প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২৪
মো. সায়েম ফারুকী : কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, হঠাৎ তা মোড় ঘুরে পতন ঘটাল বাংলাদেশ সরকারের। পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা বাধ্য হলেন দেশ ছাড়তে। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী যেমন আলোচনার সৃষ্টি করেছে, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টির নানাদিক বিচার-বিশ্লেষণ করছে ভারত সরকারও। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের অবস্থা, সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে ভাবনার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকার পতনের নেপথ্যে কোনো ষড়যন্ত্র ছিল কি নাÑ ইত্যাদি সবদিক নিয়েই সরকার ও বিরোধী দলগুলোর ভাবনার বিষয়টি উঠে এসেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বদলীয় বৈঠকে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় বৈঠক করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংসহ অনেকে। এছাড়া বিরোধীদল কংগ্রসের নেতা রাহুল গান্ধী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রাও অংশ নেন বৈঠকে।
বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি এবং পরিস্থিতি ঘিরে সম্ভাব্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভারত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে সব দলের নেতাদের অবহিত করেন জয়শঙ্কর।
এদিন আলোচনার শুরুতেই সরকারের তরফে বিরোধী দলকে জানানো হয়, বর্তমানে ভারতে থাকা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী কেন্দ্র। গোটা পরিস্থিতিতে তাকে কিছুটা সময় দিতে চায় সরকার। বিরোধী শিবিরও অবশ্য এই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একমত। এমনকী সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও বিরোধী শিবিরের সঙ্গে কথা হয় সরকারের।
বিরোধী দল কংগ্রসের নেতা রাহুল গান্ধী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে জানতে চানÑ এই ঘটনার পেছনে বাইরের কোনো শক্তির হাত রয়েছে কি নাÑ ঘটনায় পাকিস্তানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার না করলেও সে সম্ভাবনা যে রয়েছে, তা অস্বীকার করেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অন্যদিকে সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা না হলেও সম্প্রতি ভারতীয় এক গোয়েন্দা রিপোর্টে শেখ হাসিনার পতনের পেছনে এমন ষড়যন্ত্রের দাবি করা হয়েছে। জানা গেছে, ছাত্রদের সামনে রেখে পুরো পরিকল্পনা সাজিয়েছে পাকিস্তান। এমনকি এই ঘটনায় যোগ রয়েছে চীনেরও। মূল উদ্দেশ্য, ঢাকায় ভারতবিরোধী পুতুল সরকার বসিয়ে নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশকে পরিচালিত করা। এই কাজের জন্য চলতি বছরের শুরুতেই ব্যাপক আর্থিক সাহায্য পেয়েছিল আইএসআই সমর্থিত জামায়াতে ইসলামী। এই টাকার একটি বড় অংশ এসেছিল পাকিস্তানে পরিচালিত চীনা সংস্থাগুলো থেকে বা সরাসরি বেইজিং থেকে। এমনকি ইসলামী ছাত্র সংগঠনের বেশকিছু সদস্যকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ট্রেনিংও দেওয়া হয়।
চীনের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল শেখ হাসিনার। চীনের সংশ্লিষ্টতা কেনÑ এ প্রশ্নে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে চীনের অনেক অবদানের পরও প্রতিবেশী বন্ধু ভারতকেই বরাবর অগ্রাধিকার দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বেইজিংয়ের চাপ থাকলেও ভারতবিরোধী শক্তিগুলোকে প্রশ্রয় দেননি শেখ হাসিনা। বেইজিং চাইছে, ঢাকায় ভারতবিরোধী পুতুল সরকার বসিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করা।
গতকালের সর্বদলীয় বৈঠকে পতন-ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাহুল গান্ধী। এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান কী হতে চলেছে সেটাও জানতে চান রাহুল গান্ধী।
রাহুল গান্ধীর প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রয়েছে আমাদের। পরিস্থিতি এখনো টলমলে। ক্রমাগত রূপ বদলাচ্ছে। কাজেই দেখেশুনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, সে দেশের কোনো কোনো এলাকায় ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। বর্তমানে সেখানে ২০ হাজার ভারতীয় রয়েছেন। যার বেশিরভাগই পড়ুয়া। এদের অশান্ত বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনাই এখন সরকারের মূল লক্ষ্য।
বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সে দেশে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্ভবত গঠিত হতে চলেছে। কাজেই ভারতের দুটি পরিকল্পনা করে রাখা উচিত। একটি মাঝারি মেয়াদের, অন্যটি দীর্ঘ মেয়াদের।
বৈঠক শেষে শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, বাংলাদেশে যাই ঘটুক, তার প্রভাব ভারতের ওপর পড়ে। সেখানে নৈরাজ্য দেখা দিলে ভারতের পক্ষে তা মঙ্গল হতে পারে না।
গতকালের বৈঠকের আগে গত সোমবার রাতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রিন্সিপাল সচিব পিকে মিশ্র, ‘র’-এর প্রধান রবি সিনহা এবং গোয়েন্দা বিভাগের (আইবি) পরিচালক তপন ডেকা। বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিষয়ে মোদিকে অবহিত করা হয়।
পদত্যাগের পর গত সোমবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা ভারতে পৌঁছান। দিল্লির উপকণ্ঠ গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে তার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান তপন ডেকাও। শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব কতটা মাথাচাড়া দিয়েছে, সে বিষয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান অজিত ডোভাল।
সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই হাসিনাকে আপাতত ভারতে না রেখে বাইরে কোথাও পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে বার্তা দিয়ে দেন ডোভাল। যদিও যতদিন না অন্য কোথাও তার নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত ভারতেই থাকবেন তিনি। এরপর গতকালের সর্বদলীয় বৈঠকে জয়শঙ্করের মন্তব্য থেকে মনে করা হচ্ছে, লন্ডন যাত্রার দিনক্ষণ হয়তো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
লেখক : দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সম্পাদক ও প্রকাশক
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest