লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২৩

লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ

মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন : ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর অভীষ্ট অর্জন দ্রুততর করতেই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’রূপকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এর ভিত্তিমূলে রয়েছে দুটি প্রধান অভীষ্ট। প্রথমত,২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার এবং যা হবে ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

 

দ্বিতীয়ত,বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা,যেখানে দারিদ্র্য হবে দূরবর্তী অতীতের ঘটনা। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার এই লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করতেই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’রূপকল্পে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

 

কারণ,আগের তিনটি শিল্পবিপ্লবের চেয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। সরকার এসব প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আইসিটি খাতের অবদান ২০ শতাংশের বেশি নিশ্চিত করতে চায়।

 

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবে ক্ষিপ্রগতিতে ঘটছে ডিজিটাল রূপান্তরধর্মী পরিবর্তন। এখন সামনে নতুন লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার।‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে স্মার্ট নাগরিক,সমাজ,অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা। শিক্ষা,স্বাস্থ্য,কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি। এগুলো হচ্ছে,স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে এবং এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে।

 

২১০০ সালের ব-দ্বীপ কেমন হবে-সে পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্ম হচ্ছে চালিকা শক্তি,২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে তরুণদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়,দেশ উন্নত হয় এবং উন্নত দেশে স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে যেন তারা স্মার্টলি বাঁচতে পারে। সেই জন্যই এ ব্যবস্থা। এটিকে বাস্তবে রূপ দেবে তরুন প্রজন্ম।

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণের যাত্রা শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আর্থ রিসোর্সেস টেকনোলজি স্যাটেলাইট (ইআরটিএস) প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন, বেতবুনিয়ায় ভূ উপগ্রহ কেন্দ্র,বিজ্ঞান,কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণয়ন,আইটিইউয়ের সদস্য পদ লাভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রযুক্তির একটা শক্ত ভিত্তি দাঁড় করেছিলেন। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন।

 

ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী,টেকসই,জ্ঞানভিত্তিক,বুদ্ধিদীপ্ত এবং উদ্ভাবনী। যেমন স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ওয়ান স্টুডেন্ট,ওয়ান ল্যাপটপ,ওয়ান ড্রিমের উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। এর আওতায় সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

 

ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২২-এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সরকার এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অত্যাধুনিক পাওয়ার গ্রিড,গ্রিন ইকোনমি,দক্ষতা উন্নয়ন,ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং নগর উন্নয়নে কাজ করছে।

 

আগামী ৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ডিজিটাল কানেক্টিভিটি হবে পরবর্তী উন্নয়নের মহাসড়ক। এই মহাসড়ক ছাড়া স্মার্ট সিটি বা স্মার্ট টেকনোলজি কোনোটাই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক এগিয়ে রয়েছে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বিনির্মাণে স্বাস্থ্যসেবা,কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে আমাদেরকে ফাইভজি কানেক্টিভিটির সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে।

 

উল্লেখ্য,স্মার্ট সিটি বলতে এমন এক নগরায়ণকে বুঝায় যেখানে ন্যূনতম পরিবেশগত প্রভাব নিশ্চিত করে কোনো একটি শহরের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য উন্নততর জনবান্ধব সেবা প্রদানে আধুনিক প্রযুক্তিগুলোকে কাজে লাগানো হবে। স্মার্ট সিটিতে অনেকগুলো উপাদান থাকলেও বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটি কাঠামোতে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহণ, জননিরাপত্তা, ইউটিলিটি এবং নগর প্রশাসনসহ মোট ৫টি উপাদান এবং পরিষেবাকে মোটাদাগে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

অন্যদিকে,স্মার্ট ভিলেজ বলতে এমন এক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বুঝায় যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং উন্মুক্ত উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় নাগরিকরা বিশ্ব বাজারে সাথে যোগাযোগের সুযোগ পাবে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিভিন্ন সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে উন্নত করা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বিকাশে স্মার্ট ভিলেজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

 

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে। আমরা বিজ্ঞানমনস্ক,প্রযুক্তিবান্ধব,প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দক্ষ মানুষ তৈরি করতে চাই। যাদেরকে মানবিক ও সৃজনশীল হতে হবে। হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও হিউম্যানওয়ার তিনটির একসাথে মিললেই বিজয়ী হওয়া সম্ভব। এর মধ্যে হিউম্যানওয়ার তথা মানুষকেই আসল ভূমিকা পালন করতে হবে অন্যথায় সব প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও তার যথাপোযুক্ত ব্যবহার সম্ভব হবে না। আর একজন সত্যিকারের মানুষ তৈরির জন্য তাদেরকে কেবল প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুললেই হবে না তাদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবেও তৈরি করতে হবে। হতে হবে আধুনিকতা-মননশীলতা-সৃজনশীলতা-নান্দনিকতা-অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ।

 

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সাফল্য মানুষের মনে প্রযুক্তিনির্ভর যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করেছে। প্রযুক্তিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের অভিগম্যতা ও সাহচার্য, যা স্মার্ট বাংলাদেশের চার স্তম্ভের বাস্তবায়ন এগিয়ে নেওয়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স।

 

শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রমকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন, স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক বিধিমালা প্রণয়ন, রপ্তানির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’নীতি প্রণয়ন ও সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্যবস্থা, আর্থিক খাতের ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এই কমিটি।

 

প্রযুক্তি দ্রুতগামী ট্রেনের মতো। এতে যারা সময়মতো না চড়বে,তারা উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়বে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই ), ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), বিগ ডাটা, রোবটিকস, ব্লকচেইন, থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মতো প্রাগ্রসর প্রযুক্তি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গতিকে ক্ষিপ্র থেকে ক্ষিপ্রতর করছে। এই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

 

তেমনিভাবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ কবলিত বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্তমানে ২৯টি প্রধান প্রধান নদ-নদীর ৫৪টি স্থানে সুনিদির্ষ্ট তথ্য ভিত্তিক ২৪ ঘন্টা ৫ দিন পূর্বে আগাম বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর ফলে অতীতের তুলনায় আগাম বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হার অনেকাংশে কমে আসছে। মোবাইল ফোনে বাংলায় ভয়েস ম্যাসেজ প্রচার করা হয়। বন্যা মৌসুমে যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে ১০৯০ নাম্বারে কল করলে দুর্যোগ বার্তা শোনা

 

‘সবার ঢাকা অ্যাপ’ এর মাধ্যমে নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করেছে সিটি কর্পোরেশন । মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণক্ষম স্মার্ট লাইট স্থাপন এবং ড্রোনের মাধ্যমে বাসা-বাড়িকে সার্ভের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা,অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স এবং আইওটি এর মাধ্যমে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন ৩৩৩ এর মাধ্যমে নাগরিকরা কোনো অভিযোগ করলে সাথে সাথে এর সামাধান করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া সরকারি প্রায় সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা ই-নথি সেবা বিদ্যমান রয়েছে।

 

বিদ্যুৎ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। যা স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম নিয়ামক,বিদ্যুতের আলোতেই আলোকিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশের সকল অর্জন। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৮টিতে উন্নীত হয়েছে। দেশব্যাপী প্রিপেইড/স্মার্ট মিটার স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

 

এর ফলে গ্রহক পর্যায় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের বিড়ম্বনা যেমন লাঘব হচ্ছে অন্য দিকে বিদ্যুৎ অপচয় হ্রাস পাচ্ছে।দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

 

একটি দেশের উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় তেমন উন্নতি হয় নাই। বর্তমানে পরিবহণ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে আরও একধাপ এগিয়ে দেশের ৫০ জেলায় ১০০ মহাসড়কের ২ হাজার কি:মি:উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

এছাড়াও পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র,মেট্রোরেল প্রকল্প,এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প,পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ,দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। কর্ণফুলী নদীর নীচে বঙ্গবন্ধু টানেল ।

 

এসবই স্মার্ট বাংলাদেশেরই নির্দেশক। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার জন্য বুয়েট-এ এরই মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের উন্নয়নের জন্য এগ্রিকালচার,পাওয়ার এবং অন্যান্য সেক্টরের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করা হচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট এগ্রিকালচার তৈরিতে বুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে কাজ করছে। স্মার্ট ভিলেজের অন্যতম উপাদান স্মার্ট এগ্রিকালচার। স্মার্ট এগ্রিকালচার-এর জন্য আইওটি ডিভাইস ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য ন্যানো টেকনোলজি এবং এআই ব্যবহার করে পরিকল্পনামাফিক কতটুকু সার ও ওষুধ দেওয়া লাগবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব। প্রযুক্তি ব্যবহারে আগামী দুই বছরে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব হবে। উচ্চফলনশীল ধান চাষাবাদের মাধ্যমে আগামীতে ধানের উৎপাদন বহুগুণে বাড়াবে। ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে এবং আমদানি না করতে হলে আমাদেরকে কোনো দুঃচিন্তা করতে হবে না।

 

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় দুই লাখ বিদ্যালয়,ভূমি অফিস,হেলথ কমপ্লেক্সকে ফাইবার অপটিকের আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা,বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। ইনকিউবেশন ভবনে একটি স্ট্যার্টআপ জোন,ইনোভেশন জোন,ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন,ব্রেইনস্টর্মিং জোন,একটি এক্সিবিশন সেন্টার,একটি ই-লাইব্রেরি জোন,একটি ডাটা সেন্টার,রিসার্চ ল্যাব,ভিডিও কনফারেন্সিং রুম এবং একটি কনফারেন্স রুম রয়েছে। রফতানি ক্ষেত্রে এটাই হবে সব থেকে বড় পণ্য, যা আমরা রফতানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।

 

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতায় সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিক) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠা,বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতায় সেলফ-এমপ্লয়মেন্ট ও এন্ট্রারপ্রেনিওরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিড) প্ল্যাটফর্ম স্থাপন,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের আওতায় কন্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ও লিংকেজ ল্যাব (সেল) স্থাপন এবং সার্ভিস এগ্রিগেটর ট্রেনিং (স্যাট) মডেলে সরকারি সেবা ও অবকাঠামো-নির্ভর উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

 

‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’রূপকল্পে এর চেয়েও বেশি ক্ষেত্রগুলোকে দক্ষতার দ্বারা পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আওতায় কৃষি,শিক্ষা,স্বাস্থ্যসেবা,বাণিজ্য,পরিবহণ, পরিবেশ, শক্তি ও সম্পদ,অবকাঠামো,বাণিজ্য,গভর্ন্যান্স,আর্থিক লেনদেন,সাপ্লাই চেইন, নিরাপত্তা, এন্টারপ্রেনিউরশিপ, কমিউনিটির মতো খাত প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে এবং প্রতিটি খাত হবে স্মার্ট।

 

স্মার্ট বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে তরুণদের মেধা-প্রজ্ঞা-জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে মানবপুঁজি হিসাবে বিনিয়োগে করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়বে তরুণ প্রজন্ম। বাস্তবায়ন করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। নাগরিক হিসেবে সময় এসেছে প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে ভাবার। দেশ কতটুকু দিয়েছে কিংবা দেয়নি,তা না দেখে কে কতটুকু করলাম,তা ভেবে দেখা দরকার।

 

তরুণরাই আগামী দিনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তারুণ্য একটি প্রবল প্রাণশক্তি যা অফুরন্ত সম্ভাবনা ও বর্ণিল স্বপ্ন দ্বারা উজ্জীবিত থাকে সবসময়। উদীয়মান তরুণ প্রজন্ম এখন দেশের বিরাট এক জনগোষ্ঠী। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আব্দুল কালাম তার সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সামনে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাদের স্বপ্নগুলো হবে বাংলাদেশের স্বপ্ন, তোমাদের ভাবনাগুলো হবে বাংলাদেশের ভাবনা এবং তোমাদের কাজগুলো হবে বাংলাদেশের কাজ।’বর্তমান তরুণদের স্বপ্নে, চিন্তা-চেতনায়, ভাবনা-কল্পনায় এবং কাজ-কর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দেশ ও আপামর জনগণের শান্তি,সমৃদ্ধি ও কল্যাণ।

 

লেখক: সিনিয়র তথ্য অফিসার

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

সিলেট সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪

সিলেট সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪