নগীরতে ক্রমশ বেড়েই চলেছে পণ্যের দাম বাজারে আগুন : পুড়ছে সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ, মে ২৭, ২০২৩

নগীরতে ক্রমশ বেড়েই চলেছে পণ্যের দাম বাজারে আগুন : পুড়ছে সাধারণ মানুষ

মো. আবু বক্কর : মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘোটক। জীবনধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সব মিলিয়ে কাঁচাবাজারের লাগামহীন মূল্যে নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত। সবজি কেনা এখন দুরূহ ব্যাপার।

 

সিলেট নগরীতে ক্রমশ বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কমছে না মাছ-মাংস, সবজিসহ মসলার দামও। একই অবস্থা মুদি দোকানেও। প্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে বেশ বিপাকে রয়েছেন সাধারণত ক্রেতারা। বুধবার সকালে সিলেট নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকান গুলোতে শাকসবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বেশ বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, মরিচসহ অন্যান্য কাঁচা পণ্য। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিলো ৪০ টাকা। ৪৫ টাকা কেজি দরের আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। ২০ টাকা বেড়ে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। ধনিয়া পাতা ২০০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা, গাজর ৯০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা ও পেঁপে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

সিলেটের বাজারে প্রতি কেজি আদা ৩০০-৩৫০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০-৯০, কাঁচামরিচ ২০০-২২০ এবং প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আদা, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম, আলু ও মাছ-মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে এসব পণ্যের দাম। বিশেষ করে ফার্মের মুরগির ডিম ৫০ টাকা হালি এতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের শাকসবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-১০ টাকা। আদা, আলু, কাঁচামরিচ ও ডিম রের্কড দামে বিক্রি হলে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। সাদা ককের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা। গত সপ্তাহে ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

তবে ফার্মের মুরগির ডিম হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছ ও মাংসের বাজারও চড়া। এক কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৭০ টাকা ও খাসির মাংস ৯৫০-১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা দরে। ছোট সাইজের চিংড়ি ৭০০-৭৫০ টাকা ও দেশি ট্যাংরা মাছ ৬০০-৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নগরের লাল বাজার গরুর মাংস কিনতে আসা ক্রেতার সাথে আলাপ কালে । তিনি শুভ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাসায় মেহমান আসবেন। তাই রোস্টের মোরগ ও গরুর মাংস কিনতে এসেছি। তবে মাংসের যে দাম তাতে বাজেটে টান পড়ছে।’

 

তিনি বলেন, ‘যে রোস্টের মোরগ (সোনালি) দুই সপ্তাহ আগেও ২২০ টাকা পিস কিনেছি তা আজ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ টাকা কেজি গরুর মাংসের দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫০ টাকা। দেশি মোরগ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি।’

 

নগরের অন্যতম কাঁচাবাজার বন্দরবাজর এলাকায় বাজার করতে আসা নানু মিয়া শুভ প্রতিদিন কে বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে। এতে আমাদের মতো মানুষ বিপাকে আছে।’

 

চালিবন্দর সবজি বিক্রেতা আমির আলী শুভ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ সপ্তাহে সব ধরনের শাকসবজির দাম দাম একটু বেড়েছে। বেশি দামে পাইকারি বাজারে কিনলে খুচরা বাজারেও আমাদের দাম বাড়াতে হয়। দাম বাড়ানো-কমানো আমাদের হাতে নেই।’

 

ব্যবসায়ি আলমগীর হোসেন শুভ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আলু, পেঁয়াজ, আদা ও ডিমের দাম প্রায় প্রতিদিনই ৪-৫ টাকা করে বাড়ছে। চিনির বাজারও অস্থির। বাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দামই সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। এর ব্যতিক্রম না মসলার বাজারও।

 

কয়েক দিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজি প্রতি ২০০- ৩০০ টাকার মতো বেড়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায়। যা গত এক মাস আগেও ছিল ৫৫০-৬৫০ টাকা।

 

গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি জিরার দাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা। যা এখন ৮০০ থেকে ৮৬০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু খুচরা বাজার এবং মুদি দোকানে এই জিরা ৯০০ টাকায় বিক্রি হতেও দেখা গেছে। ইদানিং মসলা জাত পণ্যের মধ্যে দাম বাড়ার তালিকা শীর্ষে আছে দেশি ও আমদানি করা আদা। আর বাজারে দাম বাড়া পণ্যের দিক থেকে পেঁয়াজকে হার মানিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জিরা।

 

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে যত ধরনের জিরা আছে তা বেশির ভাগই আমদানি করা হয়। চাহিদা বাড়া বা বাজারে জিরার সংকটের চেয়ে জিরার দাম বাড়ার পেছনে আন্তর্জাতিক বাজার ও ডলারের দামকে বেশি দায়ী করছেন তারা। পাশাপাশি ভারত থেকে বেশি দামে জিরা আমদানি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ায় জিরার আমদানি আগের থেকে অনেক কমে গেছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে জিরার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

 

গরম মসলা গত মাসে আগে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি করতেন ৫৫০-৬০০শ টাকায়। এখন এই মসলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০-৮৫০ টাকা। তিনি একশ গ্রামের প্যাকেটে জিরা বিক্রি করছেন ৮৫ টাকা দরে।