বজ্রপাত বাড়ার আশঙ্কা, সিলেট ঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৪

বজ্রপাত বাড়ার আশঙ্কা, সিলেট ঝুঁকিতে

নিউজ ডেস্ক : ‘এবার গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদ ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন- যেসব অঞ্চলে হবে এর মধ্যে রয়েছে সিলেট বিভাগ।

 

আবহাওয়াবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার তাপ বেশি হওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হবে। আর একই সঙ্গে বর্ষাকালের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি হবে। অন্যদিকে বজ্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং অসচেতনতার কারণে মৃত্যুও বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

 

ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, বালাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু এড়াতে আগাম সতর্কতা এবং আবহাওয়া বার্তা খুব জরুরি।

 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম পিয়ার-রিভিউ জার্নাল হেলিয়ন-এ ‘বাংলাদেশে বজ্রপাত পরিস্থিতির ওপর জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম)-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ প্রাণহানি বর্ষা পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষা ঋতুতে ঘটে, যার মধ্যে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরণ ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে। এ কারণেই বজ্রপাত বাড়ছে।

 

ওই গবেষণায় থাকা বাংলাদেশের গবেষক অধ্যাপক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘‘বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এবার বজ্রপাতের আশঙ্কা বাংলাদেশে বেশি। মেঘের সঙ্গে তাপের একটা সম্পর্ক আছে। তাপ বেশি হলে মেঘে কেমিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল প্রোপার্টি বেশি হবে। আমাদের এখানে বর্ষা শুরু হয় আগস্টের শেষের দিকে। কিন্তু এবার আগেই শুরু হয়ে গেছে। গত মার্চেই ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এবার বজ্রপাত বেশি হতেই পারে। এছাড়া বজ্রপাতে হতাহত বাড়ার পেছনে আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীতা কাজ করেছে। বৃটিশরা আমাদের এখানে ফসলের ক্ষেতে বড় বড় কপার দণ্ড লাগিয়েছিলো। কিন্তু আমরা সেগুলো তুলে অর্থের লোভে বিক্রি করে ফেলেছি।’

 

জাতিসংঘ বলেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ জন বজ্রপাতে মারা যায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মারা যায় বছরে গড়ে ২০ জনেরও কম। বাংলাদেশে গাছপালা কেটে ফেলা বিশেষ করে খোলা মাঠে উঁচু গাছ ধবংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে।

 

ফিনল্যান্ডের বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের ৭০ ভাগই কৃষক বা যারা খোলা মাঠে কাজ করেন। এছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়।

 

গবেষকরা বলছেন, ‘‘বাংলাদেশে বজ্র নিরোধে তাল গাছ লাগানো প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। আসলে শুধু তাল গাছ নয়, যেকোনো উঁচু গাছ বজ্র নিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া বাংলাদেশে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর তিনশোরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে। এটা এলার্মিং। আমরা লাইটেনিং আ্যরেস্টার লাগানোর একটা পরিকল্পনা নিয়েছি। কিন্তু এখানো প্ল্যানিং কমিশন ওটা পাস করেনি। আর কত জায়গায় এটা লাগাতে হবে তারও কোনো সমীক্ষা নেই। এটা বেশ কস্টলি। আর আমাদের যে আশ্রয়কেন্দ্র সারাদেশে আছে সেগুলোকে বজ্রপাতের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করছি। নতুন আশ্রয়কেন্দ্রও হবে। তবে সবগুলোই আন্ডার প্রসেস বলতে পারেন।’