পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে সিলেটে ধর্মঘটের ডাক

প্রকাশিত: ১:২০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২২

পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে সিলেটে ধর্মঘটের ডাক

নিউজ ডেস্ক : সিলেটের জাফলং, বিছানাকান্দি ও ভোলাগঞ্জে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও পাথর কোয়ারি পুনরায় চালুর দাবিতে সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পণ্য পরিবহন মালিকরা।

 

পণ্যবাহী পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের দাবি, সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারিগুলো থেকে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই পাথর সরবরাহ করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার সাথে প্রায় ১৫ লাখ ব্যবসায়ী-ট্রাক, পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

 

কিন্তু দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে কোয়ারি বন্ধ থাকায় সিলেটের পণ্য পরিবহন খাত বিশেষ করে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

 

তারা আরো জানান, অধিকাংশ ট্রাক মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে অথবা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে তাদের গাড়ি কিনেছেন। পাঁচ বছর ধরে কোয়ারি বন্ধ থাকার কারণে ট্রাক মালিকদের পণ্য পরিবহণে ভাটা পড়েছে।

 

সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক গোলাম হাদী ছয়ফুল জানান, পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় পরিবহন মালিক শ্রমিকসহ সবাই ঋণের জালে আবদ্ধ। এ নিয়ে বার বার প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং গত ১৬ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবির ব্যাপারে তারা কোনো কর্ণপাত করছেন না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে পাথর কোয়ারি খুলে না দিলে সোমবার থেকে সিলেট জেলায় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হবে।’

 

বৃহত্তর সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার দাবীতে ৩১ অক্টোবর সোমবার ভোর ৬ ঘটিকা হইতে ৪৮ ঘন্টার পণ্য পরিহনে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। কর্মবিরতি পালন উপলক্ষে মালিক-শ্রমিকদের এক যৌথ সভা ৩০ অক্টোবর রোববার দুপুরে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

 

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ দিলু মিয়ার সভাপতিত্বে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদের পরিচালনায় সভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সহ সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজির আহমদ স্বপন, জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন তালুকদার, বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল আমিন, জাফলং স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু, ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সহ সভাপতি সৈয়দ সালেহ আহমদ শাহনাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নুল হক, জৈন্তাপুর বেলচা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলী আকবর, সাধরণ সম্পাদক কামাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম, জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, শ্রমিক নেতা বিলাল আহমদ, আব্দুল মতিন ভিআইপি প্রমূখ।

 

সভায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় দশ লক্ষাধিক মানুষ রোজগার হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সা¤প্রতিক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় বৃহত্তর সিলেটের মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। আয় রোজগার না থাকায় প্রান্তিক এ শ্রমজীবী মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সিলেটের পাথর কোয়ারী সংশ্লিষ্ট এলাকা সমূহে বর্তমানে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এবং দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের এ ক্রান্তিকালে রোজগার বঞ্চিত সিলেটের লাখ লাখ মানুষ।

 

পাথর পরিবহণে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ট্রাক শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শত শত ট্রাক মালিক, স্টোন ক্রাশার মালিক ও ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় দিন যাপন করছেন। অথচ, পাথর কোয়ারী বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে রিজার্ভের ডলার খরচ করে পাথর আমদানী করে উন্নয়ন কাজ চালানো হচ্ছে।

 

ফলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ সংকটে নিপতিত হয়েছে। লাখো মানুষের জীবন রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের ডলার সাশ্রয়ের জন্য সিলেটের পাথর কোয়ারী জরুরী ভিত্তিতে খুলে দেয়া আবশ্যক।