প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক : মাত্র তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় সড়ক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে পানি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। রোববার (২ জুলাই) সকাল থেকে কিছুটা বৃষ্টি শুরু হয়।
তবে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এই বৃষ্টিতে নগরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সবই তলিয়ে যায়। পানি প্রবেশ করে বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটেও।
অনেক সড়কে কোমর পর্যন্ত পানি দেখা যায়। নগরের বাসিন্দারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হননি। যারা বের হন, তাদের হাঁটু বা কোমর সমান পানি মাড়িয়ে চলাচল করেন। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধও ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হজরত শাহজালালের (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুদখানা, হাওয়াপাড়া, দাড়িয়াপাড়া, যতরপুর, ছড়ারপাড়, তালতলা এলাকা এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ ভবনের ভেতরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেটে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত ছিল প্রায় ১১১ মিলিমিটার। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তর, সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী তিন দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। আর এভাবে ভারী বর্ষণ হলে নগরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন নগরের বাসিন্দারা।
নগরের বাসিন্দারা এই জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনের উদাসীনতাকে দায়ী করে বলছেন, গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে বর্তমান মেয়র, তার পরিষদ ও কর্মকর্তারা নগরের মানুষের সমস্যাগুলো আমলে নিচ্ছেন না। তারা অনেকটা উদাসীন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারের অভাব এই জলাবদ্ধতার কারণ।
মহানগরের মীরের ময়দানের অর্ণব আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আজমল আলী বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারে নগর কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই বাসা-বাড়িতে পানি ওঠে। আর ভারী বর্ষণ হলে তো কোনো কথাই নেই। আজ আমার ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, মুষলধারে বৃষ্টির কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নামতে সময় লাগছে। কোথাও ময়লা-আবর্জনার জন্য পানি আটকে গেলে তা পরিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে। নগরের ড্রেন পরিষ্কার করতে সিটি করপোরেশনের টিম কাজ করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর, সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টি বেড়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহ একই রকম বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে পাহাড়ি ঢলের শঙ্কা
উজানের বৃষ্টিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ডুবতে শুরু করেছে। উজানে ভারত সীমান্ত ও চেরাপুঞ্জিতে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হতে শুরু করেছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ফলে জনমনে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কেননা, ২০২২ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেবার প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল।
পূর্ব ইসলামপুর, তেলিখাল, ইছাকলস ও উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা জানান, পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় নিচু এলাকার গ্রামগুলো প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আগাম ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সুনামগঞ্জেও বাড়ছে পানি
ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি ও মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির প্রবল বর্ষণের কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেক সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
তাহিরপুরের আনোয়ারপুর ব্রিজ সংলগ্ন সড়ক এবং সত্তিয়ারখলা একশ মিটার নামক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে নৌকাযোগে পার হচ্ছেন। সম্প্রতি এই সড়ক পার হতে গিয়ে দুই সন্তানসহ এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তাহিরপুর উপজেলার সোলেমানপুর বাজার সংলগ্ন পাটলাই নদীর পানি ৩৪ মিলিমিটার, ছাতকের সুরমা নদীর পানি ১৭ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ২৪ মিলিমিটার ও দিরাইয়ে সুরমা নদীর পানি ৩ মিলিমিটার এবং যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে ৪৪ মিলিমিটার বেড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১৪১ মিলিমিটার, ছাতকে ৩০ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ১৫০ মিলিমিটার, দিরাইয়ে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃষ্টিপাতের ফলে যাদুকাটা, চলতি খাসিয়ামারা, চেলা, মনাই, সোমেশ্বরীসহ সব পাহাড়ি নদীর পানি বেড়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাকি সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মূলত গত তিন দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। দুই দিনের টানা বর্ষণ ও সীমান্তের ওপাড়ে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। চলাচলের সড়ক ডুবিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করছে হাওর ও লোকালয়ে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় ঢল নামার ফলে মাটির সড়কগুলোর বেশ ক্ষতি হয়েছে। মধ্যনগর-মহিষখলায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কটি ডুবে এবং ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়লেও বিভিন্ন পয়েন্টে পানি এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest