সিলেট-২ আসন: আওয়ামী লীগে একাধিক, বিএনপি ও জাপার একক প্রার্থী

প্রকাশিত: ৩:০৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩

সিলেট-২ আসন: আওয়ামী লীগে একাধিক, বিএনপি ও জাপার একক প্রার্থী

নবীন সোহেল :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বেশির ভাগ আসনে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। যে কয়েকটি আসনে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে, এরমধ্যে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ অন্যতম। তবে মাঠে এখন আলোচনায় আছে বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর পরিবার ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী।

 

সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সর্বশেষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছিলেন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এরপর গেল দুবার আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় জাতীয় পার্টিকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী পাস করলেও গেল নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়েও কম ভোট পান। এবারও ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির সাবেক এই সংসদ সদস্য।

 

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে চমক দেখান তিনি। সারা বছর নির্বাচনী এলাকায় সরব থাকায় তিনি ‘২৪ ঘণ্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। গেল দুই নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড় দেওয়ায় তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। এর মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।

 

সর্বশেষ নির্বাচনে এ আসনে তিন চৌধুরীর মনোনয়ন দ্বন্দ্বে ভরাডুবি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোটের। তাঁরা হলেন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (জাপা) ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে জামানত হারান মহাজোটের ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী। তাঁর পরাজয়ে টানা দুবারের দখলীয় আসন হারাতে হয়েছে মহাজোটকে।

 

বর্তমানে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট সিটির নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এবার কপাল খুলতে পারে শফিকুর রহমান চৌধুরীর। তিনিই সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের ভরসা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী এম ইলিয়াস আলীকে প্রায় ৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে এমপি হন শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ ছাড়া আসনটিতে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী একুশে পদকপ্রাপ্ত অরূপরতন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী (জগলু চৌধুরী), বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া। পাশাপাশি সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী এবং বর্তমান এমপি গণফোরামের মোকাব্বির খান তো রয়েছেনই। তবে, আওয়ামী লীগের সাথে গণফোরামের জোট হলে আবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কপাল পুড়তে পারে। এমনকি শরিক দলের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়েই মোকাব্বির খান নির্বাচনে আসতে পারেন এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

 

আসনটিতে গেল নির্বাচনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলে বিএনপির সমর্থন নিয়ে আসনটিতে পাস করেন গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান। বিজয়ী হওয়ার পর মোকাব্বিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের। অন্যদিকে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুনা এলাকায় নিয়মিত সময় দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে তার নাম আলোচিত হচ্ছে। পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশী তাঁর ছেলে আবরার ইলিয়াসও। এদিকে, গেল নির্বাচনে এই আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. মুনতাসির আলী। এবারও তিনি প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন।

 

তবে, বিএনপি নির্বাচনে না আসলে বা নৌকা প্রতীক না আসলে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।

 

স্থানীয়রা বলছেন, আর নির্বাচনী সেই আমেজ এখানে এখনো সৃষ্টি হয়নি। কারণ, আওয়ামী লীগ গত দুবার আসনটি জোটের স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। বিএনপিও গত নির্বাচনে জোটকে দিয়েছে। যে কারণে দলীয় প্রার্থীরা আগে থেকেই মাঠে নেই। জোট গঠন ও নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে তাঁরা হয়তো মাঠে নামবেন।

 

আসনটিতে একসময় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান থাকলেও জোটকে ছেড়ে দেওয়ায় সেটা এখন আর নেই। নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের হতাশা কাজ করে, তারা অনেকে নিষ্ক্রিয়। ভোটাররাও বিভক্ত হয়ে গেছেন। কেউ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে জাপাকে সমর্থন করে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়েছেন, যে কারণে দলের অনেকের কাছে হয়ে গেছেন নেতিবাচক। আবার কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে পেয়েছেন বিদ্রোহী তকমা। কেউ গেছেন চুপসে। আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

 

আগের নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসনটিতে ভোটের হিসাব জটিল। বিভক্ত সমর্থক ও ভোটারদের এক করে জয় নিশ্চিত করা বেশ কঠিন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন