গণতন্ত্র নেই বলে সাংবাদিক নির্যাতন বাড়ছে : সিলেটে সাংবাদিক নেতারা

প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২৪

গণতন্ত্র নেই বলে সাংবাদিক নির্যাতন বাড়ছে : সিলেটে সাংবাদিক নেতারা

নিউজ ডেস্ক : সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া গণতন্ত্র সুরক্ষা পাবে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী কালাকানুন, প্রকাশ্য এবং প্রচ্ছন্ন নানামুখী চাপ এবং বিধিনিষেধের বেড়াজাল, কর্মস্থলেও অধিকার বঞ্চিত হওয়ায় কিংবা নিরাপত্তা না থাকার কারণে সাংবাদিকরা স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে পারেন না। সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এমন কোনো পন্থা নেই যা অবলম্বন করা হচ্ছে না। এর ফলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনেকটা বন্ধই হয়ে গেছে।

 

শনিবার (২৩ মার্চ) বিকালে সিলেট আম্বরখানাস্থ ব্রিটানিয়া হোটেলের সেমিনার কক্ষে সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন-এসএমইউজে আয়োজিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের নেতাদের সংবর্ধনা এবং ইফতার ও দোয়া মাহফিলে সাংবাদিক নেতারা এসব বলেন।

 

এসএমইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএফইউজে মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী।

 

আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সিলেটের সভাপতি ডা. শামীমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, প্রফেসর ড. খায়রুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক, প্রফেসর সাহাবুল হক, এডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, এড আশিকুর রহমান, হাবিবুর রহমান, এনামুল হক জুবের, আবদুল কাদের তফাদার, এম এ মতিন, মাহবুবুল হক চৌধুরী, আবদুল আহাদ খান জামাল, সাব্বির আহমেদ, শাহজান সেলিম বুলবুল প্রমুখ।

 

রুহুল আমিন গাজী বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভয়াবহ সংকটকাল পার করছে। গণমাধ্যমের টুঁটি এমনভাবে চেপে ধরা হয়েছে যে এর স্বাধীনতা এখন পুরোপুরি বিপন্ন। দুঃশাসন পাকাপোক্ত করতে গণমাধ্যমকে হুমকি, ভয় প্রদর্শন, সাংবাদিক হত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন চলছেই। কথায় কথায় গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের জেলে ঢুকানো হচ্ছে। নানান কালা কানুন তৈরি করে গণমাধ্যমকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা হয়েছে। গণমাধ্যম শিল্পে একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করায় গ্ণমাধ্যম এখন সত্য তুলে ধরতে পারছে না। এসব কারণে গণমাধ্যম দিন দিন জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলছে।

 

সাংবাদিক নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে রুহুল আমিন গাজী বলেন, স্মরণকালের ইতিহাসে মিডিয়া এবং মিডিয়া কর্মীদের এমন দুর্দিন আর কখনও দেখা যায়নি। সমাজ-রাষ্ট্রের অনিয়ম-দুর্নীতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি, নিপীড়ন-নির্যাতন ও বীভৎসতার স্বরূপ নাগরিক সমাজের সামনে প্রকাশ করার শক্তিশালী ঘটনাধারী এ মহান মাধ্যম এবং মাধ্যমটির কর্মীগণ-ই আজ ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতিতে আবর্তিত হচ্ছে। গত ১৫ বছরে ৬০ জন সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। জেলে ঢুকানো হয়েছে অনেক সাংবাদিককে। সত্য প্রকাশ করতে কিংবা পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে হামলা-মামলা ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু সাংবাদিক। এমনকি কখনও কখনও প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হচ্ছে।

 

রুহুল আমিন গাজী বলেন, সাংবাদিক সুরক্ষার জন্য আইনি সহায়তাটাই বেশি দরকার। বিচারহীনতার কারণে সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন বাড়ছে। প্রতিটি ঘটনা অনুযায়ী দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে সাংবাদিক হত্যা কিংবা তাদের ওপর হামলা-মামলা ও হুমকি এসব অনেকটাই কমে আসবে। কিন্তু এটা কে করবে? যাদের দায়িত্ব তারাই তো নিপীড়কদের পৃষ্ঠপোষক! দেশে গণতন্ত্র নেই বলে সাংবাদিক নির্যাতন বাড়ছে।

 

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম গণমানুষের হতে পারছে না। সত্য তুলে ধরতে না পারায় সংবাদমাধ্যম দিন দিন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছে, যা সংবাদমাধ্যমকে অস্তিত্বের সংকটে ধাবিত করছে। গণমাধ্যম সব সময় জনগণের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু কীভাবে জানি না, জনগণের সঙ্গে গণমাধ্যমের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কালে কালে সে দূরত্বটা বাড়ছেই শুধু। আমরা জানি না আমাদের মিডিয়া মালিকরা তা অনুধাবন করছেন কি না! আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে গণতন্ত্রের সংকট। গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা থাকে না, তা আমরা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি।

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন