প্রকাশিত: ৯:৪০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪
বিনোদন ডেস্ক : শেষবারের মতো এফডিসিতে এলেন সালমান শাহ। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে নায়ককে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটল সিলেটের পথে। নায়কের জন্মভূমি। হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ প্রাঙ্গণে হলো দ্বিতীয় জানাজা। সেখানকার কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো সালমানকে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. তেজেন্দ্র চন্দ্র দাস রিপোর্টে লিখলেন- ‘মৃত্যু ফাঁসের দরুন ঝুলিয়া শ্বাসরুদ্ধ হইয়া সম্পন্ন হইয়াছে, যাহা মৃত্যুপূর্ব ও আত্মহত্যাজনিত।’
ওই রাতে মৃতের বাসা থেকে অন্যান্য আলামতের সঙ্গে উদ্ধার হয় আকাশি রঙের প্যাডের একটি ছেঁড়া পাতা। যাতে কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা, ‘আমি চৌঃ মোঃ শাহরিয়ার।…এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আজ অথবা আজকের পরে যে কোনো দিন আমার মৃত্যু হলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি।’ প্যাডের ওপরে ইংরেজি হরফে বড় করে লেখা ‘সালমান শাহ’। হস্তলিপিবিশারদ নিশ্চিত করেন, হ্যান্ডনোটটি সালমানেরই লেখা।
সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা মানতে পারেননি স্ত্রী সামিরা। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। নায়কের বাসায়ও শাবনূর আসতেন মাঝেমধ্যে। বিষয়টি ভালো চোখে দেখতেন না সামিরা।
পিবিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের জুলাই নাগাদ মৃত্যুর দুই মাস আগে সালমানের হাতে ছিল ২৭টি সিনেমার কাজ, বেশির ভাগেই তার সহশিল্পী শাবনূর। অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে। শুটিংয়ের সময় শাবনূরকে নিয়ে সালমান শাহ বিভিন্ন স্থানে থাকতেন।
সালমানের বাসার কাজের মেয়ে জরিনা বেগম আদালতে জানান, সামিরা চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় শাবনূর দুই দিন সালমানের বাসায় আসেন। একদিন সারা রাত ছিলেন, অন্যদিন চলে যান রাত ১২টার দিকে। সামিরা চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এ নিয়ে জরিনাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সত্যিটাই জানিয়ে দেন।
যত দিন যাচ্ছিল এ নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছিল সালমান-সামিরার দাম্পত্যে। এমনকি সালমানের মৃত্যুর আগের রাতেও এ নিয়ে ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে। তার আগে সন্ধ্যায় এফডিসিতে গিয়ে সামিরা দেখেন, ডাবিং রুমে সালমান ও শাবনূর ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসে আছেন। রাগ করে বেরিয়ে আসেন সামিরা।
শাবনূরের সঙ্গে ছেলের এ সম্পর্কে পূর্ণ সমর্থন ছিল সালমানের মা নীলা চৌধুরীর। তিনি চাইতেন, শাবনূরের সঙ্গে সালমানের আবার বিয়ে দেবেন। শাবনূরকে বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে রাখতে চাইতেন সালমানও।
৯ দিন পরে আবার তোলা হলো সালমানের লাশ। কারণ সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর লিখিত এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রমনা থানায় যে অপমৃত্যুর মামলাটি হয়, তার তদন্তে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সালমানের পরিবার। আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখায়।
১৫ সেপ্টেম্বর সালমানের লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। পাশাপাশি চলতে থাকে আলামত সংগ্রহ ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ।
সালমানের মৃত্যুর পরের বছর ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে ডিবি যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়, তাতেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় ‘আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু’। এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির আবেদন করেন সালমানের বাবা। পুনঃতদন্তের আদেশ দেন আদালত।
সালমান শাহ যে আত্মহত্যা করতে পারেন, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না নায়কের পরিবার। তাদের দাবি ছিল, হত্যা করা হয়েছে সালমানকে। সালমানের মা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন, সামিরাসহ ১১ জনের যোগসাজশে সালমানকে চেপে ধরে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় ইলেকট্রিক তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্রমাণ মিলছিল না।
থানা-পুলিশ ও ডিবির তদন্তে যখন বেরিয়ে আসছিল সালমানের মৃত্যুর একটাই কারণ—আত্মহত্যা, তখন একটি ঘটনা মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয় অন্যদিকে।
এবারো সিআইডি রিপোর্ট ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে সালমানের মৃত্যুর আগের কারণটাই বহাল থাকে— আত্মহত্যা। তবে সিআইডির রিপোর্টে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উঠে আসে চিত্রনায়িকা শাবনূরের নাম।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest