প্রকাশিত: ২:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩
নিউজ ডেস্ক : আগামী ৭ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন আইন) ২০০৯-এর ৬ ধারা মোতাবেক ৮ নভেম্বর দায়িত্ব নেবেন সিলেটের নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
দায়িত্ব ছাড়ার মুহুর্তে টানা দুই বারের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ‘আয়োজন’ করে বিদায় জানানোর কথা রয়েছে পরিষদের। তবে এর আগে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) মেয়র আরিফকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদ। আর এ সংবর্ধনা উপলক্ষ্যে দল-মত ভুলে এক মঞ্চে জড়ো হন সবাই।
শনিবার রাতে মহানগরের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সাবেক প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর শ্রমিকলীগের সভাপতি শাহরিয়ার কবির সেলিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ক্রীড়া ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- ‘আপনাদের সহযোগিতা ও ভালোবাসা নিয়ে গত ১০টি বছর আপনাদেরই একজন সেবক হিসেবে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনাদের খেদমত কতটুকু করতে পেরেছি সে বিচারের ভার আপনাদের উপরেই রইল। দায়িত্ব পালনকালে নগরবাসী আমাকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সেই ঋণ জীবনেও শোধ করতে পারবো না। আমি শুধু ক্ষমতায় থেকে নয়, যেখানে যে অবস্থায়-ই থাকি না কেন, আমি আমার প্রাণপ্রিয় নগরবাসীর পাশে থাকবো।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন- ‘মেয়র আরিফুল হক সব সময় সম্প্রীতি দেখিয়ে গেছেন। যে কারণে তিনি তার অবস্থান থেকে কাজ করতে পেরেছেন। দল ও মতের উর্ধ্বে উঠে তিনি সিলেটের উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি সকলের সাথে সুসস্পর্ক রেখেছেন। আগামী নভেম্বরে তিনি মেয়রের পদ থেকে বিদায় নেবেন, তবে আমাদের সিলেটের জনগণের মন থেকে তিনি বিদায় নিতে পারবেন না।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন এবং পরিচালনায় ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মুনিম মল্লিক মুন্না ও যুগ্ম সম্পাদক নিয়াজ মো. আজিজুল করিম।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুন পঞ্চম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় নির্দেশনা মেনে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি টানা দুই বারের মেয়র, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।
নির্বাচনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১টি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম (বাবুল) পান ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট।
তবে সিটি নির্বাচনের আগে গুঞ্জন ছিলো- পঞ্চম সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন আরিফ। তাঁর পলিসি হবে- নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। বিজয়ী হওয়ার পর দল তাকে ‘এমনিতেই কাছে টেনে নেবে’।
তবে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত। ‘বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না’ এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েন আরিফ। তাই লন্ডনে থাকা দলের নীতি নির্ধারক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে রাজি করিয়ে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই সেখানে যান সিলেট সিটি মেয়র। ১০ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন মেয়র আরিফ। লন্ডনের কিংস্টন এলাকার একটি ভেন্যুতে তাদের এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
তবে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষেই আরিফ ঘোষণা দেন- আর প্রার্থী হচ্ছেন না সিসিকে।
ওই সময় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- সিসিকে প্রার্থী না হলেও নতুন চমক নিয়ে লন্ডন থেকে ফিরছেন আরিফ। হাই কমান্ডের নির্দেশনা মেনে সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী না হয়ে তাঁর এই ‘ত্যাগ স্বীকারে’ দল তাঁকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে। আগামীতে আরিফকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করার আশ্বাস দিয়েছেন তারেক রহমান। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে সিলেটের একটি আসনে আরিফকে প্রার্থী করবে বিএনপি।
তবে দেশে ফিরে নগরবাসীকে আশা-নিরাশায় রাখেন আরিফ। ফেরার দিন সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের দেওয়া সংবর্ধনাকালে তিনি বলেন- ‘হাই কমান্ড থেকে সিগন্যাল পেয়েছি। তবে কী সিগন্যাল তা খোলাসা করবো ঈদুল ফিতরের পরে।’
পরবর্তীতে ১ মে শ্রমিক দিবসের এক সমাবেশে মেয়র আরিফ বলেন- সারা দেশে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও সিলেটের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমি প্রার্থী হলে কেন হবো তা ২০ মে জনসভা করে সবার সামনে ব্যাখ্যা করবো।
আরিফের এই বক্তব্যে ফের শুরু হয় তোলপাড়, তাঁকে নিয়ে ফের শুরু হয় জোর আলোচনা।
তবে সব শেষে নগরবাসীর সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০ মে সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা দেন মেয়র আরিফ।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য। ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে আরিফুল হক সিসিকের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের আশীর্বাদ হয়ে তিনি সিলেটের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। সেসময় তাকে ‘ডিপ্লোম্যাটিক লিডার’ হিসেবে আখ্যা দেন সাইফুর। ওই সময় আরিফ সিটি কর্পোরেশনের নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১৩ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন আরিফ। আওয়ামী লীগের শাসনামলেই তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র হন তিনি। ২০১৮ সালে ফের কামরানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ।
আরিফুল হকের জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৩ নভেম্বর সিলেটের কুমারপাড়ায়। তাঁর পিতা মো. শফিকুল হক চৌধুরী এবং মা আমিনা খাতুন।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest