হকার আর যানজট, সিলেটের দুই যন্ত্রণা

প্রকাশিত: ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪

হকার আর যানজট, সিলেটের দুই যন্ত্রণা

নিউজ ডেস্ক : বেদখল হয়ে আছে সিলেট নগরের বেশিরভাগ ফুটপাত। ফুটপাতে পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা। সড়কের অনেকাংশও তাদের দখলে। ফলে পথচারীদের হাঁটাচলারও সুযোগ নেই। এ ছাড়া নগরজুড়েই লেগে থাকছে ভয়াবহ যানজট।

 

হকারদের উপদ্রব আর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং যানজট আরও বাড়িয়ে তুলছে।হকার আর যানজট—এই দুটিই এখন হয়ে উঠেছে সিলেট নগরবাসীর প্রধান যন্ত্রণা। এই দুই যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না কিছুতেই। বরং দিনদিন আরও তীব্র হচ্ছে।

 

একাধিক নগরবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্বে থাকাকালে ফুটপাত হকারদের দখল থেকে মুক্ত করতে ও অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড উচ্ছেদে কিছু তৎপরতা চালান। তবে এতে খুব একটা সফলতা মেলেনি।

 

গত জুনে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের আগ মুহূর্ত থেকে হকারদের উপদ্রব আরও বেড়ে যায়। আর সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর রীতিমত হকারদের দখলেই চলে গেছে নগরে বেশিরভাগ ফুটপাত ও সড়ক।গত ৭ নভেম্বর দায়িত্ব নেন আনোয়ারুজ্জামান। এরপর হকার উচ্ছেদে সিটি করপোরেশনের আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

 

হকারদের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরের বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কে। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের অনেকাংশ ও দুইপাশের ফুটপাতের পুরোটাই হকারদের দখলে। ফলে এই সড়ক দিয়ে পথচারীদের হাঁটাচলার কোন সুযোগ নেই। এ ছাড়া সবসময়ই লেগে থাকে তীব্র যানজট।

 

জিন্দাবাজার এলাকায় সড়কের মধ্যে শীতের কাপড় বিক্রি করা ময়েজুল ইসলাম বলেন, দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই। তাই সড়কেই পণ্য নিয়ে বসেছি। এখানে বসার জন্যও অনেককে চাঁদা দিতে হয়।তিনি বলেন, কেবল হকারদের কারণে নয়, মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কারণেও এই সড়কে যানজট হয়। কারণ এখানকার বেশিরভাগ মার্কেটের পার্কিং প্লেস নেই। মার্কেটে আসা গাড়িগুলো সড়কেই পার্কিং করা হয়। ফলে সব সময় যানজট লেগে থাকে।

 

এই দুর্ভোগ লাগবে ২০২১ সালে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ওই বছরের জানুয়ারিতে নগরভবন লাগোয়া লালদিঘির পাড়ের খোলা মাঠে হকারদের জন্য অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণ করে সিসিক। প্রাথমিক অবস্থায় নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে পুনর্বাসন করা হয় ওই মার্কেটে।

 

তবে দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেস্তে গেছে হকার পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ। সিসিক নির্মিত অস্থায়ী মার্কেটে আর বসেন না হকাররা। উল্টো নগরের ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কেরও বহুলাংশও দখল করে রেখেছেন তারা। ফলে দিনভর নগরে লেগে থাকে যানজট।

 

নগর ঘুরে দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, লামাবাজার, সোবহানীঘাট, উপশহর, শিবগঞ্জ, মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি যানজট হয়। এসব এলাকায় দিনভর যানজট লেগে থাকে।

 

নগরবাসীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সড়ক হকারদের দখলে চলে যাওয়া, সড়কের ওপরে গাড়ি পার্কিং, বেশিরভাগ বিপণি বিতানের পার্কিং প্লেস না থাকা, সড়কে চলা সংস্কার কাজের কারণেই নগরে যানজট এমন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়া স্কুল কলেজ ছুটির সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে যানজট লেগে যায়।

 

ব্যাংক কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, পাঁচ বছর আগেও সিলেটে এমন যানজট ছিল না। হঠাৎ করে গত কয়েক বছরে সিলেটে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।তিনি বলেন, এই সময়ে সিলেটের সড়কগুলো অনেক প্রশস্ত করা হয়েছে কিন্তু তাতে যানজট না কমে আরও বেড়েছে। এখনই যানজট নিরসনে পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে সিলেটও ঢাকার মতো স্থবির হয়ে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

 

নগরে হকারদের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে হকারদের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিষয়টা আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ করতে শুরু করেছি। হকার নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সাথে আলোচনা হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, বিষয়টির সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। রাজপথে হকার থাকার কারণে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। ইনশাল্লাহ আগামী একমাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। সিলেটের রাজপথ অবশ্যই হকার মুক্ত করতে বা রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছু করা হবে।

 

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে একবার লালদিঘীর পাড়ে সিসিকের মালিকানাধীন জরাজীর্ণ মার্কেট ভেঙে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে পুনর্বাসন করা হয় সেখানে। প্রত্যেক হকারের জন্য ৭ ফুট বাই ৩ ফুট জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এই উদ্যোগে সুফলও পাওয়া যায়।

 

তবে কিছুদিন যেতেই ফিরে আসে পূর্বের অবস্থা। আবার বেদখল হয়ে যায় ফুটপাত। সিটি করপোরেশনের নজরদারি কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে নগরকর্তাদের অভিযোগ, হকারদের সিন্ডিকেট আর পুলিশের অসহযোগিতার কারণে পুনর্বাসনের উদ্যোগ কার্যকর করা যায়নি।

 

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, হকার উচ্ছেদ, ফুটপাত দখলমুক্ত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। হকারদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে উচ্ছেদ করেও লাভ হবে না। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

 

তিনি বলেন, নগর থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ ও যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ এবং সড়ক থেকে হকারদের সরাতে পারলে যানজট অনেকখানি কমে আসবে। এজন্য জনগণকেও সচেতন হতে হবে।