চার বছর পর নিয়োগ বাতিল: বহু নারীর গর্ভপাতের যন্ত্রণা আর পারিবারিক গঞ্জনার দায় কার

প্রকাশিত: ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪

চার বছর পর নিয়োগ বাতিল: বহু নারীর গর্ভপাতের যন্ত্রণা আর পারিবারিক গঞ্জনার দায় কার

নিউজ ডেস্ক : আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ করে নিয়োগ বাতিল করায় ৭ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

 

সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে  সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরে করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

 

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী  বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমরা বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা–বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। আমার বাবা–মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়া–লেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে একবেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো একদিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি ৩–৪টা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া–টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’

 

‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ চাকরিতে শর্ত আছে বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পর করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয় তখন গর্ভের বয়স ছয়মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা–মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবোরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। গত পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’

 

তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’

 

অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

 

৩ লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে গত ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

 

পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েক জন।

 

হাইকোর্টে রিট
পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্য সচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

 

চার নিয়োগ প্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এ রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

 

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া  বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’

 

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মত ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগ প্রত্যাশীদের।’

 

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এরা (পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতি মৃত্যু ও শিশু মৃত্যু কমাতে পেরেছে সরকার। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয় তাহলে ভাইভা নিলে কেন? রিটেনে গন্ডগোল তাহলে তখনই বাতিল করত। তার প্রশ্ন রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’

 

একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’

 

জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ে আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এর পর স্বামী–সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা যদি বাচ্চা কনসিভ করি আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’

 

পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই–এর পর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে, হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভার দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরি প্রার্থীরা নেব?’

 

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’

 

চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবোরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরী ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবোরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’

 

জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা করেছেন। তাদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’