরিজম ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ বেশ কয়েকটি রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন ইউনিট, সাইবার পুলিশ সেন্টার, ব্যাটালিয়ন, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, থানা, তদন্ত কেন্দ্র, ফাঁড়ি এবং জাতীয় জরুরি সেবায় ৯৯৯ ইউনিট গঠন করেছি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এরই মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং স্যাংশন যদি না হতো বাংলাদেশ—আমরা এত দিনে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। তারপরও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ২০২০ সালে আমরা উদযাপন করেছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। এই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

 

তিনি বলেন, এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর করেই আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ; যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে স্মার্ট বাংলাদেশ, সেই স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

 

এর আগে সকালে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ এর উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। পরে বার্ষিক পুলিশ প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।

 

এবার বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন খুলনা রেঞ্জের পুলিশ সুপার কাজী মইন উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেন।

 

অনুষ্ঠানে বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে ১৫ জন পুলিশ ও ২ র‌্যাব সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২৫ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ দেওয়া হয়।

 

গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ৫০ জনের হাতে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ তুলে দেওয়া হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

সিলেট সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪

সিলেট সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪