বুধবারই শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির

প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২৪

বুধবারই শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির

নিউজ ডেস্ক : সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার বিষয়ে গড়িমসি করলেও অবশেষে পিছু হটেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম‌্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। দুই দিন পর বৈঠক করে শপথ গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলা হলেও বৈঠকটি বাতিল করে বুধবারই (১০ জানুয়ারি) শপথ নিচ্ছেন জাপার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত এমপিরা। দলীয় সংসদ সদস্যসহ নানামুখী চাপে জিএম কাদের শেষ পর্যন্ত শপথ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ‌্য হয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) রাতে জতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামীকাল (বুধবার) শপথ নেবেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যবৃন্দ। পূর্বঘোষিত বৃহস্পতিবারের সভা বাতিল করা হয়েছে।

 

বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে জাতীয় সংসদ ভবনে বিরোধী দলীয় উপনেতার কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সকল সংসদ সদস্যকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

 

এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির এমপিরা বুধবার শপথ নিচ্ছেন না বলে চাউর হয়। শপথ নেওয়ার বিষয়ে সময় চেয়ে স্পিকারকে মঙ্গলবার চিঠি দেয় জাতীয় পার্টি।

 

জাপার হয়ে নির্বাচিত অধিকাংশ সংসদ সদস্য বুধবার শপথ নিতে চাইলেও ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি’, ‘গ্রহণযোগ্যতা পাবে না’—এমন অজুহাত তুলে শপথ নিতে গড়িমসি করছিলেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। আদৌ শপথ নেবেন কি না, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন কাদের।

 

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, একক সিদ্ধান্তে নির্বাচনে গিয়ে দলীয় ভরাডুবির কারণে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে তিনি একদিকে যেমন নাটক করছিলেন, অন্যদিকে সরকারকে চাপে ফেলে বাড়তি সুবিধা আদায় করতে কৌশল নিয়েছিলেন।

 

মঙ্গলবার সংসদ সচিবালয় থেকে শপথ গ্রহণের জন্য নবনির্বাচিত এমপিদের ফোন করা হলেও শপথ গ্রহণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দেয় জাতীয় পার্টি। দলীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে এ চিঠি দেওয়া হয়। পার্টির চেয়ারম্যান শপথ নিতে গড়িমসি করলেও নির্ধারিত সময়ে শপথ নিতে উম্মুখ হয়ে আছেন দলের অধিকাংশ এমপি। শেষ পর্যন্ত শপথ নিতে না চাইলে এসব এমপি দলীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারেন বলে দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। নবনির্বাচিত দলীয় এমপিসহ নানামুখী চাপের কারণে রাতের মধ্যে পিছু হটে জিএম কাদের শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক প্রেসিডিয়াম সদস‌্য জানিয়েছেন, পার্টির চেয়ারম‌্যান শপথ নিতে না চাইলে দলের অধিকাংশ এমপি তার পক্ষে থাকতেন না। বরং, তারা প্রয়োজনে চেয়ারম‌্যানকে মাইনাস করে দ্রুত শপথ নিয়ে ফেলতেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে চেয়ারম‌্যান বুধবার শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

জানা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচনে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া, স্ত্রী শেরিফাসহ অজনপ্রিয় নেতাদের সমঝোতার আসন পাইয়ে দেওয়া, যোগ‌্যদের মনোনয়ন না দেওয়া ও নির্বাচনে জাপার ভরাডুবিসহ নানা কারণে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা এমনিতেই জিএম কাদেরের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। ফলে, বিজয়ী সাংসদদের বিরোধিতার মুখে তাদের সমর্থন পেতেন না তিনি।

 

অভিযোগ আছে, সিনিয়র নেতাদের কোরবানি দিয়ে স্ত্রী শেরিফা কাদেরকে ঢাকা-১৮ আসন পাইয়ে দিয়ে নির্বাচনে যান পার্টির চেয়ারম্যান। তার নেতৃত্বে এই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ২৬ আসনে সমঝোতা করার পরও দল পেয়েছে মাত্র ১১ আসন। এজন্য দলের প্রায় সব প্রার্থী ও নেতাকর্মী চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী, দলের মহাসচিবের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে চেয়ারম্যানের একগুঁয়েমি সিদ্ধান্ত দলকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে গেছে বলেও নেতাকর্মীদের অভিযোগ উঠেছে।

 

জানা গেছে, নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের রংপুর নগরীর স্কাই ভিউ ভবনে নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হয়েছে। সার্বিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়নি। আমাদের বিশ্বাস, এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।’

 

জাপার চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পরপরই নবনির্বাচিত দলীয় সাংসদদের শপথ গ্রহণ করা না করা নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। নেতাকর্মীদের মধ্যেও জিএম কাদেরের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি চাউর হয়। জাপার চেয়ারম্যান বর্তমানে রংপুরে অবস্থান করে শপথ গ্রহণ করাসহ সার্বিক বিষয়ে রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঢাকায় এসে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বৃহস্পতিবার বৈঠক করে শপথ গ্রহণ করাসহ সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল জিএম কাদেরের। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তাকে আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে হলো। বুধবার শপথ নেওয়ার কথা জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন তিনি।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২টি আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৬২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি এবং অন্যান্য দল ৩টি আসনে জয় পেয়েছে।