টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণ : নাইকোর সাথে মামলা জয়ের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩

টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণ : নাইকোর সাথে মামলা জয়ের পথে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি আদালতে সিলেটের টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় করা একটি মামলায় জয়ের পথে বাংলাদেশ। দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে নাইকো বাংলাদেশে কাজ পায় বলে শুনানিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এফবিআই ও কানাডার রয়েল মাউন্ডেট পুলিশের দুই কর্মকর্তা।

 

সম্প্রতি এ মামলার সমন্বয়কারী ব্যারিস্টার মঈন গণি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এসে যা ইচ্ছা তাই করা সম্ভব নয়, আইনি লড়াইয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে এ বার্তা দেয়া হয়েছে। ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশাও প্রকাশ করেন।

 

চলতি বছরের ১১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি আদালতের) শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মঈন গণি।

 

এরপর তিনি বলেন, কোম্পানি দেশি হোক বা বিদেশি হোক দুর্নীতি করে যে, পার পাওয়া যায় না আইনি লড়াইয়ে এমন বার্তা দেয়া হচ্ছে বা হয়েছে।

 

ব্যারিস্টার মঈন গণি বলেন, এফবিআই, রয়েল মাউন্টেড পুলিশের এজেন্টরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নাইকো আসলে বাংলাদেশে এ চুক্তিগুলো পেয়েছে শুধুমাত্র দুর্নীতির মাধ্যমে। তৎকালীন সরকারের লোকজনকে ঘুষ দেয়ার মাধ্যমে।

 

তিনি আরও বলেন, একটি বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে এসে কাজ করতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যাবে এটা হতে পারে না। তাদের ধরে; তাদের থেকে আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করে আইনী লড়াইয়ে জিতে, সেই ক্ষতিপূরণ সফলভাবে নিয়ে আসতে পারবো। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে এখানে আসলে দুইটা মেসেজ, তারা যদি অদক্ষভাবে এখানে এসে কাজ করে, তাহলে তারা পার পেয়ে যেতে পারবে না। আরেকটি মেসেজ হচ্ছে যে, দুর্নীতি করে কেউ কাজ পেয়ে থাকে বা পায় ওই চুক্তি আসলে বৈধ না। এগুলো ক্রাইম হিসেবে গণ্য করা হবে। এখান থেকে আসলে তারা কোনো লাভ করতে পারবে না।

 

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় আসবে।

 

প্রসঙ্গত-২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি সিলেটের টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে। ধ্বংসলীলায় পরিণত হয় গোটা এলাকা। পুড়ে ছারখার হয় আশপাশের প্রকৃতি। আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন অনেক মানুষ। ৬ মাস পর একই বছরের ২৪ জুন আবারও বিস্ফোরণ ঘটে। তখন সারাদেশের নজর টেংরাটিলার দিকে। কী কারণে ঘটল এমন ঘটনা, তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

 

২০০১ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ছাতক, ফেনী, কামতা গ্যাস ক্ষেত্রের কাজ পেতে রাজনৈতিক মহলে যোগাযোগ শুরু করে নাইকো। সফলও হয় তারা। বিনা দরপত্রে অদক্ষ, অযোগ্য, দুর্নীতিগ্রস্ত কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা। পরবর্তীতে এফবিআই, রয়েল মাউন্টেড পুলিশ ও দুদকের তদন্তে উঠে আসে মোটা অঙ্কের ঘুষ ও অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কাজ পেয়েছিলো নাইকো। কয়েক দেশ ঘুরে কীভাবে ঘুষের টাকা দেশে আসে, আবার ওই টাকার ভাগ কে কে পান; সেসব বিস্তারিত উঠে আসে এফবিআইয়ের তদন্তে। নাইকো দুর্নীতির পুরোটাই আবর্তিত ছিলো তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও হাওয়া ভবনকে ঘিরে।

 

দেশের আদালতে নাইকো দুর্নীতির বিচার যেমন চলছে; তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালেও চলছে শুনানি। চলতি বছরের ১১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানিতে এফবিআই ও কানাডা পুলিশের এক সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দেন। তারা সাক্ষ্যতে বলেছেন, দুর্নীতির মাধ্যমেই চুক্তি করে নাইকো।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন