‘ডিজিটাল’ শহরের ওয়াই-ফাই ডিজেবল

প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪

‘ডিজিটাল’ শহরের ওয়াই-ফাই ডিজেবল

নিউজ ডেস্ক : সিলেটকে দেশের প্রথম ডিজিটাল শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলো সরকার। শহরজুড়ে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা, ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা স্থাপন ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এই তিনটির মধ্যে দুটি সেবা চালুর কিছুদিন পরই মুখ থুবড়ে পড়ে। আর একটি চালুই হয়নি, আছে থমকে।

 

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নেওয়া ‘ডিজিটাল শহর’ নামের পাইলট প্রকল্পটি শুরু হয়েছিলো দুটি শহরে। এর মধ্যে একটি সিলেট। এ প্রকল্পের আওতায় পুরো শহর বিনামূল্যের ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসার কথা।

 

প্রকল্প অনুযায়ী, সিলেট শহরের ১২৬টি পয়েন্টে ফ্রি ওয়া-ফাই সুবিধা চালু হওয়ার কথা। দুই বছর পরীক্ষামূলকভাবে তা চালানোর পর প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা হঠাৎ এক দিন সিলেট সিটি করপোরেশনকে প্রকল্প বুঝে নিতে বলে। সিটি করপোরেশন তখনই প্রথম জানতে পারে ওয়াই-ফাই পয়েন্টগুলো চালানোর খরচ তাদের বহন করতে হবে। কিন্তু এর জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকায় বাজেট না থাকায় এগুলো সচল রাখতে পদক্ষেপ নিতে পারেনি সিসিক।

 

গত কয়েকদিনে সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, শাহজালাল রাহ. মাজার এলাকা ও শাহজালাল উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, কোথাও এখন ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ স্থানেই ওয়াই-ফাই মেশিন নষ্ট, সব মিলিয়ে সচল আছে মাত্র ৩০টি। তবে এগুলো সচল থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে না ইন্টারনেট সুবিধা। অধিকাংশ ফাইবার কেবল কাটা।

 

সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের সীমিত আয় নিয়ে নিয়মিত সেবা দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডিজিটাল শহরের ওয়াই-ফাই সুবিধা তাদের উপর বাড়তি বোঝা। এর পেছনে শুধু ব্যান্ডউইথের ব্যয়ই হবে বছরে ৪২ লাখ টাকা। ব্যবস্থাপনার খরচসহ বছরে প্রয়োজন হবে ৮৪ লাখ টাকা। এই অর্থ খরচের সামর্থ্য সিটি করপোরেশনের এখন নেই।

 

২০১৭ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের অধীনে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি যখন নেওয়া হয়, তখন শুরুতে একটি বৈঠক করে সিলেট সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়, এটিকে ডিজিটাল শহর করা হবে। তখন এ খবরে খুশি হয়েছিলেন সে সময়ের সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেও শহর ডিজিটাল করার বিষয়টি রেখেছিলেন। এরপর দুই বছর ট্রায়াল রান করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।

 

মহানগরের ৬২ এলাকায় ১২৬টি পয়েন্টে ওয়াই-ফাই জোন স্থাপন করা হয়। ওই সময় ডিজিটাল সিলেট প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মধুসূদন চন্দ জানিয়েছিলেন, প্রতিটি অ্যাকসেস পয়েন্টে একসঙ্গে অন্তত ৫০০ জন বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০০ জন উচ্চগতির ইন্টারনেট পাবেন। প্রতিটি অ্যাকসেস পয়েন্টের চারদিকে ১০০ মিটার এলাকায় ব্যান্ডউইথ থাকবে প্রতি সেকেন্ডে ১০ মেগাবাইট।

 

২০২১ সালের ২১ মার্চ এই প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেট সিটি করপোরেশনকে। প্রকল্পটির খরচ কীভাবে চলবে, এ ব্যাপারে স্পষ্টতা না থাকায় সিটি করপোরেশন প্রথমে প্রকল্পটি নিতে চায়নি। পরে এ ব্যাপারে কয়েক দফা আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন তা গ্রহণ করে।

 

সিটি করপোরেশন প্রকল্প বুঝে নেওয়ার পর কয়েক মাস ওয়াই-ফাইসেবা চালু ছিল। এরপর তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। নগরে এখন ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড লিখে ওয়াই-ফাই সংযোগ মিললেও ইন্টারনেট ডিজেবলড দেখায়।

 

দায়িত্ব ছাড়ার আগে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তারা (বিসিসি) আমাদের হাওয়ার উপর কী বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন, আমরা কিছুই বুঝিনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাও চাই। কিন্তু যখন আমাদের প্রকল্পটি বুঝিয়ে দিয়ে গেল, আমি নিজে চেষ্টা করে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পাইনি, অন্যদের কথা কী বলব।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুরুতেই তাদের বলেছিলাম এগুলো অফিস, আদালত, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থাপনের জন্য। স্কুল এলাকায় এগুলো যাতে না বসায়। তাতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হতে পারে। তারা সর্বত্র বসালেও তাদের ডিভাইস কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। খুবই নিম্নমানের ডিভাইস বসিয়েছে। এগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ মানুষ দিতে হবে, কিন্তু তারা তা দেয়নি। তাদের কাছে কোনো কিছু জানতে চাইলে তারা রেসপন্ডও করে না।’

 

সিলেট সিটি করপোরেশস সূত্র জানায়, প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর ১২৬টি অ্যাকসেস পয়েন্ট দেখিয়ে টেন্ডার দেয় বিসিসি। সেটি তারাই স্থাপন করে। কিন্তু একপর্যায়ে হঠাৎ করে ব্যবস্থাপনা ও ব্যান্ডউইথের খরচের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয় সিটি করপোরেশনের কাঁধে। এখন ব্যান্ডউইথ চালাতে হলে সিটি করপোরেশনের মাসে খরচ পড়বে সাত লাখ টাকা। বিসিসি যখন প্রকল্পটি বুঝিয়ে দিচ্ছিলো- তখন আরিফুল হক চৌধুরী এটি পরিচালনার জনবল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেটির কোনো জবাব দেয়নি বিসিসি। বর্তমানে অধিকাংশ ফাইবার কেবল কাটা। এগুলোর নিয়মিত ব্যবস্থাপনা করতে গেলে নতুন করে ৫ থেকে ৬ জনকে নিয়োগ দিতে হবে। সব মিলিয়ে সিসিক এই মুহুর্তে এসব নিয়ে চিন্তা করছে না।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন