বানের পানিতে ডুবছে সিলেট, বিপর্যস্ত লাখ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ৯:১৯ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২৪

বানের পানিতে ডুবছে সিলেট, বিপর্যস্ত লাখ লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বানের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সিলেট। এরই মধ্যে অন্তত ৮ উপজেলায় মারাত্মক বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারি বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। মঙ্গলবার বিকাল থেকে এসব উপজেলায় হু হু করে বাড়তে শুরু করে পানি। এতে উপজেলাগুলোর অন্তত ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। বুধবার রাত নামার আগেই অনেকের ঘর গলা পর্যন্ত পানিতে ঢুকে যায়। বৃহস্পতিবার পানি বেড়ে অনেকের ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে গবাদি পশু ও পুকুর-খামারের মাছ। এ অবস্থায় দিশেহারা ও আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে ছুটছেন বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় কানাইঘাটে সুরমা নদী পয়েন্টের পানি বিপদ সীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

 

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুণবার্সন কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বুলবুল বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো জেলায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ উপজেলার মধ্যে গোয়াইনঘাটে ৫৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৮ টি, কানাইঘাটে ১৮টি, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫টি ও জকিগঞ্জে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বানবাসী উঠতে শুরু করেন। এছাড়া বন্যাকবলিত লোকজনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২০০ বস্তা করে মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে।

 বন্যা

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। এ তথ্য জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন। বলেছেন, আমাদের সকল টিমকে সতর্ক রাখা হয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সার্বক্ষণিক তদারকি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্থুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এরই মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে অর্থ সহায়তা। প্রয়োজনে এটি আরও বাড়ানো হবে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী একদিনে ২০২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়াও কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বন্যা

এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটের বিভিন্ন এলাকা। গ্রামীণ সড়ক ডুবে যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে অনেক জায়গায়। বৃহস্পতিবার অনেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যা কবলিত অসহায় মানুষদের বাঁচানোর আকুতি প্রচার হচ্ছে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট-তামাবিল (জাফলং) মহাসড়ক দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জৈন্তাপুর উপজেলার বাংলা বাজার, রংপানি ও বিরাইমারা এলকায় সিলেট তামাবিল মহাসড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আকস্মিক বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, ফায়ারসার্ভিস, আনসার বিডিপি। বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক, রাজনৈতিক দল নেমেছে উদ্ধার কাজে। বৃহস্পতিবার সকালে পানি বন্দি এলাকাগুলো পরিদর্শনে করেন সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা আক্তার সিমুল।

বন্যা

স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মিরা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সুরমা ও লোভা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় সুরমা ডাইক ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম, দিঘীরপাড় পূর্ব, বড়চতুল, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার সমস্ত জনপদ, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। অধিকাংশ বাড়ি-ঘরে হাঁটুপানি থেকে কোমর পানি বিরাজ করছে। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

বৃহস্পতিবার সকালে কানাইঘাট সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকেল ৩টার দিকে তা কমে ১৪৩ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়। সুরমা নদীর পানি ডাইকের উপর দিয়ে ও ভাঙন দিয়ে প্রবেশ করায় গোটা উপজেলা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বুধবার রাত ৯টার পর থেকে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গভীর রাতে ডালাইচর, গৌরিপুর, কুওরঘড়ি, উত্তর লক্ষীপ্রসাদ, দক্ষিণ লক্ষীপ্রসাদ, বোভারহাওর সুরমা ভাইকের বিভিন্ন স্থানসহ কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা ডাইকে বড় ভাঙনসহ নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা ভেঙে পানি দ্রুত বেগে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। গভীর রাতে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে বাড়ি-ঘর থেকে সরিয়ে আনার জন্য মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হয়। অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য।মনিটরিং সেল খুলে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানের জন্য প্রচার করা হয়।

সিলেটে বন্যা জৈন্তাপুর

বুধবার রাত থেকে পানবন্দী অবস্থায় থাকা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির লোকজন নৌকা ও কলাগাছের বেলায় চড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে থাকেন। কয়েক’শ নারী-পুরুষ, শিশু, স্থানীয় স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিয়েছেন। পানি বেড়ে যাওয়ায় কানাইঘাট-দরবস্ত সড়ক, গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইকানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ সড়কের নিচু এলাকা দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সিলেটের সাথে উপজোলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। লোকালয়সহ বিস্তৃর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শত শত মৎস খামার ও সবজি বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক বয়স্ক লোকজন জানিয়েছেন, বিগত দিনে তারা এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখেনি। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে এবারের বন্যা। যেসব এলাকায় বন্যার পানি আগে কখনও প্রবেশ করেনি, সেসব এলাকায়ও এবার বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। অনেকে তাদের গৃহপালিত গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে। কেউ কেউ তাদের গবাদি পশু উচু স্থানে সরিয়ে নিলেও বেশিসংখ্যক পশু পানির মধ্যে রয়েছে। একদিকে ভয়াবহ বন্যা অপরদিকে বৈরি আবহাওয়া ও ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দী এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন।

 

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ডাইক ভেঙে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

এদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়ন, লেঙ্গুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলংয়ে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে। এই উপজেলা ১৩ টি ইউনিয়নে মোট ৫৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবন প্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।

পানিবন্দি

এছাড়া সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলায় নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেলা, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ ও বাওন হাওরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জের বিভন্ন এলাকা। গ্রামীণ সড়ক ডুবে যোগাযোগ ব্যাহত রয়েছে অনেক জায়গায়।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, আমাদের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায় মূলত উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমের হিসেবে সিলেটে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে। এই পানি আরেকটু বৃদ্ধি পাবে তারপর নেমে যাবে। তবে যেহেতু আমাদের দেশে বৃষ্টি হচ্ছে না তাই এখন কিছুটা স্বস্তি আছে। এখন যদি ভারতের মেঘালয় বা আসামে বৃষ্টি হয় তাহলে তো পাহাড়ি ঢল আসবেই। এ জন্য আমাদের বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, আগামী তিন দিন সিলেটে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির আভাস রয়েছে।

গুণ গত মান যার ভাল তার দাম একটু বেশি সিলেটের সেরা বাগানের উন্নত চা প্রতি কেজি চা দাম ৪৫০ টাকা হোম ডেলি বারি দেয়া হয়

tree

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন