প্রকাশিত: ১:৩৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২৩
মোহাম্মদ ছয়েফ উদ্দিন : আমি গ্রামের ছেলে। কুশিয়ারা নদী তীরের গ্রামে আমার জন্ম। শৈশব কেটেছে গ্রামে। পুরোনো দিনের গ্রামীণ সমাজ একদম কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। তাই আজও মনোদর্পণে ভেসে ওঠে অতীতের অনেক স্মৃতি। বলা হয়, ‘যায় দিন ভালো যায়’। বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে বাক্যটির অনেকাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
আমাদের গ্রামের অদূরে কুশিয়ারা নদীর অপারে আছিরগঞ্জ বাজার। খেয়া পার হয়ে বাজারে যেতে হয়। সপ্তাহে দু’দিন, শনি ও মঙ্গল হাট বসে। আগেকার দিন হাটবারে সওদা কিনতে বাজারে যাওয়ার খুব প্রচলন ছিল। শত শত লোকের উপস্থিতিতে জমজমাট বেচা-কেনা চলতো। হ্যাঁ। সেই আশির দশকের কথাই বলছি। মাছ-মাংস, তরি-তরকারি, ধান-চাল, জামা-কাপড়, আসবাবপত্র-তৈজসপত্র, শুকনো খাবার ইত্যাদি সবই হাটে বিক্রি হতো। এলাকাটি বিদ্যুতায়ন ছিলনা বিধায় হিমায়িত খাদ্য সামগ্রী বেচা কেনার প্রচলন ছিল না। বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের নির্ধারিত গলি ছিল। দুধ বিক্রির গলিতে স্থানীয় জাতের গাভীর বিশুদ্ধ দুধ যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যেতো। মোরগের গলিটি ছিল প্রসারিত। গৃহপালিত শতাধিক হাঁস-মোরগ বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসা হতো। বিবাহ অনুষ্ঠানে চাহিদাকৃত রোস্টের মোরগ সহজে ও সুলভ মূল্যে ক্রয় করা যেতো। গৃহপালিত ছাগল, ভেড়া ও গরু বিক্রী হতো।
পরিতাপের বিষয়, ঐ হাটে দুধ বিক্রীর গলিটি আজ আর নেই। বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহু আগে। গ্রামে পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন নেই। তাই হাটে দুধের গলি থাকবে কীভাবে? মোরগের গলিটি নামমাত্র টিকে থাকলেও স্থানীয় জাতের মোরগ সহজলভ্য নয়। এ হাটে আজকাল ছাগল, ভেড়া ও গরু চোখে পড়েনা। বর্তমানে বাজারটি এর অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। হাটবারে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি ও পণ্য সামগ্রী সরবরাহ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এতদঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। ফলে ক্রেতারা চলে যান শহরে কিংবা দূরবর্তী কোনো বাজারে কেনাকাটা করতে। তাই আছিরগঞ্জ বাজারটি এর পূর্ণ যৌবন ধরে রাখতে পারেনি।
আমরা প্রায়ই হাটে যেতাম। সওদা কিনে পড়ন্ত বিকালে কিংবা সন্ধ্যার পর বাজার থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরতাম। খেয়া পার হয়ে কুশিয়ারা নদীর তীর দিয়ে নির্মিত গ্রামীণ মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে চলতাম। হাতে বাজার ব্যাগ। বেশ ভারি বটে। খানিক পর পর হাত বদল করতাম। কোনো কোনো দিন দু’হাতে দু’টি ব্যাগ থাকতো। হাত বদলের সুযোগ ছিল না। তাই কিছুক্ষণ পর পর ব্যাগদ্বয় ভূ-পৃষ্ঠে রেখে জিরিয়ে নিতাম।
রাস্তা দিয়ে চলছি। কখনো একাধিক সহযাত্রী। সন্ধ্যার পর গৃহিনীরা উনুনে রান্না বসিয়েছেন। মাছ ভাজার ‘চেত্ চেত্’ শব্দ কানে ভাসছে। ইলিশ মাছের তরতাজা ঘ্রাণ নাকে লাগছে। দু’চার বাড়ি পর পর একই ধরনের ঘ্রাণ অনুভব করতাম। ‘ইলিশ মাছ ভাজা হচ্ছে। পরিচিত সুঘ্রাণ’। আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম। আমাদের ঘরে প্রায়ই ইলিশ মাছ রান্না করা হতো। বর্ষা মৌসুমে ঐ হাট থেকে আমি কত ইলিশ কিনেছি, তার ইয়ত্তা নেই। ৫০-৬০ টাকা দরে মাঝারি আকারের প্রতিটি ইলিশ কেনা যেতো। বর্তমানে প্রতি কেজি ইলিশের খুচরা মূল্য হাজার-পনেরোশ’ টাকা। ভোক্তাগণ ক্রয় করছেন ঠিকই। কিন্তু স্বগৃহে রান্না করলেও এর ঘ্রাণ নেই বললেই চলে। স্বাদও আগের মতো নেই। তাহলে ইলিশের স্বাদ ও ঘ্রাণ গেলো কই?
আগেকার দিনে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে কুশিয়ারা নদীতে যথেষ্ট ইলিশ ধরা পড়ত। মাছ ধরে জেলেরা স্থানীয় বাজারে নিয়মিত বিক্রী করত। বাজারে হিমায়িত ইলিশ পাওয়া যেতো যথেষ্ট পরিমাণে। স্থানীয় অপেশাদার লোকেরা নৌকা বেয়ে জাল দিয়ে ইলিশ শিকার করত। তখনকার দিনে নদীতে মওসুমী ইলিশ মাছ শিকার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। নদী তীরে যাতায়াতে ইলিশ শিকারের এসব দৃশ্য কতো দেখেছি! স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে আজও। বর্তমানে এ অঞ্চলে নদী জলে ইলিশ মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে! সারাদিন জাল বেয়ে ইলিশ মাছ ধরা রীতিমতো দুষ্কর।
ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ঐরষংযধ রষরংযধ. এর তিনটি প্রজাতি রয়েছে। দেহ বর্ণ ঝরষাবৎ-যিরঃব. তাই ইহাকে রূপালী ইলিশ বলা হয়। এর পৃষ্ঠদেশ সবুজাভ। বড় আকারের ইলিশের ওজন আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়। ইহা সামুদ্রিক মাছ। তবে প্রজননের জন্য রূপালী ইলিশ স্বাদু পানিতে চলে আসে। ইলিশের ডিম কিংবা ইলিশ ভাজি বড় সুস্বাদু।
অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও নিউজিল্যান্ড এর মাঝামাঝি প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত প্রায় ৪০০০ মিটার গভীর অঞ্চলকে বলা হয় ‘পয়েন্ট নিমো’। আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’র ভাষা এর আরেক নাম মহাকাশ যানের কবরস্থান। বিভিন্ন সময় এ অঞ্চলে আঁচড়ে পড়ে রকেটের ধ্বংসাবশেষ। অন্তত ২৬০টি মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ এখানে নিমজ্জিত রয়েছে মর্মে জানা যায়। সম্প্রতি চীনা রকেট লং মার্চ-৫বি’র ধ্বংসাবশেষ গত ৯ মে ২০২১ খ্রি: নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী পয়েন্ট নিমোতে না পড়ে এটি পতিত হয় ভারত মহাসাগরে। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে রকেট নির্মাণ করা হয়। নানা ধরনের ধাতব ও রাসায়নিক পদার্থ রকেটের ধ্বংসাবশেষের সাথে সমুদ্র জলে মিশে যাচ্ছে। তাছাড়া সমুদ্র পৃষ্ঠে চলে ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া। ভূভাগ থেকে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তু, রাসায়নিক বর্জ্র ইত্যাদি পদার্থ অহরহ সমুদ্রজলে পতিত হচ্ছে। ফলে সমুদ্র জল দূষিত হচ্ছে। তাই সামদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন হুমকির সম্মুখিন। সুতরাং সমুদ্রজল দূষণরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। সমুদ্র জল দূষণে হউক আর যে কারণেই হউক এর স্বাদ, গন্ধ ও সহজলভ্যতা আগের মতো নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।লেখক : কলামিস্ট।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest