মোটরসাইকেল চুরি, সাংবাদিক-পুলিশও চোরের নজরে!

প্রকাশিত: ১:০৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩

মোটরসাইকেল চুরি, সাংবাদিক-পুলিশও চোরের নজরে!

অনলাইন ডেস্ক : সিলেট মহানগরে হঠাৎ মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক পড়েছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে সিলেটে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মহানগর পুলিশের কাছে নেই।

 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নানা রকমের তালা লাগিয়েও চোরদের হাত থেকে মোটরসাইকেল রক্ষা করা যাচ্ছে না। এক মোচড়েই তালা ভেঙে বাইক নিয়ে উধাও হয়ে যায় চোর। এ বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা ও সাধারণ ডায়েরি করলেও চুরি যাওয়া মোটরসাইকেলগুলো উদ্ধার হচ্ছে না, ধরা পড়ছে না চোর।

 

আর পুলিশ বলছে- খোয়া যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করা না গেলেও এ কয়েকদিনে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

তবে এখন পর্যন্ত এ চক্রের চিহ্নিত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

 

জানা যায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে দৈনিক সমকালের সিলেট অফিসের স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আহমদ বাবলুর হিরো গ্লামার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলটি মহানগরের জেলরোডস্থ তাঁর বাসার সামন থেকে চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় পরে তিনি থানায় জিডি করেন।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মিঠু দাস জয়ের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। তাঁর মোটরসাইকেলও ছিলো হিরো গ্লামার ব্র্যান্ডের। চুরির সময় মোটরসাইকেলটি মহানগরের বারুতখানাস্থ সিলমার্ট কমপ্লেক্সে অবস্থিত জেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের নিচে ছিলো।

 

ঘটনার পর সাংবাদিক মিঠু দাস জয় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই দুই সাংবাদিকের মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

 

এছাড়াও কিছুদিন আগে সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন শাহজালাল মাজার পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এক সদস্যের মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। সেটিও উদ্ধার করা যায়নি।

 

গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মহানগরের সুবিধাবাজারের একটি বাসায় গ্রিল কেটে বারান্দা থেকে এক কলেজ শিক্ষকের মোটরসাইকেল নিয়ে যায় চোরেরা। সেটিও এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি।

 

গত বছরের শেষদিকেও সিলেটে চুরি হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল। ৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলস্থ নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেইটের সামনে থেকে সদর উপজেলার পিরেরচক গ্রামের সরফ মিয়ার ছেলে শাহিন আহমদের (৩৫) মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। ওইদিন তিনি নর্থ ইস্ট হাসপাতালে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যান। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেইটের সামনে তার হিরো কোম্পানির মোটরসাইকেলটি রেখে ভিতরে গেলে পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আর মোটরসাইকেলটি পাননি। এখনও তার মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

 

ভুক্তভোগিদের বক্তব্য- মোটরসাইকেল ‍চুরির সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে চুরি থামবে না। জিডির পর চুরির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। এরপর আর খোঁজ থাকে না। পরে নিজ উদ্যোগে নিজের চুরি যাওয়া মোটরসাইকেলের সন্ধান করতে করতে এক সময় থেমে যেতে হয়।

 

জানা যায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সম্ভুপুর রেললাইন সংলগ্ন বস্তি থেকে মোটরসাইকেল চোর চক্রের এক সদস্যকে আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৯। তার নাম রিপন মিয়া (৩০)। র‍্যাবের দাবি ছিলো, রিপন এই সংঘবদ্ধ চোর চক্রের মূল হোতা। তার নেটওয়ার্ক সিলেটসহ দেশজুড়ে।

 

র‍্যাব ওই সময় জানিয়েছিলো, রিপন কৌশলে ১ মিনিটেই যে কোনো মোটরসাইকেল আনলক করতে পারেন। মোটরসাইকেল চুরির অভিজ্ঞতা তার দীর্ঘদিনের। মোটরসাইকেল চুরির পর সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা সহযোগিদের মাধ্যমে বিক্রি করতেন তিনি। থাকতেন আত্মগোপনে।

 

এছাড়া সিলেটে মোটরসাইকেল চুরি করতে একটি বিশেষ চাবি ব্যবহার করে আসছে আন্তজেলা চোর চক্রের সদস্যরা। সেই চাবিকে সাংকেতিক ভাষায় ‘সিম’ বলে তারা। গত বছরের মার্চ মাসে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধারের সময় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস বলেন- এ বিষয়ক খুব বেশি তথ্য আমাদের কাছে নেই।

 

তিনি বলেন- সিলেটে সম্প্রতি চুরি হওয়া মোটরসাইকেলগুলোর মধ্য থেকে শাহপরাণ এলাকা থেকে চুরি হওয়া একটি বাইক কিছুদিন আগে চোরেরা রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়। আর কোনো বাইক উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে চুরি ঠেকাতে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ। গত ক’দিনে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। আটককৃতরা ছিনতাই কাজের সঙ্গেও জড়িত। তাদেরকে পরবর্তীতে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

 

সুদীপ দাস আরও বলেন- সিলেট মহানগরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশের আরও লোকবল প্রয়োজন। কিন্তু তা নেই। তাই চোরদের তৎপরতাও সিলেটে একটু বেশি। তবে ঘটনার পর আমাদের দ্বারস্থ হলে ভুক্তভোগিকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- চোরেরা সিলেট থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে অল্প সময়ের মধ্যেই শহর বা জেলার বাইরে নিয়ে যায় এবং গাড়ির রং, ডিজাইন বা অনেক যন্ত্রাংশ বদলে ফেলে। তাই অনেক সময় মোটরসাইকেল উদ্ধারে পুলিশকে বেগ পেতে হয়।

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন