জামায়াত নেতা জয়নালের এবি পার্টি কানেকশন ও পালাবদলের রাজনীতি

প্রকাশিত: ৪:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ১, ২০২৩

জামায়াত নেতা জয়নালের এবি পার্টি কানেকশন ও পালাবদলের রাজনীতি

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নালের এবি পার্টির সাথে কানেকশনের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি এবি পার্টির অন্যতম উদ্যোক্তা ও সিলেট বিভাগীয় নেতা।তাঁর বাসভবন ও আবাসিক প্রকল্পের কার্যালয় ব্যবহার করে সিলেটে এবিপার্টির কার্যক্রম শুরু হয়।অনুসন্ধানে এমন তথ্যই বেরিয়ে আসে। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, জামায়াতে জয়নাল আবেদীন ছিলেন কোণঠাসা। দু’বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এখানে দলের কোন ভূমিকা নেই বলে খোদ জয়নাল-ই অনেক জায়গায় অভিমত ব্যক্ত করেন।জামায়াতের মাঝে জয়নাল এক রহস্যময় পুরুষ। ২০০৮ সালে সিলেটের স্থানীয় একটি দৈনিকে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর সাথে জয়নালের যোগসাজশ রয়েছে বলে বিশ্বস্থ সুত্রে জানা যায়। এছাড়া ১৯৯৬ সালে জামায়াতের তৎকালীন জেলা আমীর ডা. শফিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দু:শাসনের কথা উল্লেখ করে দলের উগ্রবাদী একটি গোষ্ঠী কর্তৃক একটি লিফলেট বের করা হয়। এতেও জয়নালের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে এই উগ্রবাদী অর্ধশতাধিক কর্মী জয়নালের ইন্ধনে ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দেয়।ফলে জামায়াতের রাজনীতিতে কোন পদ তিনি সহজে পাননি। ২০০৯ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক ভাবে অর্থের ছড়াছড়ি করে জয়ী হন জয়নাল। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে আবারো নির্বাচিত হন। এরপরে ও দলীয় কোন পদ বাগাতে পারেননি।

 

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর জামায়াত নতুন দল গঠনের চিন্তাভাবনা শুরু করে। এক পর্যায়ে জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য, মুখপাত্র ও অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবর রহমান মঞ্জু দল থেকে বেরিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের কাজ শুরু করেন। সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও এসে মতবিনিময় সভা করেন মঞ্জু।জয়নাল আবেদীন এর নেতৃত্বে ২০১৮ সালে প্রথম সভা উপশহরে অনুষ্ঠিত হয়।এতে মজিবর রহমান মঞ্জু বক্তব্য দেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, কাউন্সিলর সোহেল আহমদ রিপন,সাবেক শিবির নেতা নুরুল আলম, শাহজাহান আলী, নুরুল ইসলাম বাবুল, শাহরিয়ার আলম সিপার, আব্দুর রব, জালাল আহমদ চেয়ারম্যান, ডা. হোসাইন আহমদ, সালেহ আহমদ, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, নুরুল হক,সাবেক চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রায়হান,এডভোকেট আলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ঐ সভায়।পরবর্তীতে জয়নাল আবেদীন জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি পদ পেলে একটু আত্মগোপনে গিয়ে সিলেটে জন আকাংখার বাংলাদেশ ও এর ধারাবাহিকতায় এবি পার্টির জন্ম দেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, জয়নাল আবেদীনের সাথে জামায়াত ঘরানার সাবেক আরেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা বেসরকারী একটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওতপ্রোতো ভাবে জড়িত। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে মজিবর রহমান মঞ্জু সিলেটে কাজ শুরু করেন। সংশ্লিষ্ট সুত্র উল্লেখ করে জামায়াতের রহস্যময় ঐ তিন নেতা সিলেটের তিনটি আসনে নির্বাচন করবেন।নিবন্ধনহীন জামায়াত তাদের কাছে আতুর ঘর আর জামায়াত ঘোষিত ভিডিপি নিবন্ধনের প্রাথমিক বাছাইয়ে নেই।ফলে রীতিমত শংকায় আছেন তারা।

 

জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০মে সিলেট সফর করেন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষে গঠিত সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক সাবেক শিবির সভাপতি মজিবর রহমান মঞ্জু। সিলেটে এসে তিনি তাঁর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন করেন।তিনি বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়, পেশাজীবিদের সাথে মতবিনিময় ও বিকালে তিনি নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে সুধী জনদের সম্মানে ইফতার ও মতবিনিময় পোগ্রামে বক্তব্য রাখেন । ইফতার মাহফিলে সাধারণ জনগণসহ শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, কবি, সাহিত্যিক সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।ঐদিন সন্ধ্যায় সাউথ সুরমা সিটি লিমিটেডের জনৈক পরিচালকের নগরীর চালিবন্দরস্থ বাসভবনে মজিবর রহমান মঞ্জুর সাথে গোপন বৈঠকে মিলিত জামায়াত নেতা জয়নাল আবেদীন। প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাপী বৈঠকে এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন।লোক চক্ষুর অন্তরালে ঐ বৈঠক করতে আবাসিক প্রকল্পের হিন্দু পরিচালকের বাসভবনকেই বাছাই করেন তারা। সুত্র জানায়, ইফতার পার্টি সহ ঐ সকল কর্মসুচী বাস্তবায়নের লক্ষে ১৫ মে তারাবীহ নামাজ পরে রাত সাড়ে দশটায় জয়নাল আবেদীনের উপশহরস্থ বাসভবনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন,জামায়াত পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিরাবাজার জামেয়ার শিক্ষক ওমর ফারুক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, স্থানীয় কাউন্সিলর সোহেল আহমদ রিপন, সাবেক চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রায়হান সহ আরো লোকজন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মজিবুর রহমান মঞ্জুর এই সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গোপনীয়তা ও জামায়াতের অভ্যন্তরে অস্থিরতা দেখা দেয়। মজিবুর রহমান মঞ্জু যাতে সিলেটে কোন প্রোগ্রাম করতে না পারেন এবং সেখানে যেন কোন উপস্থিতি না হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি করে জামায়াত ।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ সন্ধ্যায় জন আকাংখার বাংলাদেশ এর সিলেটের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। সুত্র জানায়, ঐদিন দুপুরে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক ও জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমানের সাথে রুদ্ধধার বৈঠক করেন জন আকাংখার কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল হুদা অপু। মূলত ঐ নেতার পরিকল্পনা ও নির্দেশে কমিটি গঠন করেন নাজমুল।

 

ওমর ফারুককে সমন্বয়ক ও এডভোকেট নাজমুল ইসলাম কে যুগ্ম সমন্বয়ক করে নগরীর জিন্দাবাজারে এক অভিজাত হোটেলের হল রুম এ কমিটি গঠিত হয়। নব মনোনীত সমন্বয়ক ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে ও সমন্বয় কমিটির সদস্য এম ইউ ফয়সল আহমদ এর সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ এর কেন্দ্রিয় সমন্বয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর ও সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক নাজমুল হুদা অপু,এডভোকেট হাসানুর রহমান, মানবাধিকার কর্মী সৈয়দ আকরাম আল শাহান, ডা. জামিল মোহাম্মদ, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, ডা. আব্দুস সোবহান, মোস্তফা খালেদ, মহি উদ্দিন ফয়সল, কামাল আহমদ, আব্দুল আউয়াল মিসবাহ,শাকের সালেহীন, আমিরুল ইসলাম, ছাত্র ফোরামের সমন্বয়ক রিপন মাহমুদ, যুগ্ম সমন্বয়ক তাসনিম বিন হাকিম প্রমুখ।নভেম্বর মাসে এ কমিটি সিলেটে নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে। এতে মজিবর রহমান মঞ্জু ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট তাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।নাগরিক সংলাপ বাস্তবায়নে আর্থিক সহযোগিতা করেন জামায়াত নেতা জয়নাল ও মাওলানা হাবিবুর রহমান। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২ মে এবি পার্টি গঠিত হলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিলেটের ১১ জন স্থান পায়। এডভোকেট নাজমুল ইসলাম কে আহবায়ক ও এডভোকেট হোসাইনুর রহমান লায়েছ কে সদস্য সচিব করে জেলা কমিটি এবং কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব ও সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী ওমর ফারুককে মহানগর কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। মাস দুই মাসের মধ্যে জেলার সব কয়টি উপজেলা ও মহানগরীর সব কয়টি থানায় এবি পার্টির কমিটি গঠিত হয়। করোনা কালীন সময়কে ব্যবহার করে সেপ্টেম্বর মাসে সাউথ সুরমা সিটি লিমিটেডের কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াত নেতা জয়নাল এবি পার্টির সাথে সম্পৃক্ত নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষিত করে গড়তে দিন ব্যাপী কর্মশালা আয়োজনের নির্দেশনা দেন। লোক চক্ষুর অন্তরালে এ কর্মসুচী বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় একটি রিসোর্ট কে ভেনু হিসাবে বাছাই করেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের বিজনেস পার্টনার নাজমুল হুদা অপু। জুবায়ের চেয়ারম্যান ও অপু ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এদিকে জামাত নেতা জয়নাল গেল রমজানে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন। গোপন সুত্রে জানা যায়, জামায়াত ঘোষিত ভিডিপি নামে রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটি গঠনে তিনি কিং মেকার, ক্রীড়ানক। কিন্তু ভিডিপি নিবন্ধনের প্রাথমিক বাছাইয়ে ঠিকেনি বিধায় জয়নাল ফের এবি পার্টির সাথে যোগাযোগ করছেন।সন্ত্রাস, দুর্নীতি, কালোবাজারি, জমি দখল, সুদ, ঘুষ, প্রতারণা সহ ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে জয়নালের বিরুদ্ধে ।জয়নালের চামচাদের ভয়ে অনেকেই কথা বলে না তার বিরুদ্ধে। তিনি শিবির নেতা শহিদ শোয়েব আহমদ দুলাল এর অভিযুক্ত খুনীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করে ফেরারী আসামীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে এলাকায় অভিযোগ আছে ব্যাপক ।অপরদিকে গেল বছরের বন্যায় জয়নাল সমর্থকরা ব্যাপক আকারে রিলিফ সামগ্রী লুটপাট করেছেন। চালের বস্তা, ঘরের টিন, খাদ্য সামগ্রী আত্মসাৎ করেন জয়নাল বলয়ের লোকজন। এ সকল অভিযোগে স্থানীয় সংগঠনে দ্বিধা বিভক্তি দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে সুত্র জানায়।

 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলা উত্তর জামায়াতের কর্মপরিষদের এক সদস্য বলেন, জয়নালকে নিয়ে আমরা খুব সমস্যায় আছি। উনি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি।কিন্তু স্বতন্ত্র এমপি পদপ্রার্থী ঘোষণা করলেন, দলের নেতৃস্থানীয় কেউ জানে না। এবি পার্টির সাথে জয়নাল আবেদীন এর গভীর সম্পর্ক আছে এটি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, শুনেছি।এর বেশী জানি না।যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের এক নেতা বলেন, এবি পার্টির সাথে কানেকশন আছে বলেই মাওলানা হাবিবুর রহমান কে জামায়াত সংসদ নির্বাচনে নমিনেশন দিচ্ছে না এবার। সিলেট ৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আমীর সেলিম উদ্দিনকে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে।সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়ায় সাবেক এক ছাত্র নেতা লিখেছেন, ” #এবি_পার্টির জন্মের সাথে সিলেটের অনেক সাবেক, বর্তমান নেতা দায়িত্বশীল, জনপ্রতিনিধি, রথি মহারথীরাই জড়িত ছিলেন।যার জলন্ত সাক্ষী আমি নিজে। আর শাস্তি ভোগ করতে হয় দুর্বলের।এ কেমন ইনসাফ??”

 

এই স্টাটাসে অনেক লোকজন কমেন্ট করেছেন।মন্তব্যে কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি হিসেবে জয়নাল আবেদীন কে ইঙ্গিত করেছেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবি পার্টির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, আমাদেরকে এবি পার্টি তে সম্পৃক্ত করেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ও সাইফুল্লাহ আল হোসাইন। আমরা সোনারগাঁ আবাসিক প্রকল্পের অফিসে জন আকাংখা ও এবি পার্টির একাধিক মিটিং করেছি। সভাগুলোতে জয়নাল ভাই ও সাইফুল্লাহ ভাই থাকতেন।মূলত তাদের আহবানেই আমরা এবি পার্টিতে সম্পৃক্ত হয়েছি।

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

সিলেট সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪

সিলেট সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪