আরও সক্রিয় হচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১:৫১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২২

আরও সক্রিয় হচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজপথের প্রধান বিরোধীপক্ষ বিএনপি রয়েছে সক্রিয় অবস্থানে। বিপরীতে নিজেদের মধ্যে আছে রেষারেষি। দলীয় নানা কোন্দলের তথ্য ওঠে এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও। ফলে সিলেটে আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে শঙ্কা আছে কেন্দ্রে। এই পরিস্থিতিতে দলীয় বিভেদ দূর করে সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করতে কেন্দ্র থেকে সিলেট আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। ডাকা হয়েছে বর্ধিত সভাও।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে স¤প্রতি সারা দেশে দলীয় অবস্থানের তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তাতে বেশ কয়েকটি জেলায় দলের কোন্দল ও স্থবিরতার নানা তথ্য ওঠে এসেছে। এই তালিকায় আছে সিলেটও। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সাংগঠনিক শাখা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে।

 

এদিকে, সিলেট আওয়ামী লীগের কোন্দল আর অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকছে না, তা চলে আসছে প্রকাশ্যে। গত ১০ অক্টোবর রাতে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১৮নং ওয়ার্ডের সম্মেলন ছিল। সেখানে ভোট ছাড়াই নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ওয়ার্ড সেক্রেটারি করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। একপর্য়ায়ে নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে সম্মেলনস্থলে ভাঙচুর শুরু করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রæত সেখান থেকে চলে য়ান জাকির। পরে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ওই ওয়ার্ডে কমিটি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন।

 

গত ২২ অক্টোবর সিলেট নগর আওয়ামী লীগের ৬নং ওয়ার্ডের সর্বশেষ কমিটির সহসভাপতি সৈয়দ আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অভিয়োগ তুলেন। ‘নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে’ জাকির ‘পকেট কমিটি’ গঠন করছেন বলে অভিযোগ করেন জুয়েল।

 

ক্ষোভের অনল জ্বলছে জেলা আওয়ামী লীগেও। সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনতন্ত্র না মেনে করা হয়েছে বলে অভিয়োগ ওঠেছে। গত মঙ্গলবার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সংবাদ সম্মেলনে এ অভিয়োগ করেন। সদর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমির উদ্দিন বলেন, ‘বিতর্কিত ব্যক্তিকে দিয়ে রাতের আঁধারে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। য়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, সেই হিরণ মিয়া বিএনপির রাজনীতি করতেন। তিনি য়ুক্তরাজ্যে বিএনপির পদবিদারী নেতা ছিলেন।’ ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি জানান তারা।

 

এদিকে, সদরে কমিটি নিয়ে গতকাল শনিবার উত্তেজনা দেখা দেয়। কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল বের করা হয় একই সময়ে। পরে তেমুখী পয়েন্ট এলাকায় উভয়পক্ষ মুখোমুখি হয়। তবে পুলিশ মধ্যখানে ব্যারিকেড দিয়ে উভয়পক্ষকে সরিয়ে দেয়।

 

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনের আগে দলের এসব কোন্দল নিয়ে দায়িত্বশীল নেতারা চিন্তিত। কেন্দ্র থেকেও পরিস্থিতি পর্য়বেক্ষণ করা হচ্ছে। স¤প্রতি সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের কোন্দল নিরসন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এরই প্রেক্ষিতে উভয় শাখার বর্ধিত সভা আহŸান করা হয়েছে। আগামী ৬ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের এবং ৭ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। বর্ধিত সভার আগে গত মঙ্গলবার কার্য়নির্বাহী কমিটির সভা করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। বর্ধিত সভার পর বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথেও সক্রিয় হওয়ার কথা বলছেন দায়িত্বশীল নেতারা।

 

জানতে চাইলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিয়োদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বর্ধিত সভা করবো। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই সভায় কথা বলা হবে। য়েসব সমস্যা আছে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে একই দলে মান-অভিমান থাকতে পারে। তবে রাজনীতি য়েহেতু সম্মানের জায়গায় আছে, সেহেতু তা বজায় রেখে চলতে হবে।’

 

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘৬ তারিখে মহানগর ও ৭ তারিখে জেলার বর্ধিত সভা রয়েছে। এর আগে আগামী মঙ্গলবার জেলার কার্যনির্বাহী কমিটির সভা করবো আমরা।’ তিনি বলেন, ‘বর্ধিত সভায় সবার বক্তব্য শুনবো আমরা। কারো যদি কোনো সাজেশন থাকে, তারা তা প্রদান করবেন।’