প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ : যেসব পরামর্শ দিলো রাজনৈতিক দলগুলো

প্রকাশিত: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ : যেসব পরামর্শ দিলো রাজনৈতিক দলগুলো

নিউজ ডেস্ক : রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, শেখ হাসিনার বিচারসহ নানা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট। শনিবার (১৯ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই সংলাপে কোনো কোনো দল সংস্কারের পর নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছে।

 

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই সংলাপে অংশ নিয়ে গণফোরাম রাষ্ট্র সংস্কারের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। সংলাপে জুলাই-অগাস্টে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধসহ ২৩ দফা লিখিত প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে দিয়েছে অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।

 

মূলত রাষ্ট্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে নানা আলোচনা হলেও সংলাপে বর্তমানে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি নিয়েও কথা বলেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এছাড়া দলগুলোর পক্ষ থেকে বিগত সরকারের সময় পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া তিনটি নির্বাচন বাতিল এবং আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের বিচারেরে দাবিও তোলা হয়।

 

সংলাপ শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে শিগগিরই সার্চ কমিটি গঠন করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম দফার সংলাপে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এ দফার সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি দলটিকে।

 

এদিন সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো আমাদের প্রয়োজন মনে করেনি, যে কারণে আমাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানায়নি। বিকেল ৩টায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বসে গণফোরাম। সংলাপে দলটি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে উদ্যোগ নেয়া, বিগত বছরগুলো বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত, সংস্কারের পর নির্বাচনসহ নানা প্রস্তাব দিয়েছে।

 

সংলাপ থেকে বেরিয়ে দলের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার যে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তার থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

 

সংলাপে নির্বাচন নিয়ে কী কথা হয়েছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন করতে হবে এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মত কোন সমস্যা না হয়।

 

নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আমরা কোনো তারিখ উল্লেখ করিনি। তবে বলেছি, সংস্কার শেষ অতিদ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য। তবে সংস্কার শেষ নাহলে সব একই হবে। নির্বাচনের আগে থাকি রাম, নির্বাচনের পরে হই রাবণ। ওই ধরনের নির্বাচন কমিশন আমরা চাই না। দলটি দু’একদিনের মধ্যে সংস্কারের লিখিত প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তুলে ধরবে বলেও জানিয়েছে।

 

সংলাপে অংশ নিয়ে এলডিপি জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িতদের বিচারসহ ২৩ দফা দাবি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে। এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ পুলিশসহ প্রশাসনকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে, জনগণের সঙ্গে মুখোমুখি করে দিয়েছে, দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, আমাদের হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে হতাহত করেছে।

 

অলি আহমদ বলেন, আমরা মনে করি, একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তখন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। তাহলে আজকে কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না? আমরা আবার বলেছি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

 

নির্বাচন প্রশ্নে এলডিপি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বলেছি সংস্কার কাজ আরও দ্রুত করতে হবে। সময় কমে যাচ্ছে। সংস্কার শেষে নির্বাচন দিতে হবে। এ ছাড়াও দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার, বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও সরকারের কাছে পরামর্শ দেয় দলটি।

 

গণফোরাম এলডিপি ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই সংলাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, ১২ দলীয় জোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (নুরুল আম্বিয়া-প্রধান), এনডিএম এবং লেবার পার্টি। সংলাপে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয় আন্দালিব রহমানের নেতৃত্বাধীন বিজেপি।

 

বৈঠক শেষে দলটির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বিগত যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সেই অবৈধ নির্বাচন বাতিলে পদক্ষেপ নিতে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেছি। একই সঙ্গে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখা এবং দ্রততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনমূখী সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

 

সংলাপে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ, রাষ্ট্র সংস্কারে কাজের পরিকল্পনা ও নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশসহ ১৮ দফার প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। এছাড়াও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, সংসদের মেয়াদ চার বছর করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয় দলটির পক্ষ থেকে।

 

গত আগস্টে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরীক সব রাজনৈতিক দলের সাথে প্রথম দফায় সংলাপ করে অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওই সংলাপে অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টিও। পরবর্তীতে রাষ্ট্র সংস্কারের গত সেপ্টেম্বরে কমিশন গঠনের পর আরো এক দফা সংলাপে করে অন্তবর্তীকালীন সরকার।

 

এই সংলাপে বিএনপি, জামায়াত, বাম জোট, ইসলামি দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দুর্গাপূজার আগে গত ৫ই অক্টোবর এক দফা সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বিভিন্ন ইসলামি দল ও বাম জোটের দলগুলোর সাথে সংলাপের পর শনিবার বাকি দলগুলোর সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

 

গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাসদ (আম্বিয়া), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টকে ডাকা হয় এবারের সংলাপে। কিন্তু এই সংলাপে ডাকা হয়নি বিগত সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ।

 

এর আগের দফা সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকা নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। সেই কারণেই কী এবার জাতীয় পার্টিকে ডাকা হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটা প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার উনি কাদেরকে ডাকবেন। আগের বার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এবার আমাদের কিছু বলা হয়নি।

 

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, আমাদের যদি না ডাকে আমরা তো জোর করে তাদের বলতে পারি না আমাদের ডাকেন। জোর করে তো পরামর্শ দেয়াও যায় না।

 

সংলাপ শেষে রাতে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে শিগগিরই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে এবং এই সার্চ কমিটি ঠিক করবে নির্বাচন কমিশনার কারা হবে।

 

বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, সরকার তার দল নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে এই সার্চ কমিটি গঠন করবে। সার্চ কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন কমিটি পুনর্গঠনের কাজ করবে।

 

তিনি জানান, পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসময় সরকারের শুরু করা সংস্কার কার্যক্রমও সমান্তরালভাবে চলমান থাকবে বলেও জানান বিশেষ সহকারী।

 

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়েই বেশি কথা হয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

 

আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এককভাবে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

গুণ গত মান যার ভাল তার দাম একটু বেশি সিলেটের সেরা বাগানের উন্নত চা প্রতি কেজি চা দাম ৪৫০ টাকা হোম ডেলি বারি দেয়া হয়

tree

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন