আড়ালে গডফাদাররা সিলেটে ভয়ংকর সব অপরাধে সক্রিয় একাধিক কিশোর গ্যাং

প্রকাশিত: ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪

আড়ালে গডফাদাররা সিলেটে ভয়ংকর সব অপরাধে সক্রিয় একাধিক কিশোর গ্যাং

নিউজ ডেস্ক : কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সক্রিয় গোটা সমাজ হুমকির মুখে সারাদেশের মতো সিলেটেও বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সক্রিয় রয়েছে একাধিক কিশোর গ্যাং। কথিত বড় ভাইদের ছত্রছাত্রায় গড়ে উঠা এসব গ্যাং ছিনতাই,চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে খুন সহিংসতায়ও এদের সম্পৃক্ত রয়েছে। বিশেষ করে সকাল বিকেল সন্ধারাতে পাড়া মহল্লাগুলোকে অস্থির করে রাখছে এসব অপরাধীরা। এতে করে নাগরিক সমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আর পুলিশের কর্তারা বলছেন এ বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

 

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, এই গ্যাং সদস্যদের মধ্যে কারো বাবার আছে অঢেল অর্থ সম্পদ। টাকা হাতে থাকায় তারা দ্রুত গ্রুপ তৈরী করে দাপট দেখান। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান করে ছাত্রীদের উত্যক্ত করা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক সেবন, ছিনতাই, তির জুয়া, মারামারি, নতুবা গ্রুপিং রাজনৈতিক নেতাদের মিছিল মিটিং লোক ভারী করা “কিশোর গ্যাং’র মূল নেশা। এই কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে অসংখ্ গডফাদার। পর্দার আড়ালে থেকে রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে গডফাদাররা কিশোর গ্যাং দিয়ে মস্তানি, চাঁদাবাজি এবং এলাকা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটাচ্ছে। একেকটি ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নড়েচড়ে বসে। অল্প কিছুদিন পর আবারও সেই আগের অবস্থায় চলে যায়। বিভিন্ন সময় “কিশোর গ্যাং’র সদস্যরা আইনের আওতায় আসলেও এর নেপথ্যের গডফাদাররা আড়ালে রয়ে গেছে।

 

সিলেট নগরীর ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকার কয়েকটি বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের হাতে দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। এরপর পুলিশ ও র‍্যাব সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ১০-১২ জনকে আটক করে। এরপর এলাকা ছেড়ে তারা পালিয়ে গিলেও সম্প্রতি তারা আস্তানা গেড়েছে মেডিক্যাল এলাকায়। মাদক, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত। ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি। সিলেট পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা থামাতে এসএমপি’র ছয়টি থানায় তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টি তাদের নজরদারিতে রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি টহলও বাড়ানো হয়েছে। তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। সিলেট নগরের তাতিপাড়া গলির মুখে, লামাবাজাির গলির মুখে একাধিক খুনের সঙ্গেও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সম্পৃক্ত প্রকাশ পায় ইতো মধ্যে। এরকম নানা ঘটনায় কিশোর গ্যাং এর উৎপাত ক্রমশই বাড়ছে।

 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিনা চৌধুরী বলেন, কিশোর অপরাধ নির্মূলে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সন্তানরা কোথায় যায় এবং অনলাইনে তারা কোন বিষয়ে যুক্ত হচ্ছে সেটি নজরদারিতে রাখার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক ছায়ায় উঠতি বয়সের কিশোররা সহিংসতাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার (ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিন) জেদান আল মুসা জানান, সব থানার ওসিদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বিপথগামী এসব কিশোর গ্যাংকে শুধু প্রতিরোধ করলেই হবে না, এদের মূলধারায় সুস্থ জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনাও এক বড় চ্যালেঞ্জ। কিশোরদের বিপথগামী হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের উদাসীনতা সব থেকে বড় কারণ। এ ছাড়াও নৈতিক শিক্ষার অভাবও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। তাই এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমাদের বিকল্প পথ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও কঠোর অবস্থান জরুরি বলে মনে করেন সিলেটের সংশ্লিষ্টরা।