সিলেট দর্শন

প্রকাশিত: ২:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫

সিলেট দর্শন

2

************
এডভোকেট ওবায়দুর রহমান

সিলেট জেলা। আমরা গর্বিত সিলেটবাসী। প্রখ্যাত ধর্ম প্রচারক হযরত শাহজালাল (রঃ) সহ তাঁর সংগীয় ৩০০ এর অধীক সঙ্গী সহ সিলেট এবং এর আশপাশ এলাকায় প্রচন্ড বৈরী পরিবেশে বীরদর্পে সুদুর আরব সাম্রাজ্য হতে এসে সিলেটে ইসলাম প্রচার করেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে একই কাজ তাঁর সাথীগন ও করেছেন। এজন্য বাংলাদেশে সিলেট একটি প্রসিদ্ধ জেলা। আমরা স্বশ্রদ্ধ চিত্তে এই মুত্বাকিগনকে স্মরণ করি।

এক সময় সিলেট জলা “চা” সমৃদ্ধ একটি জেলা হিসেবে বিখ্যাত ছিলো। কিন্নু ৮০ এর দশক পরে এই সিলেট ৪ টা জেলায় বিভক্ত হওয়ার পর আর এটা বলা যাচ্ছে না। চা বাগানের বিশাল অংশ এখন
মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলায় বিস্তার লাভ করে ফেলেছে। তার পর ও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চা বাগান সিলেটে রয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট,জৈন্তাপুর , কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ থানার সীমান্ত পাহাড়ঘেরা এলাকা বালি ও পাথর সমৃদ্ধ। এটা বলাই বাহুল্য যে সিলেট জেলার এই প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে এখনো সমস্ত দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এটা আল্লাহ প্রদত্ব এক বিশাল নেয়ামত। আলহামদুলিল্লাহ।

সিলেট একটা প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা। বিশেষ করে সমস্ত বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মানুষ স্বপরিবারে লন্ডন প্রবাসী। আমেরিকা কানাডা অস্ট্রেলিয়া সহ অপরাপর দেশসমূহে ও প্রচুর সিলেটের মানুষ রয়েছেন। দেশ অনেক টাকা রেমিট্যান্স পাচ্ছে। সিলেটের সমৃদ্ধির এটা একটি বড়ো উত্স।

আমি এখন সিলেট দর্শন প্রেক্ষাপটে আমার ভাবনায় সংক্ষিপ্তাকারে দর্শনটুক ( Philosophy) তোলে ধরতে পারি কি না।

এ প্রসঙ্গে প্রথমে সিলেটের প্রবাসমূখী মানষিকতার বিষয়ে উল্লেখ করতে চাই।

সুদুর ৫০ দশক হতে প্রথমে সিলেটের মানুষ লন্ডন যাওয়া শুরু করেন। কথিত আছে জগন্নাথপুরের জনৈক গজনফর আলী জাহাজের খালাসি পদে চাকুরীর সুবাদে বৃটিশ মালিকানাধীন ব্যক্তির ভাউচার প্রাপ্তির মাধ্যমে সিলেটের লোকজন লন্ডন যান। এই বিষয়ে যদিও নির্ভরযোগ্য কোনো সত্যতা পাওয়া দূস্কর। যাই হোক ঐ ভাবে সিলেটের অনেক শিক্ষিত,অশিক্ষিত মানুষ লন্ডন চলে যান এবং তাদের ছেলে মেয়েকে বিবাহ দিয়ে ক্রমান্নয়ে লন্ডন সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশসমূহে এর ব্যাপ্তি ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে ৯০ এর দশক হতে এ পর্যন্ত বড় একটা সংখ্যক মানুষ স্হায়ীভাবে ঐ সমস্ত দেশের অভিবাসী হয়ে যান এবং এর ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান আছে। এই পদ্ধতিতে প্রবাসে গমন ছিলো শিক্ষিত অশিক্ষিত ব্যতিরেকে।

সাম্প্রতিক কালো ঐ সব দেশ তাঁর অভিবাসন আইন কঠোর করার পর পুরাতন প্রক্রিয়ায় বেশী সংখ্যক মানুষ তথায় যেতে না পারলে ও ভিন্নভাবে যাত্রা থেমে নেই।
২০০০ দশক থেকে শুরু হওয়া স্টুডেন্ট ভিসায় ঐ সমস্ত দেশে বাংলাদেশের অপরাপর জেলা সহ সিলেটের বিশেষ করে যুবকদের গমন খুব বেশী বেড়েছে। এই পদ্ধতিতে ও সিলেট অগ্রগামী। তার কারন সিলেটের মানুষের একটা ভিত্তি সেখানে আগেই ছিলো। তা ছাড়া নতুন নতুন উদীয়মান দেশ তাদের লোকবলের প্রয়োজনে অভিবাসন আইন শিথিল করে। ফলে টাকা-পয়সা তুলনামূলক স্বচ্ছল সিলেটীরা চোরাই পথে হলে ১৪/১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সেখানে যেতে সক্ষম হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ধর্তব্য বলে মন করি। তা হলো, সিলেট আদিকাল থেকে শিল্পে তেমন উন্নত ছিলো না। এটার কারন হিসাবে সিলেট জেলার ভৌগলিক অবস্হান শিল্প গড়ে উঠার জন্য প্রয়োজনীয় কাচামালের অভাব, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্হা, তৈরী মালামাল বাজারজাত করার অব্যবস্হা, প্রবাসী পরিবারের ছেলেদের ইচ্ছাকৃত বেকার জীবনের অভ্যস্ততা ইত্যাদি অনেক কারন রয়েছে, যার ফলে সিলেটের ছেলেমেয়েদের বিদেশ প্রেম বেড়ে যায় ও দেশে যেনো তেনো কাজ করে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা হতে বিরত থাকে।

আমরা যদি প্রসঙ্গটি টেনে বর্তমান সময়ে নিয়ে আসি, তা হলে কী চিত্র দেখতে পাই। সিলেট লেখাপড়ার দিকে বরাবরই একটু পিছিয়ে ছিলো। এটার অবশ্য অনেক কারন ও তখনকার সময়ে দেখা যেতো। আমার কিছু বাস্তবতা এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন রয়েছে।

1

আমি ৭০ এর দশকের পর বেশ কিছুদিন সিলেটের প্রাক্তন মহকুমার অধীন থানা লেভেলে সরকারী চাকুরীতে ছিলাম। বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, সুনামগঞ্জের ধরমপাশা, দিরাই তাহিরপুর ইত্যাদি এলাকায় চাকুরীর সুবাদে আমি লক্ষ্য করেছি যে, ঐ সব এলাকার ব্যবসা বানিজ্য, লেখাপড়া সবকিছু যোগাযোগ ব্যবস্হার সহজলভ্য হওয়ায় ঢাকামূখী। যেটা সিলেট জেলার বাসিন্ধাগনের পক্ষে আজ ও হয়তো একটু কষ্টকর হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমরা যদি দীর্ঘ পিছন থেকে চেয়ে দেখি তবে আজকের হবিগঞ্জ কিংবা সুনামগঞ্জ জেলার একজন ছাত্র হতে লেখাপড়ার স্ট্যন্ডার্ড এর কারনে সিলেটের ছাত্র একটু পিছিয়ে থাকবেই এবং আজ ও আছে। তাই ত দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারী কর্মচারী কর্মকর্তা সিলেট জেলার বাসিন্ধা তুলনামূলক ভাবে স্বল্প। আজ হয়তো সিলেটে নাধারী অনেক প্রাইভেট স্কুল কলেজ ভার্সিটি গড়ে ওঠেছে, কিন্নু এটা একদিন ছিলো না। তা ছাড়া এই প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধরে ও যদি যুক্তি টানেন ;সেখানে ঢাকা এবং তার আশপাশে গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গুনগত মানে একটু কম মানসম্পন্ন হবেই।
এর একটা বিরূপ প্রভাব সিলেট জেলাবাসীর ওপর পড়ে আসছে। তা হলো চাকুরী ক্ষেত্রে আমরা সিলেটের লোক কম পাচ্ছি। কারনটা ঐ একটাই। ঢাকায় পড়ুয়া একজন ছাত্র সিলেটে পড়ুয়া ছাত্র হতে প্রতিদন্দিতা মুলক ইন্টারভিউতে কম পারঙ্গম হওয়াই সত্য এবং স্বাভাবিক। এজন্য আজ এই সিলেট জেলার ও এর অধীন থানার বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুলিশ বিভাগের লোকজন, বিজ্ঞ বিচারক বিসিএস ক্যাডার হবিগঞ্জ -সুনামগঞ্জ -মৌলবীবাজার জেলার বাসিন্ধাই অধিক। এরই আলোকে আমার আজকের প্রতিপাদ্য বিষয় “আমার দৃষ্টিতে সিলেট দর্শন (Philosophy) বিস্তৃতাকার করা সম্ভব।

উপরোক্ত অবস্হার প্রেক্ষিতে সিলেট জেলা ক্রমে এক মেধাহীন জনমানবে পরিনত হয়ে ওঠতে পারে।
মেধাবী ছাড়া ও এই সুন্দর ঐতিহ্যবাহী জেলার স্হায়ী বাসিন্ধা অধিক হারে প্রবাসে চলে যাবার কারনে এক সময় “সিলেটি বিহীন ” একটা অঞ্চলে পরিনত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনি যা দেখা যায় তা হলো,এখানে বিশাল সংখ্যক পতিত ভূমি পড়ে থাকার কারনে এবং সিলেটে কেহ ইন্ডাস্ট্রি না করার কারনে অপর জেলা হতে তুলনামূলক স্বল্প মূল্যে বড় বড় আকারের ভূমি খরিদ করে তথায় মিল-ফ্যাক্টরী গড়ে তোলার কারনে স্বাভাবিকভাবে উহার কতৃত্ব সিলেটের মানুষের বেহাত হয়ে উঠবে। ফলে কর্মসংস্হানের সুযোগটি তাদের নিজস্ব লোকেরই হবে ; সিলেটের লোকজন সেখানে থাকবে না কিংবা থাকতে পারবে না।

বর্তমান অবস্হার ধারাবাহিকতায় সরকারী বেসরকারী অফিস প্রতিষ্ঠান সমূহে সিলেটের লোকজন পাওয়া দূস্কর হবে। ৩য়,৪র্থ জেনারেশনে চলে আসায় এখন লন্ডন আমেরিকার লোকজনের মৃতদেহ পর্যন্ত দেশে আনা হচ্ছে না। বরং ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা দাদার করা জমি জমা বাসা বাড়ি বিক্রয় করে নগদ টাকা প্রবাসে নিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটেই এখন কম মূল্যে বাড়ি করা জমি কেনা সহজসাধ্য। এখানে এখন বিক্রেতা বেশী,এবং খরিদ্দার কম। সিলেট থেকে কাছের জেলা মৌলভীবাজারে ও জমির মূল্য বেশী। এগুলোর কারন ঐ একটিই।

5

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ত আছেনই। মূল সিলেটি মানুষের বিদেশপ্রীতি এবং কথিত আত্মসম্মানবোধ এখানকার দরীদ্র ও অশিক্ষিত লোকজনকে ও বেকার থাকার মধ্যে দৃশ্যমান। ফলে সমাজের দিনমজুর থেকে শুরু করে মধ্যম আয়ের মানুষজন পাশের জেলা সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ হতে আগমন হু হু করে বাড়ছে।

এই জেনারেশনে একজন আগত মানুষ ভবিষ্যতে সিলেটেই স্হায়ী অভিবাসনকারী হবেন। ফলে সিলেটের আাদি বাসিন্ধা কমবে এবং হিসেব করলে এখনই তা দেখা যায়।

পৃথিবীর অনেক জাতিগোষ্ঠী এভাবে তার নিজ ঠিকানা হারিয়েছে।এটার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। সিলেট শহরের ৩ কিলোমিটার দূরে অর্থাৎ চতুর্দিকে শহরতলী গেলে বিস্তর খালি জমি অনাবাদি পড়ে থকার দৃশ্য দেখা যায়।কিন্তু ব্যক্তি পর্যাায়ে হলে ও ঐ সমস্ত জমিতে পোল্ট্রি ফিসারী নার্সারি মিল ফ্যাক্টরী করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। আর এখানে করবেই বা কেনো। শ্রমিক অটোচালক দারোয়ান কেয়ারটেকার যে সিলেটে কথিত নিন্দনীয় কাজ। করতে হবে ত অন্য স্হান থেকে আগতরা। এটা শুধু আজকের চিত্র নয়। ৫০/৬০ বৎসর আগে ও দেখেছি তখনকার চট্টগ্রম বিভাগের ২/৩টি জেলার মানুষ এসে পুকুর খনন বড় করাত দিয়ে গাছ চিরা মাটি কাটা ইত্যাদি কাজ করতে হয়েছে। কলেবর সৃষ্টির ভয়ে ঐ সব জেলার নাম প্রকাশ করলাম না। তবে আজ ঐ সব জেলার সন্তানেরাই দেশে বড় কর্তা আলহামদুলিল্লাহ। প্রবাসে ইউরোপ আমেরিকায় ও তাঁরা সিলেট হতে কিছু কম সংখ্যায় হলে ও আছেন এবং সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ছেলেরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে ভালো জব করছেন।

সুতরাং সিলেটে এমনটি না হওয়ার কারন শুধুমাত্র রাষ্টর ওপর চাপিয়ে না দিয়ে তাতে ব্যক্তি মহলের অসহযোগিতা কে দায়ী করা সমীচিন হবে।

4

উপসংহারে শুধু একথাই বলা যাবে যে, দেশ থাকবে, মানচিত্র থাকবে। পৃথিবী ব্যাপি সকল দেশের জাতির উন্নয়ন অগ্রতির একটা জোয়ার ভাটা লক্ষ্য করা যায় কিন্তু এই সিলেটের স্মরণকালের আদি বাসিন্ধা তাদের এসব উন্নয়ন অগ্রগতিকে দেশে শোভনীয় না করে প্রবাসে করে ফেলবেন। সন্তানেরা এখনই নিজ বাড়ি সনাক্ত করতে অনেকটাই ব্যর্থ হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে সিলেট একটা সিলেটি বিহীন জেলায় পরিনত হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নহে বলে আমার দৃষ্টিতে সিলেট দর্শন (Philosophy).সমাপ্ত

6

তাং ৩/৭/২০২৩ইংরেজী।

২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার বাংলা ইংরেজি আরবি

২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার বাংলা ইংরেজি আরবি

গুণ গত মান যার ভাল তার দাম একটু বেশি সিলেটের সেরা বাগানের উন্নত চা প্রতি কেজি চা দাম ৪৫০ টাকা হোম ডেলি বারি দেয়া হয়

tree

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

sylhet24

Follow for More!

1
2