উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২

উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ

মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন : উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আজ বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মুখে শোনা যায় আজ বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা। সম্ভাবনার এ স্বর্ণদূয়ার উন্মোচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন অতীতের ঐতিহ্য সুরক্ষা, বর্তমানের সফল পথচলা এবং ভবিষ্যতে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অকুতোভয় ও বিশ্বস্ত কান্ডারি।

 

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অভিযাত্রায় একের পর এক লক্ষ্য অর্জনের সফলতা দেশের অগ্রযাত্রায় এক একটি মাইল ফলক। এ যেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিয়েছি আকাশ পানে চেয়ে” ।

 

প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে সরকার সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করে একটি পক্ষপাত মুক্ত ন্যায় ভিত্তিক মানবিক সমাজ বিনির্মানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার দারিদ্র্যমোচন, সার্বজনীন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তাসহ দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করে ২০৩০ এ এসডিজি এবং ২০৪১ এ দারিদ্র্য শূন্য উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে।

 

সরকার ইতিমধ্যে মানবিক উন্নয়ন সূচকে টেকসই ক্রমোন্নতিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে,যা দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্হা সৃষ্টির লক্ষ্যে পদ্মা সেতুসহ অনেকগুলো বড়ো বড়ো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর সুবিধা জনগণ পাচ্ছে। এ সেতুর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতকে সহজ করার লক্ষ্যে অনেকগুলো বড়ো বড়ো নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যায়ক্রোমে জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে এবং হবে। আগামী অক্টোবর মাসে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু উদ্ভোদন করা হবে। আগামী ডিসেম্বরে বহু কাঙ্ক্ষিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য উদ্ভোদনের কথা রয়েছে। ঢাকায় মেট্রোরেল নগরবাসিদের জন্য ডিসেম্বরে উন্মুক্ত করার সময় নির্ধারিত আছে।

 

এছাড়াও এমন কোন জেলা উপজেলা নেই যেখানে সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ,কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে না। সরকার দেশের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্হা তৈরির মাধ্যমে জনগণের সময় বাঁচিয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় ২৬ টি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। স্ববলম্বী, উদ্যামী যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ইতিমধ্যে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুসারে বাংলাদেশের ১৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম জনবলের (৫৯ বছর পর্যন্ত) সংখ্যা ১০ কোটি ২৬ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ০৯ লাখেরও বেশি এবং মহিলা ৫ কোটি ১৭ লাখেরও বেশি।

 

এ বিপুল জনসংখ্যাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ,যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি, শ্রম ও কর্মসংস্থান, সমাজ কল্যাণ,মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে।

 

সরকার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কৃষি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যশস্য সংগ্রহ,সংরক্ষণ এবং সরবরাহ ব্যবস্হা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য প্রাপ্তি সহজলভ্য করেছে এবং করছে। পুষ্টি বৈষম্য দূর করার জন্য নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নাগরিকের সুস্বাস্থ্য এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার ‘ স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়নের কৌশলপত্র ২০১২-২০৩২’ প্রণয়ন করেছে। এই কৌশলপত্রের আলোকে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারীদের চিকিৎসা সেবার অর্থায়ন কৌশলের অংশ হিসেবে ‘ স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় কার্ডধারী প্রতিটি পরিবার হাসপাতালে আন্তঃ বিভাগীয় সেবা গ্রহণকালে ৭৮ টি রোগের জন্য রোগ নির্ণয় ও ঔষধসহ যাবতীয় চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২২ হাজারেরও বেশি সদস্য এ সেবা গ্রহণ করেছে। ক্রমান্বয়ে কর্মসূচিটি সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে।

 

নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনার ফলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার অনেক কমেছে।সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার -২০১৮ এর অঙ্গীকার অনুযায়ী শহরের সকল সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘ আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সরকার স্হানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ব্যয় করবে।পরিবেশ সুরক্ষার অপরিসীম গুরুত্বকে বিবেচনা করে সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাস্তবসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার অনুসরণকে বাধ্যতামূলক করেছে। সরকার জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে এ বিনিয়োগের অর্থায়ন করা হবে। জাতির পিতা সংবিধানের ১৫(ঘ)অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সমাজিক সুরক্ষা বিধানের ব্যবস্হা নিশ্চিত করেছিলেন।

 

সতাঁর হাত ধরেই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি শুরু হয়েছিল সেটা এখন বর্তমান সরকারের আমলে জীবনচক্রনির্ভর ব্যাপক কর্মসূচিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৯ শতাংশ পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং সমাজের দুর্বল অংশগুলোকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য দুর্যোগ প্রবণ এলাকা,দরিদ্রতম এলাকা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতের মতো বিষয়গুলি বর্তমানে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণে সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

 

এই মহাপরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণে আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা পূরণের জন্য ইতিমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং হবে। দেশে এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ লক্ষ্যে সরকার ইতিমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করছে। সরকার দীর্ঘমেয়াদি ব-দীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও ভূমিহীন দরিদ্র মানুষকে আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে জমির মালিকানাসহ বসবাসের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে এটি একটি চলমান কার্যক্রম।

সরকারের নীতি হচ্ছে ‘ সমগ্র সমাজ দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রহণ যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে। সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী ও যুবাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান যাতে তারা দেশের মূল অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ নির্মাণে উন্নত জাতি গঠনই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য।

পিআইডি ফিচার