প্রকাশিত: ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২৫
বিনোদন ডেস্ক : জুলাই আন্দোলন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই আন্দোলন আমাকে আশা দিয়েছিল। দেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছিল। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। তবু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা এক হয়েছিলাম এমন একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, যে রাষ্ট্র নিজের জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র তাক করেছিল তার জনগণের দিকে। কোনো কারণ ছাড়া মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল। নির্দোষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিল। রিয়া মণির মতো ছোট ছোট শিশুরা জীবন দিয়েছিল। কিন্তু তারা বুঝেই উঠতে পারেনি কেন জীবন দিচ্ছে! আন্দোলনের সময় আমরা এক হয়েছিলাম আমাদের অধিকার আর দেশকে ভালোবেসে। সেটা ছিল স্মরণীয় মুহূর্ত। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম ভালো কিছুর। আমি সেই আশা সব সময় বুকে ধারণ করেই চলব।
৫ আগস্ট স্মরণীয় এবং লালিত একটি দিন। এটি ছিল দুই ভাগের একটি দিন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা ভয়ে আচ্ছন্ন ছিলাম, অসহ্য ভয়। কিন্তু তার পরে সবকিছু বদলে গেল। বাতাস বদলে গেল। এরপর যা হলো তা হলো বিজয়ের স্বাদ, প্রতিরোধের ফল। এমন একটি অনুভূতি, যা আমি কখনো ভুলব না।
প্রথম পর্ব: ভয়
সেদিন সকালে আমি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় ঘুম থেকে উঠলাম। আমার কি রাস্তায় বেরোনো উচিত নয়? আমার হৃদয় ফিসফিস করে বলতে থাকে- তাদের সঙ্গে যোগ দাও, আপনার লোকদের সঙ্গে থাকো। কিন্তু আমার মন ভয়ে আচ্ছন্ন ছিল। সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমরা শুনেছিলাম যে একটি গণহত্যা ঘটতে পারে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী যদি আমাদের ওপর অস্ত্র তোলে, তাহলে তা ভয়াবহ হবে।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি বাড়িতে থাকতে পারছিলাম না। আমাকে যেতে হয়েছিল। কিন্তু আমার পরিবার ভেঙে পড়েছিল। আমার মা ও মেয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁদছিল। আমার বাবা আমাকে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছিলেন।
তিনি বললেন, ‘তুমি এত দিন গেছ, আমি তোমাকে থামাইনি। কিন্তু আজ একটা বিপর্যয় আসবে। দয়া করে যেও না। তোমার একটা মেয়ে আছে, আর তুমি ছাড়া তার আর কেউ নেই।’
আমার ভাইয়েরা ক্রমাগত মেসেজ করছিল, আমাকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছিল। কিন্তু আমি দৃঢ় ছিলাম। আমি তাদের বলেছিলাম, ‘রাস্তায় এত লোক আছে, কারণ আমি তাদের উৎসাহিত করেছি। যদি আমি আজ না যাই, তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। আমি তা করতে পারব না। আমার কিছু হলে দয়া করে আমার মেয়ের যত্ন নিও।’
আমি বোরকা ও হিজাব পরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম, যাতে কেউ আমাকে চিনতে না পারে অথবা আমাকে গুলি করতে না পারে। আমার বাবার কণ্ঠস্বর তখনো আমার কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল: ‘আজ যদি সেনাবাহিনী সরকারের পক্ষ নেয়, তাহলে গণহত্যা হবে।’
তবু আমি বললাম, ‘আব্বু, আমাকে যেতে হবে। আমাকে যেতে হবে।’ আমি আমার কালো পোশাকের নিচে পতাকায় ভাঁজ করা স্টেইনলেস স্টিলের লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর আমার সহকর্মী সেতু ডাকলো ‘আমরা মিরপুর ডিওএইচএসের গেট ভাঙছি। আমরা আসছি!’
কালশি রোডে তাদের সঙ্গে আমার দেখা হলো। হাজার হাজার মানুষ এরই মধ্যে সেখানে ছিলো উত্তেজিত, আশাবাদী, স্বপ্ন দেখছিল। স্লোগানে আকাশ ভরে গেল। আমরা এগিয়ে গেলাম কালশি ফ্লাইওভারের দিকে।
দ্বিতীয় পর্ব: জাদুর মুহূর্ত
সেদিন আমি যা দেখেছিলাম, তা সারা জীবন আমার সঙ্গে বহন করে যাব। রাস্তায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ছিল, সবাই গণভবনের দিকে যাচ্ছিল। আমরা একসঙ্গে হেঁটেছিলাম, একসঙ্গে স্লোগান দিয়েছিলাম। আমি যখন নৌ সদর দপ্তরের কাছে পৌঁছালাম, তখন বেলা প্রায় দেড়টা। হঠাৎ সারা আপু ডাকলেন: ‘যেখানে আছো সেখানেই থাকো। সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন। এটা কেবল চরম পরিস্থিতিতেই ঘটে। হয়তো শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন!’
গুজব দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন!’ আমার চারপাশের লোকেরা হাসছিল, কাঁদছিল, নাচছিল, স্লোগান দিচ্ছিল। অবাধে অশ্রু ঝরছিল। এটা ছিল বিদ্যুতায়িত। এটা ছিল অপ্রতিরোধ্য। এটা অবিস্মরণীয় ছিল।’
যারা বলে, জুলাই বিপ্লব ভুল ছিলো- সত্যি বলতে, তাদের জন্য আমার দুঃখ হয়। ওই সময় ওই বিপ্লব একদম প্রয়োজনীয় ছিল। মানুষ যে পরিমাণ অবিচার, অন্যায় এবং দমন-পীড়নের মুখোমুখি হচ্ছিল, তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সরকার তো এক দিনে ফ্যাসিস্ট হয়ে যায়নি, ধাপে ধাপে মানুষের অধিকার আর কণ্ঠস্বর কেড়ে নিতে নিতে তারা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। তখন আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না।
৫ আগস্ট যারা রাস্তায় ছিল না, তারা কোনো দিনও বুঝতে পারবে না সেই আনন্দ কতটা বিশুদ্ধ ছিল। যখন সে ভীতুর মতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সেই আনন্দ ছিল বাস্তব এবং আমি তা নিজের প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে অনুভব করেছিলাম। ওই রকম স্বাধীনতা আর শক্তি রাস্তায় দাঁড়িয়ে একসঙ্গে অনুভব করার অভিজ্ঞতা জীবনে একবারই আসে। হ্যাঁ, বিপ্লবের পরে অনেক কিছু ঘটেছে এবং সবকিছু সুখকর হয়নি। কিন্তু এক জিনিস স্পষ্ট: জুলাই বিপ্লব সঠিক সময়ে, সঠিক কাজ ছিল।




অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
প্রধান উপদেষ্টা : আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাপ্তান হোসেন
পরিচালক, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠাতা, আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাপ্তান হোসেন সমাজ কল্যাণ ট্রাস্ট।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
Design and developed by Web Nest