রাধাবতীর ঐতিহাসিক ‘কলাবতী’ শাড়ি প্রধানমন্ত্রীর হাতে

প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০২৩

রাধাবতীর ঐতিহাসিক ‘কলাবতী’ শাড়ি প্রধানমন্ত্রীর হাতে

নিউজ ডেস্ক : তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী। বাড়ি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জের। দীর্ঘদিন ছিলেন সিলেট শহরে। কলাগাছের তন্তু থেকে শাড়ি তৈরি তাক লাগিয়েছেন তিনি, সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। আর এ তাক লাগানো শাড়ি এখন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।

 

রাধাবতী কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি কলাবতী শাড়ি ও আরও ৩টি শাড়ি এবং হস্তশিল্পজাত কিছু পণ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সোমবার (১৭ জুলাই) হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি কলাবতী শাড়ি ও হস্তশিল্পজাত পণ্য গ্রহণ করেন।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু থেকে প্রস্তুত তিনটি শাড়ি ও দুটি জুয়েলারি বক্স প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।

 

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কলাগাছের তন্তু থেকে মণিপুরী ডিজাইনের এই শাড়ি প্রস্তুত করেন মৌলভীবাজারের তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী।

 

আর প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া পৃথক ৩টি শাড়ি তৈরি করেছেন অঞ্জলী দেবী ও দত্ত সিংহ।
উল্লেখ্য, রাধাবতী দেবী কদিন আগেও ছিল একটি অচেনা নাম। একটি শাড়ি তৈরি করে আজ ব্যাপক পরিচিতি নামটি। কলাগাছের তন্তু (সুতা) দিয়ে শাড়ি তৈরি নতুন এক উদ্ভাবন। এ উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছেন দুজন নারীর চিন্তা ও কর্মতৎপরতা। একজন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এবং অন্যজন কমলগঞ্জের রাধাবতী দেবী।

 

সম্প্রতি তাদের সাফল্যের (কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি) গল্প ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সর্বত্র। ১৫ দিনের চেষ্টায় দেশে প্রথমবারের মতো কলাগাছের আঁশ থেকে তৈরি সুতা দিয়ে শাড়ি বুনেছেন রাধাবতী দেবী। ১২ হাত লম্বা এ শাড়িটি বুনন করে বাংলাদেশ তথা বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। দৃষ্টিনন্দন শাড়ির নাম রাখা হয় ‘কলাবতী’।

 

মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা সদর প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূর। সেখান থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে মণিপুরী জনগোষ্ঠীর গ্রাম ভানুবিল মাঝেরগাঁও। প্রায় ৬৫ বছর আগে সে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাধাবতী দেবী।

 

তিনি জানান, তার জন্মের কয়েক মাস পর তার বাবা মারা যান। ফলে মা মালতী দেবী হয়ে ওঠেন তার ভরসার জায়গা। কিছুদিন পর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ফলে রাধাবতী বড় হন চাচার কাছে। স্থানীয় তেতইগাঁও রশিদ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয়ে যায়। সংসার জীবন শুরুর তিন মাস পর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে তার মাও মারা যান।

 

বিচ্ছেদ আর বিষণ্নতার মধ্যে রাধাবতী দেবী বয়ে চলেছেন ৬৬ বছরের জীবন। বর্তমানে চাচাতো ভাই অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক রণজিৎ সিংহের পরিবারে থাকেন। তিনিসহ রঞ্জিতের পরিবারের সদস্য ১০ জন। সাধ্যমতো কাজ করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন রাধাবতী।

 

রাধাবতী জানান, পারিবারিক ঐতিহ্য হিসাবে ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি মণিপুরী তাঁতবস্ত্র তৈরি করছেন। ১৯৯২ সাল থেকে শাড়ি তৈরি শুরু করেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে তিনিই প্রথম শুরু করেন তাঁতের তৈরি বস্ত্রগুলো। মাফলার, ওড়না, শাড়ি, গামছা, উত্তরীয়সহ বিভিন্ন পণ্য তিনি তৈরি করতেন। সেসব তৈরি পণ্য কিছু পাইকাররা বাড়িতে এসে নিয়ে যেতেন। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন তাঁতবস্ত্র দোকানের চাহিদা এলেই তিনি সে হিসাবে মণিপুরী তাঁতবস্ত্র তৈরি করে দিয়ে থাকেন।

 

বাড়িতে টকটকি (তাঁতের কাঠের মেশিন) দিয়ে মণিপুরী বস্ত্র বুনন করেন। তাঁতবস্ত্র তৈরিতে ১৯৮৬ সালে প্রথম ভারতের মণিপুরের ইম্পলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। এরপর কমলগঞ্জের মাধবপুরে মণিপুরী ললিত কলা একাডেমিতে ২০১০ সালে ২ বার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেই থেকে তিনি এখন মণিপুরী তাঁতবস্ত্র বুননে এলাকায় একজন ওস্তাদ (গুরু) হয়ে গেছেন।

 

মণিপুরী তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী এক সময় সিলেট অবস্থান করায় সেখানে মীরাবাজার এলাকায় সমবায় অফিসের তাঁতবস্ত্র বুননের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তখন নিজ এলাকার অনেক মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বস্ত্র বুনন উদ্যোক্তা বানিয়েছেন। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তারা আজ সফল হয়েছেন বলে জানান রাধাবতী দেবী।

 

রাধাবতীর ফুফাতো ভাই গুনমনির বান্দরবান এলাকায় কাজ করেন। গুনমনির মাধ্যমে রাধাবতী দেবীর দক্ষতার খোঁজ পান বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।

 

বান্দরবন জেলার জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কয়েক মাস আগে কমলগঞ্জ থেকে তাকে নিয়ে যান বান্দরবনে। তাকে দেখানো হয় কলাগাছের আঁশের সুতায় তৈরি ব্যাগ, জুতা, পাপোস, ফুলদানি, ফাইল কভার, কলমদানিসহ হস্তশিল্প সামগ্রী। পাশাপাশি রাধাবতীকে বলা হলো কলাগাছের সুতা দিয়ে একটি শাড়ি বুনন করে দিতে।

 

প্রথমে চিন্তায় পড়ে গেলেও এ সুতোয় অন্যান্য হস্তশিল্প বুনন সম্ভব হলে শাড়ি কেন সম্ভব নয়-এ প্রশ্ন নিজের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করায় মনের জোরে ও সাহসে তিনি রাজি হয়ে গেলেন। কলাগাছের কিছু সুতা সঙ্গে এনে কমলগঞ্জে নিজ বাড়িতে তাঁত সুতার সঙ্গে কলাগাছের সুতা মিশিয়ে প্রথমে একটি ওড়না বুনন করেন।

 

এরপর নিজ বাড়ি থেকে তাঁতের সুতা সঙ্গে নিয়ে বান্দরবান গিয়ে শুরু করেন শাড়ি বুনন। এক কেজি কলার সুতার সঙ্গে তাঁত সুতার সংমিশ্রণ করে টানা ১৫ দিনে কলার সুতার শাড়ি বুনন করে চমকে দিলেন সবাইকে। বান্দরবন জেলার জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজিও এ উদ্যোগে সফল হলেন বলে মণিপুরী তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী মনে করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীতে আরও কম সময়ে ও কম খরচে আরও মসৃণ ও উন্নতমানের শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে।

 

বান্দরবান জেলার জেলা প্রশাসক তাকে দিয়ে আরও কয়েকটি শাড়ি তৈরির চিন্তা করেছেন বলে তাকে জানিয়েছেন। এমনকি তাকে দিয়ে কলার সুতার শাড়ি তৈরির একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার মনোভাবও তিনি প্রকাশ করেন।

গুণ গত মান যার ভাল তার দাম একটু বেশি সিলেটের সেরা বাগানের উন্নত চা প্রতি কেজি চা দাম ৪৫০ টাকা হোম ডেলি বারি দেয়া হয়

tree

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন