প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক : অত্যন্ত মর্যাদার আসন সিলেট-১। জননন্দিত, বহুল আলোচিত, দেশব্যাপী প্রশংসিত। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল-ই সিলেট সফর করে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার জেয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। দেশবাসীর কাছে প্রচারণা রয়েছে সিলেট-১ আসনে যে প্রার্থী বিজয়ী হন, তাঁর দল-ই বাংলাদেশে সরকার গঠন করে। কথাটি কী অমুলক? দেখা গেছে, বিগত ৩টি সাধারণ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থীরাই এ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন এবং আ’লীগ-ই সরকার গঠন করেছে।
২০০৮ সালের নবম ও ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন এবং পর পর দু’টার্ম তিনি অর্থমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী হন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সহোদর, খ্যাতনামা কুটনীতিবিদ ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনিও বিজয়ী হন এবং সরকার গঠন করে আ’লীগ তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করে।
সময়ের আবর্তনে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারও নৌকার মাঝি হয়েছেন ড. একে আব্দুল মোমেন। যদিও তার মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলেন আ’লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের রাজপথ কাঁপানো সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি আর স্বতন্ত্রের তকমা নিয়ে প্রার্থীতায় থাকেন নি।
দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কাগজে-কলমে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ফিজা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল (ফিজা বাবুল) কে জাপা সিলেট-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ফিজা বাবুল নির্বাচনে মনোনয়নপত্র কিনেও শেষ পর্যন্ত দাখিল করেন নি। অথচ গত জুনে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তিনি ৫০ হাজারেরও বেশী ভোট পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, সিলেটের রাজনৈতিক সৌহার্দ্য ও স¤প্রীতির কথা বলে তিনি আ’লীগ প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেন-এর সম্মানে প্রার্থী হননি বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. একে আব্দুল মোমেনসহ সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন মোট ৫ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় সবাই দলীয় প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সম্মিলিত মুক্তিজোটের প্রার্থী আব্দুল বাসিত, প্রতীক পেয়েছেন ছড়ি, এনপিপির প্রার্থী ইউসুফ আহমদের প্রতীক আম, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফয়জুল হক পেয়েছেন মিনার এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. সোহেল আহমদ চৌধুরীর রয়েছে ডাব প্রতীক।
এ পর্যায়ে নিজের দলের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনী ময়দানে না থাকায় অনেকটা নির্ভার ছিলেন আ’লীগের নৌকার প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেন। কিন্তু তাঁর মতো ভিআইপি প্রার্থীর পিছনেও আঁটার মতো লেগে রয়েছে আম প্রতীক। ন্যাশন্যাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী ইউসুফ আহমদ দিন-রাত পরিশ্রম করে সিলেট-১ আসনে ভোটারদের নজর কেড়েছেন।
কেড়ে নিয়েছেন কিছু ভোটারের সহানুভূতি। পেশায় তিনি একজন সাবান বিক্রেতা। দোকানে দোকানে গিয়ে সাবান বিক্রি করেন বড় বাক্স লাগানো একটা মোটর সাইকেলে করে। এ সুবাদে তিনি চষে বেড়ান পুরো নগরি। নগরির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে ঘুরে সাবান বিক্রির পাশাপাশি চালান নির্বাচনী প্রচারণাও। করেন লিফলেট বিতরণ। আর একই সাথে ভোট চান সর্বস্তরের ভোটারের কাছে।
তাঁর এই ব্যতিক্রমী প্রচারণায় শহর জুড়ে জনমনে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে প্রচারণা করতে দেখে কয়েকটি টিভি চ্যানেলও তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে বা তার নির্বাচনি প্রচারণা ফলাও করে প্রচার করেছে। আর এভাবেই তিনি চলে এসেছেন সাধারণ ভোটারের ভোট ভাবনায়। আ’লীগ বা নৌকা বিরোধী অনেক ভোটার তাঁর প্রতি অনুরক্ত হচ্ছেন। দেখাচ্ছেন সহানুভূতি। হয়তো ভোট দিতেও পিছপা হবেন না।
নুর ইসলাম নামে সিলেট-১ আসনের একজন ভোটার বলেন, ‘হাজার কোটি টাকার সম্পদশালী প্রার্থীদের চেয়ে খেটে খাওয়া গরীব ইউসুফরা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য অনেকাংশে ভাল। কারণ হাই প্রোফাইল প্রার্থীদের কাছে যেতে আমাদের অনেক ঘাট ধরে যেতে হয়। তাও সহজে পাওয়া যায় না। কিন্তু ইউসুফ আহমদের মতো প্রার্থীদের সাক্ষাৎ পাওয়া দুস্কর নয়। শেষ পর্যন্ত হয়তো আমি আম প্রতীকেই ভোট দিতে পারি।’
ইউসুফ আহমদের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘আমি একজন গরীব, খেটে খাওয়া মানুষ। আমার টাকা-পয়সা নাই, আমি বিত্তবানও না। তাই আমার সাথে প্রচারনায় কাউকে পাই না। তবে নিজে নিজেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর এ সুবাদে গত কয়েকদিন থেকে যেখানেই যাই না কেন, সেই এলাকার অনেক ভোটার স্বেচ্ছায় আমার সাথে প্রচারণায় নেমে যান। অনায়াসে আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছেন। তাদের এই ভালবাসা ও সহযোগিতায় আমি অভিভূত।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest