শীতের মৌসুমে ঐতিহ্য শীতের পিঠা

প্রকাশিত: ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২

শীতের মৌসুমে ঐতিহ্য শীতের পিঠা

মো: আবু বক্কর : পিঠা শুধু লোকজ খাদ্য নয়, এটা বাংলা ও বাঙালির লোকজ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পারিবারিক ও সমাজ জীবন থেকে পিঠা তৈরির প্রচলন হ্রাস পাচ্ছে। তবে এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এক শ্রেণির মৌসুমী ব্যবসায়ী।

 

শীতকালীন পিঠার দোকানগুলোতে এখন জমজমাট বেচা বিক্রি। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হওয়া বিকি-কিনি চলে গভীর রাত পর্যন্ত। আর অধিকাংশ দোকানগুলো পরিচালনা করছেন পুরুষ ও নারীরা। ফলে তাদের বাড়তি আয়েরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

 

শীতের মৌসুম মানেই নিত্যনতুন বাড়তি খাওয়া-দাওয়া। আর তা বাড়িতে হোক বা বাইরে, যেখানেই হোক না কেনো, শীতের খাদ্য তালিকায় সিলেটের মানুষের পাতে পিঠা থাকবেই। তাই শীত আসলেই সিলেট শহরে ফুটপাতে বা রাস্তার ধারে পড়ে পিঠা কেনা-বেচার দুম।

 

এখন আর বাড়ি-বাড়ি নয়, এখন প্রতিদিন শহর ও শহরতলীতে শীতে বৈকালিক পিঠার দোকানে পথচারীদের ভীড় দেখা যায়। পথের পাশে তৈরি হচ্ছে ছিট পিঠা, ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, পাটি সাপ্টা পিঠা। পথচারীরা গরম পিঠার স্বাদ নিয়ে আনন্দ উপভোগ করছে তৃপ্তিসহকারে। হরেক রকম পিঠা নিজেরা খেয়ে আবার কেউ কেউ বাসা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে পরিবারের সদস্যদের জন্য।

 

শীত পড়তেই সিলেটে দেখা মেলে নানান ধাঁচের, নানান স্বাদের পিঠা। আর শীতের মৌসুম শুরু হতেই সিলেট মহানগরের বিভিন্ন সড়কের পাশে শুরু হয় ভাপা পিঠার বেচাকেনা। পিঠাপ্রেমীরা এই পিঠার স্বাদ নিতে বিকেল থেকেই এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভিড় জমান ক্রেতারা। ভাপা পিঠার টানে অনেকে আসেন শহরতলি থেকেও।

 

মহানগরের জিন্দাবাজার এলাকার কয়েকজন ভাপা পিঠা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মূলতঃ বছরের অন্যান্য সময়ে বিন্ন ধরণের কাজ কর্ম করে থাকেন। কিন্তু শীত পড়তেই শুরু করেন পিঠা বিক্রি। বড় কোনো দোকান নয়, মহানগরের বিভিন্ন রাস্তার ধারে বা ফুটপাতে ঠেলাগাড়িতে ভ্রাম্যমাণ দোকানে পাওয়া যায় ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা।

 

আগে দাম ছিলো ৫টাকা। বর্তমানে ১০ থেকে ১৫টাকায় প্রতিটি ভাপা পিঠা বিক্রি হয়। বিক্রেতারা পিঠাতে চালের গুড়োর সঙ্গে নারিকেল এবং গুড় দিয়ে থাকেন। বর্তমানে সিলেটে এই পিঠার ব্যাপক বিক্রি। বিকেল গড়াতেই শুরু হয় বিক্রি, চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। শীত যত বাড়বে, এই পিঠার চাহিদাও ততই বাড়বে বলে বক্তব্য বিক্রেতাদের।

 

বিক্রি ভালো হওয়ায় পিঠাওয়ালা ও পিঠাওয়ালীরাও খুশি। প্রতি বছর শীতের আগমনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক শ্রেণির নারী-পুরুষ পিঠা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় পথের পাশে বসে পড়েন। কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুণ মাস পর্যন্ত চলে পিঠার ব্যবসা। এতে আয় রোজগারও ভালো হয়, সংসারও ভালো চলে। পুরুষ ও নারীরা পিঠা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ নারীরা পিঠা তৈরিতে পারদর্শী। পিঠাওয়ালী বা নারীদের দোকানে ক্রেতাদের ভীড় ও বিক্রি বেশি। হরেক রকম ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠার মজাটাই আলাদা। শীতের পিঠা বাঙালিদের জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার।

 

শীত উৎসবের আমেজ বোঝা যায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসা পিঠা বিক্রির বাহারি পসরা দোকান দেখেই। অলিতে গলিতে বসেছে পিঠা দোকান। চিতই সাথে হরেক রকমের ভর্তার সমারোহ এ সকল দোকানে। ঘরের গন্ডি ছাড়িয়ে পিঠা বিক্রি করে অনেক নারী-পুরুষ করছেন বাড়তি আয়। সময়ের বিবর্তনে খেজুরের রস হারিয়ে যেতে বসলেও হারায়নি হরেক রকম শীতের পিঠার স্বাদ। শীতের শুরু থেকেই রাস্তার পাশে মোড়ে মোড়ে, মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠেছে হরেক রকম পিঠা তৈরির অস্থায়ী দোকান। দোকানে প্রতিদিন বিকেল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত চলে শীতের পিঠা বিক্রি।

 

দোকানগুলোতে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি দেখেই বোঝা যায় শীতের পিঠার কদর। দোকানি চুলা থেকে একেকটি পিঠা নামানোর সাথে সাথেই আগে ছোঁ মেরে হাতে তুলে নেওয়ার নিশ্চুপ প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায় ক্রেতাদের মধ্যে। গুড়, নারকেল ও চালের গুড়া দিয়ে তৈরি ভাঁপা পিঠা, পুলি পিঠাসহ বাহারী সব পিঠা তৈরি হয় এ সকল দোকানে।

 

চিতই পিঠার সাথে চিংড়ি, সুটকি, ধনে পাতাসহ নানা রকমের সুস্বাদু ভর্তা জিহ্বায় জল আনছে ভোক্তাদের। অধিকাংশ পিঠা বিক্রেতারাই সারাদিন অন্য কাজ শেষে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে বাড়তি আয় করে সংসারের বাড়তি চাহিদা পূরন করছে। পিঠা সহজেই হাতের কাছে পাওয়ায় সন্তুষ্ট ক্রেতারা আর বিক্রেতারা খুশি ভাল দাম পাওয়ায়।

 

ক্রেতা কামরুল বলেন, ‘বাড়িতে সব সময় পিঠা তৈরি করা সম্ভব হয় না। দোকানগুলোতে খুব সুন্দর ও সুস্বাদু পিঠা তৈরি করে। তাই প্রায় দোকান থেকে পিঠা খাই।” ক্রেতা মরিয়ম বলেন, ‘শীত মৌসুম এলে আমি প্রতিদিন সন্ধায় বাজারের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পিঠা খাই ও পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়ে যাই।” পিঠা বিক্রেতা রহিম বলেন, ‘আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্য কাজ করি। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে দৈনিক ৫শ থেকে ১এক হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।”

 

সিলেট নগরীর পিঠা বিত্রেতা রহিম বলেন,“পিঠা বিক্রি করে আমাব সংসার চলে। বর্তমানে বাজারে চিনি ও গুড়ের দাম বেশি তাই পিঠায় লাভ কম। সংসার চালাতে কষ্ট হয়।”

 

সিলেট সর্বত্র ১৫০ শতাধিক ভ্রাম্যমান পিঠার দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে ২/৩ জন লোক পিঠা তৈরি ও বিক্রির কাজে ন্যাস্ত থাকে। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে সাত শত থেকে পনের‘শ বেকার যুবক-যুবতির। পিঠা তৈরি ও বিক্রি করে এর আয়-রোজগারে খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছে এক সহ¯্রাধিক মানুষ। সিলেট অঞ্চলে এটা মৌসুমী ব্যবসা। সারা বছর ভ্রাম্যমান পিঠার দোকান চলে না। তখন এ সব মানুষ অন্য কোন ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

 

একটা সময় ছিল যখন শীত এলেই গ্রাম-বাংলার বউ-ঝিরা পিঠাপুলি তৈরির তাগিদ অনুভব করতেন। গরিব-ধনী নির্বিশেষে সকল পরিবারের বউ-ঝিরা পিঠে-পুলির তৈরির প্রতি মনোনিবেশ করতেন। পরিবারের ছেলেমেয়েদের পিঠা খাওয়াতে তারা ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। পিঠা না খেলে শীতের মজাটাই যেন বিফল। বর্তমানে ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। তবে আজকাল মেলায় দেখা যায় রকমারি পিঠার সমাহার। অভিজাত দোকানে বার মাস পিঠা পাওয়া যায়।

গুণ গত মান যার ভাল তার দাম একটু বেশি সিলেটের সেরা বাগানের উন্নত চা প্রতি কেজি চা দাম ৪৫০ টাকা হোম ডেলি বারি দেয়া হয়

tree

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন