নোয়াখালীর সেই ইয়াসমিন পাচ্ছেন হুইল চেয়ার ও কৃত্রিম পা

প্রকাশিত: ৩:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২৪

নোয়াখালীর সেই ইয়াসমিন পাচ্ছেন হুইল চেয়ার ও কৃত্রিম পা

ইয়াসমিন আক্তার। ছবি সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক : এক পায়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে প্রতিদিন ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে নিয়মিত কলেজে যান নোয়াখালীর সদর উপজেলার ড.বশির আহমদ কলেজের ছাত্রী ইয়াছমিন আক্তার (২০)। দেড় বছর বয়সে এক পা হারিয়ে এমন রূঢ় বাস্তবতা নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ১৯টি বছর।

 

গত ৩০ মার্চ দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ-এর নোয়াখালি প্রতিনিধি মো: আব্দুল্লাহ চৌধুরীর করা প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই যুক্তরাজ্য ব্যুরো চিফ এ কিউ চৌধুরী মুরাদের দৃষ্টিগোচর হয়। তাই রূপালী পরিবারের পক্ষ থেকে এবং  ব্যুরো চীফের সহযোগিতায় প্রথমে হুইল চেয়ার দেয়া হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

 

এ প্রসঙ্গে এ কিউ চৌধুরী মুরাদ বলেন, আমরা শুধু সংবাদ প্রকাশ করতে চাই না। মানবিক আবেদনেও সাড়া দিতে চায় রূপালী বাংলাদেশ পরিবার। আমরা সকলে মিলে যদি ইয়াছমিনের ঠোঁটে হাসি ফোটাতে পারি; তাহলে এটাই আমাদের সার্থকতা।

 

২০০৫ সালের ঘটনা। মা শিশু ইয়াছমিনকে বিছানায় রেখে পাশের বাড়ি থেকে পানিতে আনতে যান। তখন চৌকির পাশে থাকা চেরাগ থেকে মশারিতে আগুন ধরে যায়। ওই আগুনে ইয়াছমিনের দুই পা দগ্ধ হয়ে যায়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়। পায়ের রগ পুড়ে অপর পা অনেকটা শীর্ণ হয়ে যায়।

 

এরপরও উদ্যম ইচ্ছা শক্তিতে প্রথমে ভর্তি হন স্থানীয় পশ্চিম গাংচিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে  গাংচিল কবি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে প্রথমে স্থানীয় গাংচিল বাজারে যান। পরে সেখান থেকে গাড়ি করে বাড়ি থেকে সাড়ে ১৩ কিলোমটিার দূরে কলেজে ক্লাস করছেন নিয়মিত । তিনি বর্তমানে ড. বশির আহমদ কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগে পড়ছেন। আবার বাড়ি ফিরতেও তাকে হাঁটতে হয় দেড় কিলোমিটার পথ। এভাবে ব্যয়ে চলেছেন জীবনের ভার। বছরে ৫ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী সরকারি ভাতা পান। কিন্তু সরকারের এ সহযোগিতা একেবারেই অপ্রতুল।

 

হুইল চেয়ার ও কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপনের সংবাদে আনন্দে উচ্ছসিত ইয়াছমিন আক্তার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমি কি যে খুশি হয়েছি, তা বলতে পারবো না। এই খবর শুনে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ এবং সুদূর লন্ডন থেকে একজন সহানুভূতিশীল মানুষ আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে। এজনৗ আমি কৃতজ্ঞ। দীর্ঘ ১৯ বছর যে কষ্ট আমি করেছি। সেই কষ্টের অবসান হতে যাচ্ছে। আমি পা পাবো; আমার পা। (কান্না)।

 

ইয়াছমিনের বাবা নুরনবী আনন্দে কান্না করে বলেন, আপনারা আমার মেয়ের পা দিচ্ছেন; আপনাদের কাছে কিছু চাই না।

 

এর পূর্বে গত ৩০ মার্চ দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে ইয়াছমিন আক্তার বলেন, অনেক কষ্ট করে আমি লেখা পড়া করছি। পড়া লেখা শেষ করে আমি শিক্ষক হতে চাই।

 

সবার সহযোগিতায় একটি কৃত্রিম পা সংযোজন হলে আমার স্বপ্ন পূরণ সহজ হবে। ইয়াছমিনের এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।