আদর্শের বাতিঘর মোহাম্মদ আবদুল মুমিত : ফারজানা মৃদুলা

প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০২৩

আদর্শের বাতিঘর মোহাম্মদ আবদুল মুমিত : ফারজানা মৃদুলা

ফারজানা মৃদুলা : “তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে” তারা হলেন বাবা, মা, শিক্ষক। এ.পি.জে আবদুল কালাম এর এই উক্তির রেশ নিয়ে আজ শুরু করতে ইচ্ছে হলো।

 

মানুষ গড়ার কারিগর, শিক্ষক হলো জাতির আলোরবর্তিকাবাহী। এককথায় বলা যায় ভবিষ্যতের রুপকার, এমন একজন রুপকার হলেন, প্রকৃতি কন্যা সিলেটের স্বনামধন্য প্রাচীন বিদ্যাপীঠ রাজা জি. সি. উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল মুমিত।মুমিত শব্দের অর্থ মৃত্যুর উর্বর, এই মহান ব্যাক্তি তার নামের মাহাত্ন্যটির রেশ রেখে চলছেন প্রতিটি পদক্ষেপে জীবনের।

 

১৯৭৭ সালের ২৪ জুন সিলেট বিয়ানীবাজার উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের সনদহীন মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোহাম্মদ আবদুল হাফিজ, এবং তাছলিমা দম্পত্তির ঘর আলো করে ১ম সন্তান আবদুল মুমিত। দুইভাই আর তিন বোনের সংসারে বড় হয়ে নিজের সেই দায়িত্ব কখনোই হেলা করেন নি।১৯৯২ সালে গোবিন্দ শ্রী দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করে, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৯৪ সালে রাজনৈতিক বেড়াজালে পড়ে এইচ.এস.সি অকৃতকার্য হয়ে যান। তবে হাল ছাড়তে নাছোড়বান্দা মুমিত ১৯৯৫ সালে সফলতার সাথে এই যাত্রা পাড় হন। ১৯৯৭ সনে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে।

 

মনের ইচ্ছে লেখাপড়া আরো চালিয়ে যাবার ,সেই ইচ্ছে থেকে মুরারিচাঁদ কলেজে মাষ্টার্স এ ভর্তি হন কিন্তু সেইখানে বাঁধ সাধলো রাজনৈতিক অস্থিরতা, কাঙ্খিত সেই চুড়ান্ত সনদ লাভ করা হলো না। যদিও মা-বাবার ইচ্ছে চিকিৎসক হবেন কিন্তু রাজনৈতিক জটিলতায় কারণে অবশেষে নিজেকে নিয়োজিত করেন মহান শিক্ষাকতার পেশায়। এরমাঝেই ২০০৮ সনে দারুল ইহসান ইউনির্ভাসিটি, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে বিএড প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন সফলতার সাথে। শিক্ষার কোন শেষ নেই এই কথা মনেপ্রানে বিশ্বাস করে আসছে সেই ছোটবেলা থেকে, তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই বর্তমানে উমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এম.এড. শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আছে।

 

২০০৪ সনে বানীগ্রাম-বহরগ্রাম হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক (বিএসসি) হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। দীর্ঘ দশ বছর শিক্ষকতা করে তিনি ২০১৪ সনের জানুয়ারিতে সিলেটের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ রাজা জি.সি হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। একই প্রতিষ্ঠানে তাঁর নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতায় নীতি আদর্শের সম্মান জানিয়ে স্কুল কতৃপক্ষ ২০১৮ সনের জানুয়ারি মাসে তাঁকে বিধি মোতাবেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দান করেন। তিনি বর্তমানে রাজা জি.সি. উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবেই কর্মরত আছেন সুনামের সাথে। পেছন থেকে চলার পথে সবসময়ই অনুপ্রেরণা দেন জীবনসঙ্গী কামরুন নাহার এবং ব্যাক্তি জীবনে সফল দম্পতির ২ পুত্র সন্তান।

 

নিজের দিক থেকে সবসময়্ন চেষ্টা করে কিছু ভালো কাজে নিজেকে নিয়েজিত করতে। সেই ভাবনাকে পুঁজি করে শিক্ষক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পেশাগত দাবী-দাওয়ার প্রশ্নে সোচ্চার ও সংগ্রাম-বান্ধব নিবেদিত প্রান। তার এমন সচ্ছ ভালোবাসা ও কর্মস্পৃহার উপহার হিসেবে ২০১৮ সনে তাঁর উপর সিলেট জেলা বাশিসের (বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি) সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ২০২০ সনে তিনি সিলেট মেট্রোঃ জেলা স্কাউটসের কমিশনার নির্বাচিত হন। ২০২১ সনে তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। অক্লান্ত পরিশ্রমে সৎ আদর্শের সাথে পরম ভালোবাসা মিশ্রিন করে গড়ে তুলছেন ছাত্রদের। এর বিনিময়ে কোন প্রতিদান নয় বরং চান নীতি ও নৈতিকতার প্রসার ঘটিয়ে ছাত্রদের বিবেককে জাগ্রত করতে। সমাজ সংস্কার, অশিক্ষা অগ্রগামী হয়ে সোনার মানুষ গড়ে তুলতে প্রতিনিয়ত ছুটে চলছে বিরামহীন ভাবে এই মানুষটি।

 

শুভ্রতার প্রতিক সাদা রংটি যার প্রিয় রং এবং এই শিক্ষক ছাত্রদের মধ্যে নিজের চঞ্চলতাকে খুজে পায়। তিনি মনে করে শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই নয়, শিক্ষকদের থেকে যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা অর্জন করে আগামীর প্রজন্ম দেশকে মুক্তির আলো দেখাবে। শ্রদ্ধা জানাই এই সকল পথপ্রদর্শকদের। আবদুল মুমিতের মত আদর্শের বাতিঘর গুলো যেন ছড়িয়ে পড়ুক এই সোনার বাংলাদেশে।