প্রকাশিত: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক : এক তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিতে সারা দেশে তোলপাড়। করেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে কটূক্তি, সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্মমভাবে হত্যার শিকার আবু সাঈদকে।
বিতর্ক সৃষ্টি করে আলোচনায় আসা সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। রবিবার (৬ অক্টোবর) তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে দেখা দিয়েছে অনেক প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন- বড় সুযোগ নেওয়ার জন্য সরকারি চাকরি ছাড়ার উদ্দেশে তাবাসসুম ঊর্মি নিজেই ইচ্ছেকৃতভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। কেন এমনটি করেছেন? এ নিয়ে লিখেছেন তারই সহপাঠী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মেহেদী হাসান মুয়াজ।
তিনি লিখেছেন- ‘‘প্রধান উপদেষ্টাকে অসাংবিধানিক বলা ও শহীদ আবু সাইদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়া বিসিএস ৪০ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে তার উপর বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এত প্রস্তুতি নিয়ে এত কষ্ট করে পাওয়া বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের চাকরিটা খোয়াবেন জানার পরেও কেন তিনি এই ধরনের কাজ করলেন?
হাজার হোক, এই দেশের প্রেক্ষাপটে প্রসাশন ক্যাডারে চাকরি পাওয়া অত সোজা নয়। তিনি ২০১৫ সালে SUST এর সিএসই (২০১০ ব্যাচ) থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর ২০২২ সালে এই চাকরিতে যোগ দেন। অর্থাৎ, পাশ করার পর থেকে প্রশাসনে যোগ দিতে তার সময় লেগেছে ৭ বছর।
আসল কথা হল, এই চাকরি না করার সিদ্ধান্ত তিনি অনেক আগেই নিয়ে ফেলেছেন। তিনি ঠিক করেছেন এই দেশে আর ক্যারিয়ার গড়বেন না। তাই যত দ্রুত সম্ভব তিনি এই চাকরি ত্যাগ করে যাওয়াটা নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন। গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তাকে পাসপোর্ট গ্রহনের জন্য NOC দেয়া হয়। তার মানে তিনি পাসপোর্টের আবেদন আরো আগেই করেছিলেন। এছাড়াও তিনি কয়েকদিন আগে “Higher Study Abroad” গ্রুপে নিজের আইডি থেকে জয়েন করেন।
দ্রুত চাকরি থেকে বের হতে পারার পাশাপাশি বাইরে ভিসা পাওয়া বা প্রয়োজনে অ্যাসাইলাম পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী করতে তাপসী তাবাস্সুম ঊর্মিকে একটু extreme measure নিতে হয়েছে। প্রথমে জনরোষ তৈরী করতে তিনি আবু সাইদকে সন্ত্রাসী বললেন। কিন্তু তার অখ্যাত প্রোফাইলের জন্য সেটা বেশি মানুষের কাছে পৌছায়নি।
পাত্তা না পেয়ে এবার টার্গেট করলেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ও গোটা উপদেষ্টা পরিষদকে। প্রজাতন্ত্রের একজন জুনিয়র কর্মকর্তা হয়ে রাষ্ট্রপ্রধানকে অসাংবিধানিক বলা ও তার বিদায়ঘন্টা বাজানোর ঘোষণা দেয়া সাড়া ফেলতে বাধ্য। তার উদ্দেশ্য সফল হল। দেশের গণমাধ্যম হুমড়ি খেয়ে এই সংবাদ প্রচার করল, ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিল, একদিনের মধ্যে ওএসডি ও ২ দিনের মধ্যে বরখাস্তও হয়ে গেলেন।
এখন কেউ একজন তাকে আক্রমণ করার হুমকি দিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিলেই তিনি সুরসুর করে অ্যাসাইলাম নিয়ে ফ্লোরিডার বিচে হাওয়া খেতে পারবেন। তা না হলেও সমস্যা নেই। স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার ভাল যোগ্যতা তার আছে, Google Scholar এ সার্চ করলে সাস্টে থাকাকালীন তার NLP (Natural Language Processing) এর উপর গবেষণাপত্রগুলো পেয়ে যাবেন।
আশা করা যায়, তাকে আমরা খুব দ্রুত বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকরূপে দেখব, সেজন্য আগাম শুভকামনা রইল। জীবনের লক্ষ্যে পৌছাতে মানুষ অনেক ধরনের পথ বেছে নেয়, কিন্তু তিনি কাজটা এভাবে না করলেও পারতেন।
এখন প্রশাসনের উচিত জুলাই অভ্যুত্থানে তার কি ভূমিকা ছিল এবং ওই সময়ে তিনি কিভাবে তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন তা তদন্ত করা। এছাড়াও প্রসাশনে থেকে গত দুই বছরে তার দুর্নীতির কোন রেকর্ড আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত।’’
সমালোচনায় পড়া লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে রবিবার (৬ অক্টোবর)। এদিন সন্ধ্যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নিলুফা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, রংপুর বিভাগ, রংপুরের ০৬ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখের প্রজ্ঞাপন নম্বর : ০৫.৪৭.০০০০.০০৬.০৮.০০৩.২২.৪০১ মোতাবেক তাপসী তাবাস্সুম উর্মি (পরিচিতি নম্বর-১৯২৮৬), সহকারী কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, লালমনিরহাটকে সহকারী কমিশনার হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, রংপুর বিভাগ, রংপুরে বদলি করায় বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নিমিত্ত ০৬/১০/২০২৪ খ্রি. তারিখ অপরাহ্ণে অবমুক্ত করা হলো।
সোমবার (৭ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নিয়ে তাপসী তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ! কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’
স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পোস্ট দিয়েছি এটাই তো যথেষ্ট। অনলি মি করেছি, বিভিন্ন কারণে হতে পারে।’ পরে তিনি বলেন, এ বিষয় আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
তাপসী তাবাসসুম উর্মির ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। এছাড়া, আওয়ামী লীগের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে বেশকিছু পোস্টও করেছেন। একটি স্ট্যাটাসে তিনি ছাত্র আন্দোলনের নিহত শহীদ আবু সাইদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছেন।
তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি নেত্রকোণা জেলার জেলার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। ঊর্মিররা কেউ গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। তারা দীর্ঘদিন ধরে ময়মনসিংহে অবস্থান করছেন। মাঝে মধ্যে তারা বাড়িতে যান।
এদিকে, চাকরি হারিয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি বলেছেন, ‘আই অ্যাম নট এ হিপোক্রেট। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গা থেকে বলা যায়। এ জন্য যদি চাকরি চলে যায়, এতে আমার কোনো সমস্যা নাই।’
ওএসডি হওয়ার পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি যদি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে না-ও থাকতাম, আমি সেইম কথাটা বলতাম।…আমি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি হতে পারবে না। এটা সম্ভব না। যখন যেই গভর্নমেন্ট আসবে, দুই ধরনের কন্ট্রাডিক্টরি কথা বলবে, একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলবে, আরেকজন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলবে, আমি হ্যাঁ হ্যাঁ করব, এটা হিপোক্রেসি। দুইটা কন্ট্রাডিক্টরি মতে একমত পোষণ করা, এটা হিপোক্রেসি।
নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি উল্লেখ করে ঊর্মি বলেন, আমি যদি দেখি কেউ মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলতে চায়, আমি তার বিপক্ষে কথা বলব।
কীভাবে দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এমন মন্তব্য করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন দেখব, আমার দেশের ওপর কোনো থ্রেট চলে আসছে, দেশকে বাঁচানোর জন্য আমার যতটুকু বলা উচিত, সেই বলাটাই আমার দায়িত্বশীলতা। আমি ফ্র্যাংকলি বলি, আমি চাই না আমার দেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি আসুক। আমার যাকে মনে হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি, আমি তাদেরকে সেভাবেই ট্রিট করেছি এবং সেভাবেই পোস্ট দিয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টার ‘রিসেট বাটন পুশ’ কথার সমালোচনা করে ঊর্মি বলেন, রিসেট বাটন পুশ করা মানে কী? অতীত মুছে ফেলা মানে কী? আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে মীমাংসিত সত্য। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। এগুলো সবই মীমাংসিত সত্য। রিসেট বাটন পুশ করে সব অতীত মুছে ফেলা এটা মানে কী? তাহলে আমি তো মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি এখন গভর্নমেন্টে আছে।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে মনে করেছি, আমার দেশকে বাঁচাতে হবে। এজন্য আমার পক্ষ থেকে যতটুকু বলার, আমি বলেছি। আমি যদি এই পর্যায়ে না-ও থাকতাম, সেইম পোস্ট দিতাম। আমি বাংলাদেশের নাগরিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে বলছি। আমি কোনো দলের পক্ষে বলছি না।
ঊর্মি বলেন, বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে ৩০ লাখ শহিদের ওপর। ৩০ লাখ শহিদের বিনিময়ে আমাদের দেশটা স্বাধীন হয়েছে। রিসেট বাটন পুশ করলে কি ৩০ লাখ শহিদ ফিরে আসবে? চেতনা বিক্রি, ‘গণহত্যা’ এগুলো সবই তদন্ত সাপেক্ষ। এগুলো তো প্রুভড না। কিন্তু যেটা মীমাংসিত সত্য, সেটাকে তো কেউ মুছে ফেলতে পারে না।
এদিকে ওএসডি হওয়ার পর তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির পোস্টটি আর তার ওয়ালে দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ঊর্মি বলেন, পোস্টটি অনলি মি করে রাখা হয়েছে।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest