প্রকাশিত: ১২:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২৩
অনলাইন ডেস্ক : ফারহানা হক মিলি। ফেসবুকে পরিচিত এক মুখ। বাড়ি জগন্নাথপুরে হলেও পড়ালেখার সুবাদে কিশোর বয়স থেকেই সিলেট নগরে বসবাস করছেন। সুহেলী ও মিলি দুই বোন এক সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন। বিয়ে হয়েছে দুই জনেরই। বসবাস করেন এক বাসাতেই। গতকাল ছোট বোন মিলির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হলেও মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। এ কারণে লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ মিলির স্বামী শ্রাবণ আলম ও সুহেলীর স্বামী রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। জগন্নাথপুর শহরের চিক্কা এলাকায় বাড়ি মিলির।
তার পিতার নাম সিরাজুল ইসলাম। দুই ভাই সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। বিয়ের আগে থেকেই সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত। প্রায় ৬ বছর আগে দিরাই উপজেলার কালিয়ারখাপন গ্রামের আসকার আলীর ছেলে শ্রাবণ আলমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়।
এরপর থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। আলম সিলেট নগরীর তালতলা এলাকায় বসবাস করতো। সে মির্জাজাঙ্গাল এলাকার ছাত্রলীগের কর্মী। প্রায় ৪ বছর আগে ভালোবেসে মিলি বিয়ে করেন আলমকে। পরিবারের ছোটো বোন হওয়ার কারণে মিলিকে সঙ্গে নিয়ে এক ফ্ল্যাটেই বসবাস করতেন বড় বোন সুহেলী। নগরীর তেলীহাওর এলাকার সিলভ্যালী টাওয়ারের চতুর্থ তলা এ-১ নম্বর ফ্ল্যাটে তারা ভাড়া থাকতেন।
গতকাল সকালে বড় বোন সুহেলী দেখতে পান মিলির ঘরের দরোজা ভেতর থেকে আটকানো। মিলির স্বামী আলম অন্য একটি রুমে। এতে তার সন্দেহ হয়। তিনি প্রথমে ডাকাডাকি করেন। এতে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ মেলেনি। পরে দরোজা ভেঙে দেখেন ভেতরে খাটের উপর ঝুলে আছে মিলির লাশ।
গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় লাশ দেখে তিনি চিৎকার দেন। পরে আশপাশের লোকজন দৌড়ে সেখানে যান। কোতোয়ালি থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিলির লাশ খাটের উপরে হাঁটু পর্যন্ত পড়েছিল। এর থেকে পুলিশসহ উপস্থিত লোকজনের ধারণা হয় মিলি আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এজন্য পুলিশ মিলির স্বামী শ্রাবণ আলম ও সুহেলীর স্বামী রিপনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। সুহেলী জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তার স্বামী রিপন বাসাতে ছিলেন না।
তিনি গত বৃহস্পতিবার থেকে নগরীর শিবগঞ্জে তার বাসায় রয়েছেন। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি আসেন। জানান, সকালে তিনি তার রুমেই ছিলেন। দুপুর হয়ে গেলেও মিলি দরোজা না খোলায় তিনি ডাকাডাকি করেন। পরে দরোজা ভেঙে ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। তিনি দাবি করেন, মিলিকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। টাকা না পেলে প্রায়ই আলম স্ত্রী মিলিকে মারধর করতো। এমনকি রুমের ভেতরে দরোজা বন্ধ করেও মারধর করতো।
তিনি প্রায় সময় নিজে এসে তাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সমাধান করে দিতেন। কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) আবুল খায়ের জানিয়েছেন, মিলির স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে তেমন তথ্য মেলেনি। তবে, পরিবার মামলা দিলে পুলিশ বিষয়টির তদন্ত করবে। মিলির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মিলির পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রায় ৪ বছর আগে মিলি ও আলমের বিয়ে হয়। ভালোবেসেই তারা বিয়ে করে। এরপর মিলি ও সুহেলী এক ফ্ল্যাটেই বসবাস করতেন।
মিলির স্বামী আলম বিভিন্ন ব্যবসায় পার্টনার রয়েছে বলে তারা জানেন। পাশাপাশি অনলাইনে সে জুয়া খেলে। দিরাইয়ে বাড়ি বিক্রি করে এনে জুয়া খেলায় টাকা উড়িয়েছে। মিলির কাছ থেকেও প্রায় সময় টাকা নিয়েছে। ফেরত দেবে বললেও ফেরত দেয়নি। কয়েকবার মিলির স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে জুয়া খেলার চেষ্টা চালায়।
এতে বাধা দেয় মিলি। টাকা না পেলে আলম প্রায় সময় মিলিকে মারধর করতো। এ নিয়ে প্রতি মাসেই দু’একবার তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। বড় বোনসহ পরিবারের সদস্যরা এসে সেই ঝগড়া মিটমাট করতো। আবার তারা একসঙ্গেই থাকতো। কয়েক মাস আগে মিলি ব্যাংক থেকে ঋণের ৬ লাখ টাকা তুলে আলমকে দেয়।
কিন্তু আলম ওই টাকা ফেরত দিচ্ছিল না। অন্যদিকে, এ টাকার জন্য ব্যাংক থেকে চাপ দেয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে মিলি ও আলমের মধ্যে নতুন করে ঝগড়া শুরু হয়। এই ঝগড়ার জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। মিলির বড় ভাই আমিনুল ইসলাম শিপন জানিয়েছেন, ‘আমাদের পরিবারের সবার আদরের বোন মিলি। তাকে প্রায়ই টাকার জন্য নির্যাতন করা হতো। মিলির সুখের কথা চিন্তা করে আমরা সব নীরবে সহ্য করে যাচ্ছিলাম।’ তিনি জানান, ‘ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় মনে হচ্ছে এটা আত্মহত্যা না।
সিলেট কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবুল কাহের জানান, মিলির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার বড় বোন রোমানা হক সোহেলী বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি মিলির স্বামী নূর আলমকে শনিবার লাশ উদ্ধারের দিনই আটক করা হয়েছিল। রবিবার ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোর্পদ করা হয়। বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest