প্রকাশিত: ২:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৬, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজের দেওয়া এক বক্তব্যই কাল হল শেখ হাসিনার। বক্তব্যের জেরেই বাড়লো আন্দোলনের গতি। সেই গতিতে সামনেই দাঁড়াতে পারলেন না তিনি। ছাড়তে হলো ক্ষমতা।
কোটাপ্রথা নিয়ে টানা আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুলাই। শুরুতে এই আন্দোলন অহিংস হলেও তা সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠে ১৫ জুলাই থেকে।
প্রথমে আন্দোলন প্রতিহত করতে নামেন ছাত্রলীগ ও দলীয় সমর্থকরা। পরে নামানো হয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে। নিহত হন ৩ শতাধিক মানুষ।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৪ জুলাই সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?
কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে মর্মাহত ও অপমানিত বোধ করায় স্লোগানে স্লোগানে প্রতিক্রিয়া দেখান শিক্ষার্থীরা।
এদিন রাত ১০টার পর প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ভেতরে জড়ো হয়ে স্লোগান আর বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তারা। পরে রাত ১১টার পর থেকে ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে এসে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে।
কোটার বিরোধিতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতায় তারা টিএসসি ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। মাঝেমধ্যেই স্লোগানে উচ্চকিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রীরাও বিভিন্ন হল থেকে বেরিয়ে যোগ দেন মধ্যরাতের এ বিক্ষোভে।
শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়েও অবস্থান নেন। ঘণ্টা দেড়েক অবস্থান করে রাত ১টার পর ফিরে যেতে দেখা যায় তাদের।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি নও, আমি নই, রাজাকার, রাজাকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। তাদের ক্ষোভ কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ঘিরে।
তবে পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্বের জবাব দেবে ছাত্রলীগ’। সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। সেদিন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিতে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।
১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে।
তবে পরের দিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। পরের তিন চার দিন ধরে চলে সংঘর্ষ। সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা ১৫০ জন হলেও বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ২৫০ এরও বেশি। কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। সরকার পতনের দাবিও সামনে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেসময় আলোচনার জন্য ডাকলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
শনিবার (৩ আগস্ট) থেকে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। জনসমুদ্রে পরিণত হয় এ বিক্ষোভ সমাবেশ।
এদিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে।
তাদের কর্মসূচিতে রোববার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বহু হতাহতের খবর পাওয়া যায়।
‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে মঙ্গলবারের পরিবর্তে সোমবার (৫ আগস্ট) পালনের ঘোষণা দেয় তারা। এতে সারা দেশ থেকে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়।
এসব ঘটনায় রোববার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরের জন্য কার্যকর হবে বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে কারফিউ মানেনি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। বেরিয়ে আসেন রাস্তায়।
এরপর দিন গতকাল সোমবার (৫ আগস্ট) কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সরকার পতনের সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবেশ করেন হাজারো ছাত্রজনতা।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest