প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজাসহ অন্তত ৮টি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল ও দেশে নৃশংসতা এবং বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী। শুধুমাত্র গাজায় গত এক বছরে ইহুদিবাদী দেশটির হামলায় নিহত হয়েছে ৪২ হাজারের বেশি মানুষ।
এরই মধ্যে গতমাসে লেবানন শুরু হওয়া আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষ। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী-শিশু এবং বেসামরিক নাগরিক। গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
তবে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা সমালোচনা এড়িয়ে গিয়ে মারণাস্ত্র এবং বিধ্বংসী অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে তেল আবিবকে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
নিজেদের জাতীয় স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যের অনেকগুলো দেশ ফিলিস্তিনিসহ মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় নীরব ভূমিকা পালন করছে। সেই সঙ্গে তেল আবিবের সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে।
তবে শুরু থেকেই এর ব্যতিক্রম ইরান। ইসরায়েল তথা পশ্চিমাদের নৈরাজ্যকর হামলার জবাবে একাই সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তেহরান। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের একাধিক সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে কমপক্ষে দুই`শ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তেহরান। পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিলেও অজানা (তেহরানের পরমাণু বোমা পরীক্ষার গুজব) হুমকির কারণে পিছপা হয় ইহুদিবাদী দেশটি।
ইসরায়েলের সঙ্গে সাতটি আরব দেশের বাণিজ্য (যারা ইহুদিবাদী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে) ২০২৩ সালে রেকর্ড ভেঙে ১৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়ে এই বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সংবাদমাধ্যম অ্যারাবিয়ান গালফ বিজনেস ইনসাইটের প্রতিবেদনে এমনটি উঠে এসেছে।
তবে গত বছর ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এমন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মাত্র ৪ শতাংশ কমেছে, যা ৯৩৭ মিলিয়ন ডলার থেকে ৯০৩ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এমনটি আব্রাহাম অ্যাকর্ডস পিস ইনস্টিটিউট (এএপিআই)-এর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যে উঠে এসেছে।
চলতি বছরে এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এসময় নন-আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সামগ্রিক বাণিজ্য কমেছে ১৮ শতাংশের বেশি।
আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের এর প্রতিবেদনটি ইসরায়েলের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস-এর তথ্যের ওপর নির্ভর করে। আব্রাহাম অ্যাকর্ডস চুক্তিটি ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সই হয়েছিল। এর অধীনে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান, কসোভো, মৌরিতানিয়া এবং মরক্কোর সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হয়।
এই আরব দেশগুলো মিশর এবং জর্ডানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইহুদি দেশটির সাথে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এএপিআইয়ের প্রতিবেদনে মৌরিতানিয়ার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
প্রতিবেদনটি এই চুক্তি সইয়ের তৃতীয় বছরে দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগতি বিশ্লেষণ করেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের আওতাভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হতে পারে। প্রাকৃতিক গ্যাস, পানি এবং প্রতিরক্ষা খাতে হিসাববহির্ভূত লেনদেনগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হলে এই তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
ইসরায়েল থেকে মিশর এবং জর্ডানে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পানির রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আব্রাহাম অ্যাকর্ডসভুক্ত দেশগুলো ১৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা রপ্তানির ২৪ শতাংশ পেয়েছে ২০২২ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যারেড কুশনার, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা এবং প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তার সাবেক শীর্ষ সহকারী বলেছেন, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং এই চুক্তির মাধ্যমে দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, এটি আশাকে বাড়িয়ে দেয়।
ইসরায়েলের সঙ্গে অনেক আরব দেশের বাণিজ্য বজায় রাখার কারণগুলো বেশ জটিল এবং ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিবেচনার মিশ্রণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
অর্থনৈতিক স্বার্থ:
বাণিজ্য ও প্রযুক্তিতে ইসরায়েল একটি উন্নত অর্থনীতি এবং এর প্রযুক্তিখাতগুলো বিশেষভাবে সাইবার নিরাপত্তা, কৃষি, পানি প্রযুক্তি এবং চিকিৎসাসেবা অনেক উন্নত। বিশেষ করে উপসাগরীয় কিছু আরব দেশ ইসরায়েলের এই প্রযুক্তিগুলো নিজেদের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায়।
জ্বালানি ও বাণিজ্য পথ:
মিশর ও জর্ডানের মতো দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে বিশেষ করে জ্বালানি সহযোগিতা (যেমন গ্যাস রপ্তানি) নিয়ে অর্থনৈতিক চুক্তি রয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য বজায় রাখা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা:
কিছু আরব দেশ বিশেষ করে যারা ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা ইসরায়েলকে সম্ভাব্য মিত্র হিসেবে দেখছে। এর ফলে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং সামরিক সহযোগিতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে অভিন্ন হুমকি যেমন ইরানি প্রভাব প্রতিহত করতে সহযোগিতা বেড়েছে।
আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ:
২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তি সইয়ের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা যায়। এর অংশ হিসেবে কিছু আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে এগিয়ে যায়। এতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও কূটনৈতিক চাপ:
যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে মধ্যস্থতাকারী এবং প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। যে আরব দেশগুলো মার্কিন সামরিক এবং আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল যেমন মিশর, জর্ডান এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য মার্কিন চাপের মুখোমুখি হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখে তাই ওয়াশিংটনকে সন্তুষ্ট রাখতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক শানিত করে যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর দেশগুলো।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest