আল-আকসা মসজিদ মুসলিমদের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রকাশিত: ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২৩

আল-আকসা মসজিদ মুসলিমদের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

অনলাইন ডেস্ক : মক্কা ও মদিনার পর জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদকে ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতি বছর ফিলিস্তিন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মুসলিম আসেন এই মসজিদ প্রাঙ্গণে। মসজিদটি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।

 

গত কয়েক বছর ধরে আল আকসা প্রাঙ্গণে ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

 

কিন্তু এই এলাকাটি এত স্পর্শকাতর কেন? এর জন্য ফিরে তাকাতে হবে এর ইতিহাসের দিকে।

 

আল আকসা চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্থাপনা। যার কোনটি মুসলমানের জন্য, কোনটি ইহুদিদের জন্য আবার কোনটি খ্রিস্টানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর সবগুলো্ স্থাপনার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে তিনটি ধর্মের ইতিহাস।

 

আল আকসা কোথায় অবস্থিত?
১৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে অবস্থিত আল -আকসা প্রাঙ্গণে রয়েছে আল-আকসা মসজিদ, যা কিবলি মসজিদ নামেও পরিচিত। এছাড়াও আছে সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অফ দ্য রক’, যা জেরুসালেমের সবচেয়ে স্বীকৃত একটি ল্যান্ডমার্ক এবং এই দুটিই পবিত্র হিসেবে বিবেচিত।

 

পূর্ব জেরুসালেমের পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত আল-আকসা মুসলিমদের কাছে ‘হারাম আল-শরীফ’ নামে পরিচিত এবং ইহুদিদের কাছে পরিচিত ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে।

 

এখানে ১৫টি গেট ছিল, যেদিক দিয়ে ময়দানে প্রবেশ করতো জেরুজালেমের ওল্ড সিটি থেকে আসা ধর্মানুরাগীরা ।

 

যদিও এই গেটের মাত্র ১০টি এখন ব্যবহৃত হয় এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি সেনা ও পুলিশ।

 

আল-আকসায় প্রথম ছোট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর, পরে ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে এখানে প্রথম বড় আকারে মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

 

দু’দফা ভুমিকম্পে দুবার ধ্বংস হয়ে গেলে তা পরে পুন:নির্মাণ করা হয়। কয়েকবার সংস্কার কাজও করা হয়। জেরুসালেমের ওল্ড সিটির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত আল-আকসার ‘ডোম অফ দ্য রক’ শহর জুড়ে দৃশ্যমান।

 

বাইরের দেয়ালসহ এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গমিটারের এই সীমানায় রয়েছে মসজিদ, নামাজের ঘর, উঠান ও ধর্মীয় বিভিন্ন স্থাপনা।

 

আল আকসা

যুগ যুগ ধরে এই এলাকা ঘিরেই চলছে বিবাদ

আল আকসা অর্থ কী?

আরবি ভাষায়, আল-আকসার দুটি অর্থ রয়েছে: ‘সবচেয়ে দূর’, যা মক্কা থেকে এর দূরত্বকে বোঝায়। ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ‘সর্বোচ্চ’ হিসেবেও মুসলিমদের কাছে এর মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

 

আল আকসা মসজিদটি ‘মসজিদুল আকসা’ বা ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ নামে পরিচিত মুসলিমদের কাছে।

 

মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, নবী মুহাম্মদ মিরাজের রাতে কাবা শরিফ থেকে প্রথমে আল আকসায় এসেছিলেন এবং মিরাজে গমনের আগে এখানে সব নবীদের সঙ্গে নামাজের সময় ইমাম হিসেবে নামাজ আদায় করেন।

 

আল আকসা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এই প্রাঙ্গণের যেমন ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনি জনগণের সংস্কৃতি ও জাতীয়তার প্রতীকও এটি।

 

সোনালী গম্বুজের ‘ডোম অফ দ্য রক’ সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে স্বীকৃত এবং এই স্থানে প্রার্থনা করতে আসতে পারা একটি বড় সুযোগ বলে মনে করেন মুসলিমরা।

 

বর্তমান সীমানাগুলো তৈরি হবার আগের বছরগুলোতে, সেই পুরনো আমলে মুসল্লিরা পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেও সেই সফরে জেরুসালেমকেও অন্তর্ভুক্ত করতেন ।

 

আল-আকসার বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ এখনও হাজার হাজার ধর্মানুরাগীকে আকৃষ্ট করে, যারা প্রতি শুক্রবার জামাতে নামাজের জন্য জড়ো হন।

 

আল-আকসা প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি। মিরাজের রাতে এই মসজিদেই নামাজ আদায় করেছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা:)। মক্কায় হজ ও ওমরা পালনের আগে আল আকসা ছিল মুসলিমদের কাছে প্রধান ধর্মীয় স্থান।

 

ইহুদিরা বিশ্বাস করে, ‘টেম্পল মাউন্টেই’ তাদের পয়গম্বর আব্রাহাম তার পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য ইহুদিদের পয়গম্বর আব্রাহাম ইসলাম ধর্মে নবী ইব্রাহিম হিসেবে পরিচিত।

 

ইহুদিরা বিশ্বাস করে, এখানেই ছিল ইহুদিদের প্রথম ও দ্বিতীয় পবিত্র উপাসনালয়। তারা মনে করে, তিন হাজার বছর আগে রাজা সোলেমান এখানে প্রথম উপাসনালয় নির্মাণ করেছিল। যেটি ধ্বংস করেছিল ব্যাবিলনীয়রা।

 

আর দ্বিতীয় উপাসনালয়টি ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান বাহিনী ধ্বংস করে দেয়। এখানে একটি খ্রিস্টান ব্যাসিলিকাও ছিল যা একই সাথে ধ্বংস হয়।

 

সেই উপাসনালয়ের শুধুমাত্র পশ্চিম দিকের দেয়ালটিই এখনো টিকে আছে এবং এটিই ইহুদিদের প্রার্থনার স্থান।

 

ইহুদিদের মতে, আল আকসায় ‘ফাউন্ডেশন স্টোন’ বা বিশ্বের ‘ভিত্তি পাথর’ এর অবস্থান। যেখান থেকে বিশ্বের সৃষ্টি শুরু হয়েছিল বলে তারা বিশ্বাস করে।

 

অন্যদিকে খ্রিস্টানরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এটাই সেই জায়গা যেখানে যীশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন আর এখানকার গুহাতেই তার দেহ রাখা হয়েছিল।

 

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে জেরুজালেম ও পশ্চিমতীর দখল করে নেবার আগে এটি নিয়ন্ত্রণ করতো জর্ডান। এখন পূর্ব জেরুজালেম ইসরায়েল অধিকৃত হলেও আল-আকসা বা টেম্পল মাউন্ট এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে জর্ডান-ফিলিস্তিনের একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান।

 

আল আকসা