সিলেটের সেই অস্ত্রধারী ক্যাডাররা কোথায়?

প্রকাশিত: ৯:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪

সিলেটের সেই অস্ত্রধারী ক্যাডাররা কোথায়?

৪ আগস্ট ছাত্র-জনতাকে দমনে সিলেটে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্যাডাররা। ছবি: মাহমুদ হোসেন

 

অনলাইন ডেস্ক : গত জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রংপুরে প্রকাশ্যে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার রক্তের ফোঁটা যেন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে, উত্তপ্ত হয় সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ক্যাম্পাস।

সিলেটেও বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলন ক্রমশ বিস্তৃত হয়; ছড়িয়ে পড়ে মহানগর থেকে উপজেলা এমনকি গ্রামীণ জনপদেও।

 

এ আন্দোলন দমনে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয় সেসময়কার শেখ হাসিনার সরকার। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে মাঠ দখলের নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনার পর ৪ আগস্ট বিকেল ৪টায় সিলেটে পুলিশের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের দমনে রাজপথে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন সংগঠনের ক্যাডাররা। সেদিন ‘সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন’ বাস্তবায়নে অবস্থান কর্মসূচি ছিল ছাত্র-জনতার।

 

তাদের কর্মসূচি ঠেকাতে নগরের প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্টে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে জড়ো হন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের শত শত সশস্ত্র ক্যাডার। সেদিন অত্যাধুনিক সব ধরনের অস্ত্রের মহড়া দেখা যায় সিলেটে। নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় ক্যাডাররা। নগরের কোর্ট পয়েন্ট ছাড়াও জিন্দাবাজার পয়েন্ট, চৌহাট্টা আম্বরখানা পয়েন্টে দেখা গেছে অস্ত্রের ঝনঝনানি।

 

আন্দোলন চলাকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ওইদিন ‘টিম-এ’ কুখ্যাত ক্যাডাররা বন্দুক, রিভলবার, পিস্তল, এম-১২-সহ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে হামলা চালায় ছাত্র-জনতার ওপর। ‘টিম-বি’ কুখ্যাত ক্যাডাররা রাম দাসহ বিভিন্ন ধরনের ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়।

 

ছবি: মাহমুদ হোসেন

ছবি: মাহমুদ হোসেন

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজনের ভাষ্য, সেদিন অস্ত্রধারীদের লক্ষ্য একটাই ছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঠেকানো। তাতে যত লাশ পড়ুক, তাতে তাদের ভ্রুক্ষেপ ছিল না। সেদিন পুলিশের একটি অংশের ভূমিকাও ছিল মারমুখি। দলীয় ক্যাডাররা অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলি চালানোর সময় যেন সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

 

সেদিন আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চড়াও হওয়া প্রসঙ্গে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ করেন, দুপুর গড়ানোর আগেই আন্দোলনকারীদের ওপর কোনো কারণ ছাড়াই চড়াও হয় পুলিশ। শুরু হয় বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে কোর্ট পয়েন্ট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতা পিছু হটে; আহত হয় বহু মানুষ। এর খানিকবাদেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কোর্ট পয়েন্টের দখল নেয়। এসময় জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টায়ও দেখা যায় সশস্ত্র মহড়া।

 

অনেকে বলছেন, সেদিন যে অস্ত্রের মহড়া হয়েছিল, সিলেটবাসী অতীতে এমনটা দেখেননি। আর কখনো সিলেটের রাজপথে প্রকাশ্যে এত অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে কাউকে মহড়া দিতে দেখা যায়নি। কখনো এমন ভয়ংকর অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কেউ সিলেটের রাজপথে নামেনি।

 

আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মহড়ায় ছিলেন যারা
ওইদিনের অস্ত্রধারীদের নিয়ে এখনো তুমুল আলোচনা চলছে সিলেটে। এর মধ্যে একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র দেখা গেছে রুহুল আমিন শিবলু নামে একজনের হাতে। কারও মতে তার হাতে থাকা অস্ত্রটি ‘একে-৪৭’, কারও মতে ‘এমআর-১৬’, কেউ মনে করেন, এর চেয়েও ভয়ানক কোনো অস্ত্র হতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটির মডেল নিশ্চিত করা যায়নি। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার লোগাওয়ের বাসিন্দা এবং লন্ডন প্রবাসী শিবলুকে ওই অস্ত্র হাতে ব্যাপক ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে সেদিন। তিনি পালিয়ে যাওয়া সিলেট নগরীর মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর শিষ্য বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 

ছবি: মাহমুদ হোসেন

ছবি: মাহমুদ হোসেন

 

এছাড়া কোর্ট পয়েন্টে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যে মহড়া চলে, সেখানে দেখা যায় নাজমুল ইসলাম, রাহেল সিরাজ, কিশওয়ার দিলোয়ার, নাঈম আহমদ, চিহ্নিত সন্ত্রাসী আফতাব হোসেন খান, তার সহযোগী পাঙ্গাস আলী, কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর, কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, দেবাংশু দাস মিঠু, মিঠু তালুকদার ওরফে ভাগনে মিঠু, পীযূষ কান্তি দে, অরুন দেবনাথ সাগর, বিক্রম কর সম্রাট, সজল দাস অনিক, দেলোয়ার হোসেন রাহি, হাবিবুর রহমান হাবিবসহ অনেককে।

 

এদের মধ্যে পীযূষের সঙ্গে থাকা তার সহযোগীর হাতে ছিল বহুল আলোচিত দো-নলা বন্দুক। শটগান হাতে দেখা যায় যুবলীগ নেতা জাহেদকে। মুনিম অখিলি, সজল দাশ অনিক, শান্ত, টিলাগড়ের আলোচিত ভয়ঙ্কর অস্ত্রবাজ আনসার, এমসি কলেজের দেলোয়ার হোসেন রাহী, সরকারি কলেজের রুহেল আহমদ, নাজন আহমদ, ছাত্রলীগের তানভীর, কাশ্মির গ্রুপের সৈকত চন্দ্র রিমী, গৌরাঙ্গ দাশকেও সশস্ত্র অবস্থায় দেখা যায়। তারা সেদিন ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

 

যাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না, তাদের সবার হাতে ধারালো রামদা, জিআই পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। সবাই মারমুখী ছিলেন আন্দোলনকারীদের দমনে।

 

আজাদুর রহমান আজাদ, রনজিত সরকার, জগদীশ দাস, বিধান কুমার সাহার মতো পুরনো ক্যাডাররা তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও নির্দেশনায় ছিলেন।

 

৪ আগস্টের আগের দিন ৩ আগস্টও নগরের মদীনা মার্কেট ও পাঠানটুলায় একইভাবে সশস্ত্র মিছিল করে ক্ষমতাসীনদের ক্যাডাররা। কিন্তু তাদের কাউকে পুলিশ-প্রশাসনের বাধার মুখে পড়তে হয়নি।

 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপরই সশস্ত্র সব ক্যাডার গা-ঢাকা দেয়। অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলেও শোনা গেছে। এর মধ্যে ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

 

অস্ত্রধারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
এদিকে, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্রের মহড়া চালানো কাউকে এখনো গ্রেফতার করার খবর মেলেনি। এজন্য নগরসহ সিলেটবাসীর মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তাদের আশঙ্কা, অস্ত্রধারীরা ব্যক্তিগত-রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কোনো অপকর্ম ঘটিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারেন।

 

ছবি: মাহমুদ হোসেন

ছবি: মাহমুদ হোসেন

 

যদিও ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে হত্যা-হামলার ঘটনায় সিলেটে ১৪টি হত্যা মামলাসহ অন্তত ত্রিশের অধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে আসামি হয়েছেন। কিন্তু অস্ত্রধারী ক্যাডারদের কেউ যেমন গ্রেফতার হননি, তেমনি মামলাগুলোতে আসামি হিসেবে তাদের বেশিরভাগেরই নাম দেখা যায়নি।

 

অভিযানে যৌথ বাহিনী
অবশ্য ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। সিলেটবাসীর প্রত্যাশা, যৌথ বাহিনী সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডার, তাদের সহযোগী ও গডফাদারদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।

 

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আনোয়ার উজ জামান বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে অপরাধী, অস্ত্রধারীদের ধরা হলে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হবে। অভিযানে সহযোগিতার জন্যে ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারেও অভিযান চালানো হবে।

 

তিনি বলেন, সিলেট জমাযোগ্য ৫৪৪টি অস্ত্রের মধ্যে ৪৬০টির বেশি অস্ত্র জমা পড়েছে। এখনো ৮৪টি অস্ত্র জমা করা হয়নি। এর মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকায় মোট অস্ত্র ১৯০টি এবং জেলায় ৩৫৪টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তার মধ্যে পিস্তল ও রিভলবার ৫৪টির মধ্যে ২১টি জমা পড়েছে।

 

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অস্ত্রধারী অপরাধীদের ধরতে অভিযান চলছে।

 

সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গুণ গত মান যার ভাল তার দাম একটু বেশি সিলেটের সেরা বাগানের উন্নত চা প্রতি কেজি চা দাম ৪৫০ টাকা হোম ডেলি বারি দেয়া হয়

tree

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন